• ২৫শে নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১০ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৪ঠা জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সুনামগঞ্জের পাঁচটি আসনে বিএনপির প্রাথমিক মনোনয়ন প্রাপ্ত ও বঞ্চিতদের কেউই মাঠ ছাড়ছেন না ।

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত নভেম্বর ২৫, ২০২৫

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

সুনামগঞ্জের রাজনৈতিক অঙ্গন এখন উত্তপ্ত ও টানটান উত্তেজনায় মোড়ানো। জেলার পাঁচটি সংসদীয় আসনের মধ্যে তিনটিতে প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিএনপি। তবে জোটগত সমীকরণ ও নির্বাচনী কৌশলের হিসাব–নিকাশে এখনো দুই আসনের প্রার্থিতা ঝুলে আছে। দলের ভেতরে এবং জোটের শরিকদের মধ্যে এই দুই আসন ঘিরে সৃষ্টি হয়েছে এক ধরনের উৎকণ্ঠা ও প্রতীক্ষা।

চূড়ান্ত মনোনয়নপ্রাপ্ত তিন প্রার্থী নির্বাচনী এলাকায় ব্যস্ত সময় পার করলেও মাঠ ছাড়ছেন না মনোনয়ন বঞ্চিত নেতারা। প্রতিদিন সভা-সমাবেশ, গণসংযোগ—সবকিছুতেই যেন প্রতিযোগিতা চলছে। দলীয় মনোনয়ন পুনর্বিবেচনার দাবিতে বঞ্চিতদের হৃদয়ের ক্ষোভ ও প্রত্যাশা মিলেমিশে তৈরি হয়েছে এক ভিন্ন মাত্রার রাজনৈতিক আবহ।

দলের নেতা–কর্মীরাও অনিশ্চয়তায়। বিশেষ করে যে দুটি আসনে এখনও প্রার্থী ঘোষণা হয়নি, সেগুলোকে ঘিরে চলছে নানামুখী জল্পনা–কল্পনা। শরিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলামও সুনামগঞ্জের অন্তত একটি আসনে তাদের প্রার্থী চায়—যা না হলে জোটগত সমঝোতা ভেঙে যেতে পারে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছে তারা।

এদিকে, দলের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে গত চারদিন ধরে পর্যবেক্ষক হিসেবে সাংবাদিকদের একটি দল সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জনমত যাচাই করেছেন। রবিবার তাদের ঢাকা ফেরা—এবং সেই সঙ্গে নির্বাচনী পরিবেশের নানা সংকেত পৌঁছে গেছে কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে। এখন পুরো জেলায় অপেক্ষা—কখন ঘোষণা হবে বাকি দুটি আসনের প্রার্থীতা।

৩ নভেম্বর জেলার তিনটি আসনে ঘোষিত প্রার্থীরা হলেন, সুনামগঞ্জ–৫ (ছাতক–দোয়ারা) আসনে দলের কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক ও জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন। সুনামগঞ্জ–৩ (জগন্নাথপুর–শান্তিগঞ্জ) আসনে যুক্তরাজ্য বিএনপির সেক্রেটারি কয়ছর এম আহমেদ। সুনামগঞ্জ–১ (ধর্মপাশা–জামালগঞ্জ–তাহিরপুর–মধ্যনগর) আসনে প্রার্থী হয়েছেন কেন্দ্রীয় কৃষক দলের সহ–সাধারণ সম্পাদক আনিসুল হক। এই তিনজন যেমন উৎসাহ নিয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন, তেমনি বঞ্চিতরাও থেমে নেই। সভা-সমাবেশে তাদের কণ্ঠে শোনা যাচ্ছে ক্ষোভ, বেদনা ও পুনর্বিবেচনার আকুতি।

সুনামগঞ্জ–৫ আসনে মনোনয়ন প্রত্যাশী সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান মিজান চৌধুরী গোবিন্দগঞ্জ পয়েন্টে সমাবেশ করে আবেগঘন কণ্ঠে বলেন—

“২০১৮ সালের নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে জনগণের সমর্থন পেয়েছিলাম। সেই বিজয় ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছিল। নেতা-কর্মীদের পাশে ছিলাম, আছি, থাকবো। প্রার্থীতায় পুনর্বিবেচনার আবেদন জানাচ্ছি দলীয় হাই কমান্ডের কাছে।”

সুনামগঞ্জ–৩ আসনে কয়ছর আহমদের প্রচারণায় নতুন উদ্দীপনা দেখা গেলেও মনোনয়ন বঞ্চিত ব্যারিস্টার আনোয়ার হোসেন ঘোষণা দিয়ে দিয়েছেন—

“আমি নির্বাচন করছিই। মাঠ ছাড়বো না।”

সুনামগঞ্জ–১ আসনেও মনোনয়ন বঞ্চিত কামরুজ্জামান কামরুল এবং মাহবুবুর রহমান প্রতিদিনই গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় সমাবেশের প্রস্তুতিও তাদের।

যে দুই আসনে এখনো অপেক্ষা

সুনামগঞ্জ–২ (দিরাই–শাল্লা) আসনেও দুই সম্ভাব্য প্রার্থী—সাবেক সংসদ সদস্য মিফতাহ্ উদ্দিন চৌধুরী রুমি ও তাহির রায়হান চৌধুরী পাভেল—গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছেন। এদিকে অসুস্থ হয়ে ব্যাংকে চিকিৎসাধীন সাবেক সংসদ সদস্য নাসির উদ্দিন চৌধুরীর পক্ষেও চলছে প্রচারণা। সুনামগঞ্জ–৪ (সদর–বিশ্বম্ভরপুর) আসনে প্রার্থীতা এখনো ঘোষণা না হওয়ায় দলের মধ্যে হতাশা বাড়ছে। তবুও মনোনয়ন প্রত্যাশীরা মাঠ ছাড়ছেন না। দেওয়ান জয়নুল জাকেরীন, অ্যাড. নুরুল ইসলাম নুরুল, আবুল মুনসুর শওকত, ব্যারিস্টার আবিদুর রহমান—সবাইই নিজেদের পক্ষে প্রচারণায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন।

 

জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম জানিয়েছে,“সুনামগঞ্জে আমাদের শক্ত ভিত্তি আছে। অন্তত একটি আসন না দিলে জোটগত সম্পর্ক টিকে থাকা কঠিন।”

 

বিএনপির কেন্দ্রীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক কলিম উদ্দিন আহমদ মিলন বলেন—“তিনটি আসনে দলের সিদ্ধান্ত এসেছে। বাকি দুই আসনেও শিগগিরই প্রার্থী ঘোষণা হবে। মতভেদ থাকতেই পারে, কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাই ধানের শীষের পক্ষে ঐক্যবদ্ধ হবেন।”