দেশের রাজনীতিতে নতুন করে আলোচনায় এসেছে এক অস্বস্তিকর প্রবণতা, তা হলো— প্রজন্মকে কেন্দ্র করে রাজনীতির অপব্যবহার। তরুণদের শক্তি ও আবেগকে দলীয় স্বার্থসিদ্ধির হাতিয়ার বানানো হচ্ছে, যা একদিকে শিক্ষাঙ্গনে সহিংসতা বাড়াচ্ছে, অন্যদিকে ভবিষ্যৎ নেতৃত্বের সম্ভাবনাকেও ক্ষতিগ্রস্ত করছে।
রাজধানী থেকে শুরু করে বিভিন্ন জেলা শহরের বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজগুলোতে প্রায়ই ছাত্র-সংঘর্ষ, দখলদারিত্ব ও ভোগদখলকেন্দ্রিক রাজনীতি চর্চিত হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ—তাদের প্রকৃত শিক্ষা ও ক্যারিয়ার গঠনের পরিবেশ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অনেকে বাধ্য হয়ে রাজনীতির বাইরে চলে যাচ্ছেন, আবার অনেকে জড়িয়ে পড়ছেন দলীয় ক্যাম্পাস দখল ও ক্ষমতার দ্বন্দ্বে।
গ্রামের মাঠেও একই চিত্র। স্থানীয় নির্বাচনে তরুণদের ভোটাধিকার ও মতপ্রকাশকে প্রভাবিত করতে নানা কৌশল নেওয়া হয়। অনেক সময় আর্থিক প্রলোভন, আবার কখনও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে তরুণদের ব্যবহার করা হয় দলীয় সুবিধার জন্য।
তরুণ প্রজন্মকে যদি শুধুই ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে তারা ধীরে ধীরে রাজনীতির প্রতি আস্থা হারাবে। কেননা আমাদের দেশে ছাত্ররাজনীতি ইতিবাচক নেতৃত্ব তৈরির পরিবর্তে ক্যাডার তৈরির কারখানায় পরিণত হয়েছে। তরুণদের এভাবে ব্যবহার করা হলে ভবিষ্যতে নেতৃত্ব শূন্যতা তৈরি হবে।
তরুণদের বিভাজনমূলক রাজনীতিতে ঠেলে দিলে জাতীয় উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে। বরং তাদেরকে কর্মসংস্থান, উদ্ভাবন ও সামাজিক উন্নয়নের কাজে যুক্ত করতে হবে।
এর সম্ভাব্য সমাধান হতে পারে—
- শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে সহিংসতামুক্ত রাজনীতি নিশ্চিত করা।
- দলীয় ক্যাডার তৈরির সংস্কৃতি ভেঙে দিয়ে যোগ্য নেতৃত্ব গড়ে তোলা।
- তরুণদের সামাজিক উদ্যোগ, প্রযুক্তি ও উদ্যোক্তা কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করা।
- গণতান্ত্রিক চর্চা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষা করা।
তরুণ সমাজই একটি জাতির সবচেয়ে বড় সম্পদ। তাদের রাজনীতি যদি শুধুই অপব্যবহার হয়, তবে সেই জাতি এগোতে পারবে না। তাই সময় এসেছে রাজনৈতিক দলগুলোকে নিজেদের স্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে তরুণদের গড়ে তোলার। নইলে প্রজন্মের রাজনীতির এই অপব্যবহার ভবিষ্যৎ বাংলাদেশকে বারবার অন্ধকারে ঠেলে দেবে।
লেখকঃ টিএ সুলেমান
তরুণ লেখক