লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ: সচিবালয়ের ন্যায় মাঠ প্রশাসনে কর্মরত ১৩-১৬ গ্রেডের কর্মচারীদের পদ পদবী ও বেতন গ্রেড উন্নীতকরণের দাবিতে ১৫-৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কর্মবিরতি ও অবস্থান কর্মসূচির আজ প্রথম দিন। বাংলাদেশ কালেক্টরেট সহকারী সমিতির (বাকাসস) এর কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে সারাদেশের ন্যায় এ জেলায়ও জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ের কর্মরত কর্মচারীগণ এই কর্মসূচি পালন করছেন। সকাল ৯টা হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে স্ব স্ব অফিস প্রাঙ্গণে অবস্থান নেয় তারা। বিকাল ৫টা পর্যন্ত কোন ধরনের কাজে অংশ নিচ্ছেন না। উল্লেখ্য যে, আজ পূর্বনির্ধারিত জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভাসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ সভাসমূহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কিন্তু উক্ত কর্মসূচির কারণে কোন কর্মচারী সভায় অংশগ্রহণ করেননি। অনেক সেবা প্রত্যাশীরা তাদের কাঙ্খিত সেবা না পেয়ে ফিরে যাচ্ছেন। ফলে জেলা ও উপজেলা মাঠ প্রশাসনে কার্যক্রমে স্থবিরতা দেখা দেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সুনামগঞ্জেও কর্মবিরতি পালনকালে জেলা প্রশাসকের কার্যালয় প্রাঙ্গণে অবস্থান করছেন কর্মচারীরা। সমিতি সূত্রে জানা গেছে, সুনামগঞ্জে মাঠ প্রশাসনের জেলা প্রশাসকের কার্যালয়, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয় ও সহকারী কমিশনার (ভূমি) এর কার্যালয়ে ১৩-১৬ গ্রেডের প্রায় ২ শতাধিক কর্মচারী রয়েছেন। সারা দেশে আছে প্রায় ১৩ হাজার। বাকাসস কর্তৃক দাবীকৃত পদসমূহ হচ্ছে অফিস সুপার/সিএকামইউডিএ/ট্রেজারি হিসাবরক্ষক/উচ্চমান সহকারী পদ হতে প্রশাসনিক কর্মকর্তা; স্টেনো গ্রাফার হতে ব্যক্তিগত কর্মকর্তা; স্টেনো টাইপিস্ট হতে সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা; অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক/ পরিসংখ্যান সহকারী/রেকর্ড ক্লার্ক/সার্টিফিকেট সহকারী/একাউন্টেন্ট ক্লার্ক/টাইপিস্ট কপিস্ট হতে সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা। একই যোগ্যতা নিয়ে সচিবালয়ে অফিস সহকারী কাম কম্পিউটার মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে চাকুরীতে যোগদান করেন মাত্র ৫বছরের ব্যবধানে তারা প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে থাকে এবং ধারাবাহিকভাবে সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার); সিনিয়র সহকারী সচিব (নন-ক্যাডার) এবং উপ-সচিব (নন-ক্যাডার) হিসেবে পদোন্নতি প্রাপ্ত হয়ে থাকে। পক্ষান্তরে মাঠ প্রশাসনের কর্মচারীগণ সচিবালয়ের কর্মচারীদের থেকে অধিক দায়িত্বশীলতা ও কর্মদক্ষতার পরিচয় দিলেও পদোন্নতির সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে একই পদে চাকরি জীবন শেষ করতে হচ্ছে কিন্তু পদোন্নতির কোন পদক্ষেপ নেয়নি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কর্মচারীরা জানান, পদোন্নতি ছাড়াই দীর্ঘদিন একই পদে কাজ করছেন মাঠ প্রশাসনের এমন হাজার হাজার কর্মচারী। এই কষ্ট নিয়ে অবসরে যাচ্ছেন এবং মৃত্যুকে আলিঙ্গন করছেন অনেকে। এই বৈষম্যের অবসান চেয়ে দুই দশক ধরে নানাভাবে আন্দোলন করছেন তারা। পদবি ও গ্রেড পরিবর্তনের জন্য তারা প্রধানমন্ত্রী, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসক বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন একাধিকবার। নীতিনির্ধারকদের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন বহুবছর। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদোন্নতির নির্দেশনা দিলেও জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় তা বাস্তবায়ন করেনি। এ দাবিতে কর্মচারীরা গত জানুয়ারি ও ফেব্রূয়ারির প্রথমার্ধ পর্যন্ত আন্দোলন করেছেন। হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে টানা কর্মবিরতি, অফিস চত্বরে অবস্থান ও সভা-সমাবেশ করেছেন নিজ নিজ কার্যালয়ে। বাকাসস’র সুনামগঞ্জ শাখার সহ-সভাপতি সুখেন্দু কুমার দাস জানান, দীর্ঘদিন ধরে এ দাবি জানিয়ে আসছি আমরা। কিন্তু তা মানা হচ্ছে না। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নির্দেশনা দেয়ার পরও দাবি না মানার বিষয়টি রহস্যজনক। অফিস সহকারি হিসেবেই আমাদের মৃত্যুবরণ করতে হচ্ছে। সমাজে আমরা হেয় হচ্ছি। মান মর্যাদা বলতে কিছুই থাকছে না। তিনি আরও জানান, ১৯৮৯ সালে অফিস সহকারী হিসেবে যোগদান করে বর্তমানে ৩২ বছরের অধীক সময় একই পদে কর্মরত আছি। আমাদের সাথে অনেকেই একই পদে থেকে অবসরে গিয়েছে এবং কেউ কেউ মৃত্যুবরণ করেছেন। এমনিভাবে অনেক কর্মচারী সুনামগঞ্জ কালেক্টরেটের অধীনে দীর্ঘ ৩৪-৩৫ বছর চাকরী করেও কোন পদোন্নতি পাননি। চাকরী জীবনের শেষ দিকে কেউ কেউ উচ্চমান সহকারী/প্রধান সহকারী/সিএ কাম ইউডিএ/অফিস সুপার পদে পদোন্নতি পেলেও বেতন গ্রেডের কোন পরিবর্তন হয়না। জানা যায়, বিভাগীয় কমিশনার ও জেলা প্রশাসকরাও পদবি পরিবর্তনের জন্য সুপারিশ করেছেন। জেলা প্রশাসক সম্মেলনে পদবি পরিবর্তনের যৌক্তিকতা তুলে ধরেন জেলা প্রশাসকরা। কর্মচারীদের বর্তমান পদ পরিবর্তন করে প্রশাসনিক কর্মকর্তা, সহকারী প্রশাসনিক কর্মকর্তা, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা ও সহকারী ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রয়োজনীয় কার্যক্রম গ্রহণের সুপারিশ করেছেন তারা। কিন্তু সেটা বাস্তবায়ন করা হয়নি। কর্মচারীরা জানান, একই পদের ২১ ধরনের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মচারীর পদবি ও গ্রেড পরিবর্তন হয়েছে। ১৯৯৫ সালের ১৯ মে সচিবালয়ের প্রায় দুই হাজার তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারীকে দ্বিতীয় শ্রেণির কমর্র্কতা পদে উন্নীত করা হয়। কিন্তু তাদের বিষয়ে কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।