বিবিএন ডেস্ক:
সিলেটের এমসি কলেজে ছাত্রশিবিরের অতর্কিত হামলায় বাংলাদেশ আনজুমানে তালামীযে ইসলামিয়ার এবং বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় এক শিক্ষার্থী গুরুতর জখম হয়েছেন। বুধবার মধ্যরাতে এমসি কলেজে ছাত্রাবাসে এ হামলার ঘটনা ঘটে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। আহত শিক্ষার্থী ইংরেজি বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান রিয়াদ। তিনি ছাত্রাবাসের ১ম ব্লকের ১০১ নং কক্ষের বৈধ আবাসিক শিক্ষার্থী। আহত রিয়াদের রুমমেট বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের শিক্ষার্থী জুনেদ আহমদ জানান, রাতের খাবার শেষে তারা ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। এমন সময় দরজায় প্রচণ্ড আঘাতের শব্দ পান। দরজা খুলে দেওয়ার সাথে সাথে এমসি কলেজ ছাত্র শিবিরের সেক্রেটারি জওহর লুকমান মুন্নার নেতৃত্বে ১০-১২জন শিবির কর্মী রুমে ঢুকে রিয়াদকে লাথি দিয়ে বিছানা থেকে নিচে ফেলেন। তাকে জিজ্ঞেস করেন, কুয়েটের ঘটনায় তুই শিবিরকে নিয়ে কী লিখেছিস। কোনো উত্তরের তোয়াক্কা না করেই তাকে চড়-থাপ্পড়, লাথি-ঘুষি মারতে থাকেন। এক পর্যায়ে পাশের রুম থেকে রড নিয়ে রুমে প্রবেশ করে নাজমুল ও সালমান। রিয়াদের রুমমেট জুনেদ এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে রুমের বাইরে বের করে দেওয়া হয়। দরজা লাগিয়ে রড দিয়ে বেধড়ক পিঠাতে থাকেন। এক পর্যায়ে শিবিরের কর্মী আদনান বলেন, তুই পরে যে অপবাদ দিবি, আগেই সেটি করে নেই। এই বলে ধারালো অস্ত্র দিয়ে পায়ের রগ কাটার চেষ্টা করে । রুমের বাইরে থাকা জুনেদের আর্তচিৎকারের ছাত্রাবাসের শিক্ষার্থী ও কর্মচারীরা জড়ো হন। শিবিরের নেতাকর্মীরা রক্তাক্ত অবস্থায় রিয়াদকে রুমের বাইরে টেনে বের করে ফেলে চলে যায়। তাকে পুলিশে দেওয়ার হুমকি দেয়। শিবির সেক্রেটারি মুন্না বলেন, সেও আন্দোলনে সক্রিয় ছিল, পুলিশে দেওয়ার দরকার নেই। মার যা হওয়ার হইছে যথেষ্ট। আর যাতে ছাত্রাবাসে উঠতে না পারে। ছাত্রাবাস ত্যাগের সময় ১০১ নং রুমে তালা দিয়ে রিয়াদ ও জুনেদের মোবাইল ফোন ও মানিব্যাগ কেড়ে নিয়ে চলে যায়। হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রিয়াদের অবস্থা গুরুতর। মাথা, পিঠ ও ডান পায়ে কয়েক স্থানে জখম হয়েছে।
উল্লেখ্য যে, মিজানুর রহমান রিয়াদ জুলাই বিপ্লবের সক্রীয় কর্মী। কুয়েটে সংঘর্ষের ঘটনায় একটি নিউজের কমেন্টে লিখেন, কীসের জন্য এত ত্যাগ করলাম। দিনের বেলা পুলিশের টিয়ারশেল আর লাটিচার্জ। রাতে পালিয়ে থাকলাম। সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাসের স্বপ্নে এত ছাত্র প্রাণ দিল। এখন যদি গুপ্ত সংগঠনের নেতা কর্মীরা ক্যাম্পাসে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে বসেন তাহলে এই ত্যাগের মূল্য কী।
রিয়াদের এই কমেন্ট এমসি কলেজ শিবিরে নজরের আসে। যার প্রতিক্রিয়ায় তাকে প্রাণে মারার উদ্দেশ্যে ব্যাপক মারধর করে জখম করে তারা। এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত থানায় কোন মামলা দায়ের হয়নি।