বিবিএননিউজঃ দৃশ্যত বিভক্ত কওমি অঙ্গন। এতোদিন বাদ-প্রতিবাদ সীমাবদ্ধ ছিল অনলাইনে। এখন পরিস্থিতির বেশ পরিবর্তন হয়েছে। হাটহাজারী মাদরাসার পর আরো কিছু স্থানেও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। হেফাজতের আমীর ও কওমি অঙ্গনের সবচেয়ে শ্রদ্ধেয় আলেম আল্লামা শাহ আহমদ শফীর মৃত্যুর পর পরিস্থিতি আরো জটিল হওয়ার আশঙ্কা দেয়া দিয়েছে।
এই মুহুর্তে সবচেয়ে আলোচিত প্রশ্ন হচ্ছে, হেফাজতে ইসলামের আমীর হচ্ছেন কে? সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী জানিয়েছেন, সহসাই কাউন্সিল আহ্বান করা হবে। সেখানেই ঠিক হবে আমীর কে হবেন? দৃশ্যত গত কয়েক বছর ধরে আল্লামা আহমদ শফীর সঙ্গে জুনায়েদ বাবুনগরীর একধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছিল। এ বিরোধের বেশিরভাগই ছিল নীতিগত। যার কেন্দ্রে ছিলেন আহমদ শফীর ছেলে আনাস মাদানী।বলা হচ্ছিল, আল্লামা শফী ছেলের দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। অসুস্থতা ও বয়সজনিত কারণে তিনি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না। যদিও জুনায়েদ বাবুনগরী কখনো প্রকাশ্যে আল্লামা শফীর সমালোচনা করেননি। কিন্তু আল্লামা শফীর বিভিন্ন নীতিগত সিদ্ধান্তে তিনি যে একমত ছিলেন না তা স্পষ্টই ছিলো। কওমি মাদরাসার বেশিরভাগ তরুণদের সমর্থনও ছিলো বাবুনগরীর দিকে। বিরোধের জেরে একপর্যায়ে হাটহাজারী মাদরাসা থেকে আউট হয়ে গেলেও গতকাল তিনি ফের প্রত্যাবর্তন করেছেন। হাটহাজারী মাদরাসার ক্ষেত্রে মজলিসে শূরা আপাতত যৌথ নেতৃত্ব নির্বাচন করেছে। তিন সদস্যের একটি বোর্ডই মূলত মাদরাসা পরিচালনার দায়িত্বে থাকবে। হেফাজতের ক্ষেত্রে কী ধরনের কৌশল নেয়া হয় সেটিই হবে এখন দেখার বিষয়।
হেফাজতে ইসলামের নির্বাহী কমিটির সদস্য মুফতি সাখাওয়াত হোসেন বলেছেন, ‘হেফাজতে ইসলামের ২২৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি শূরা কমিটি আছে। পরবর্তী আমীর কে হবেন সে বিষয়ে শূরা কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে।’ তবে বিষয়টি যে সহজ হবে না তা এরইমধ্যে খোলাসা হয়ে গেছে। ২০১০ সালে গঠন হলেও ২০১৩ সালেই সবচেয়ে বেশি আলোচনায় আসে হেফাজতে ইসলাম। ৫ই মে’র ঘটনার পর সংগঠনটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে অনেক ঘটনা ঘটে গেছে। তবে ওই ঘটনার পর থেকে হেফাজত হেঁটেছে একধরনের সমঝোতার নীতিতে। এসময়ে হেফাজতে প্রভাবশালী ভূমিকায় ছিলেন আল্লামা শফীর ছেলে আনাস মাদানী, হেফাজত নেতা মুফতি ফয়জুল্লাহ এবং মাওলানা মাঈনুদ্দীন রুহীসহ কয়েকজন।
বর্তমান পরিস্থিতিতে নেতৃত্ব নির্বাচন হেফাজতের জন্য খুবই কঠিন হবে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা। তারা বলছেন, হেফাজত আপাতত ভারপ্রাপ্ত আমীর না পূর্ণাঙ্গ আমীর নিয়োগ দেয় সেটিও হবে দেখার বিষয়। ভারপ্রাপ্ত আমীর নিয়োগ দিলে সহ-সভাপতিদের মধ্য থেকে কাউকে নিয়োগ দেয়া হতে পারে। এক্ষেত্রে আল্লামা মুহিবুল্লাহ বাবুনগরী, নূর হোসাইন কাসেমী, মাওলানা তাজুল ইসলামসহ বেশ কয়েক জনের নাম আলোচনায় রয়েছে। আর সরাসরি আমীর নিয়োগ দেয়া হলে আল্লামা জুনায়েদ বাবুনগরী হবেন অন্যতম প্রার্থী। তবে তার বিষয়টি বেশ চ্যালেঞ্জিং।(দৈনিক মানবজমিন)