লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ: গত দুই দিনে সুনামগঞ্জ জেলার সুরমা নদীর পানি দ্রুতই বৃদ্ধি পেয়েছে। সীমান্তের নদ নদীর পানি ও বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে হাওরের ফসল আবার ও ঝুকিঁর মধ্যে পড়েছে। এছাড়াও গতকাল শুক্রবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলার বিভিন্ন স্থানে কাল বৈশাখী ঝড় ও শিলা বৃষ্টিতে ঘরবাড়ি গাছপালা ও ফসলের ও ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলার অর্ধ শত গ্রামের ঘরবাড়ি গাছ পালা ও বোরো ফসল ক্ষতি হয়েছে। তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার রায়হান কবির জানান এমনিতেই বাধঁ রক্ষার জন্য প্রাণপন লড়াই করছি তার মধ্যে আবার ঝড় ও শিলা বৃষ্টি । দিনরাত পরিশ্রম করে এখন পর্যন্ত বাধঁ ঠিক আছে এই ধাক্কা সামলে উঠতে পারলে ইনশাল্লাহ আর কোন বিপদের আশঙ্কা থাকবেনা। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার সাদিউর রহিম জাদীদ জানান এই কদিনে অন্তত ৪০ ভাগ ধান কর্তন শেষ হয়েছে। নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় বাধঁ গুলো আবার ঝুকিঁর মধ্যেই আছে। নতুন করে আর কোন বাঁধ ভাঙ্গেনি।
ধর্ম পাশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির হাসান জানান উপজেলা প্রশাসন, পাউবো ও কৃষকদের নিয়ে দিনরাত বাঁধ রক্ষার কাজ করছি। গত কদিন ভালই ছিল। নদ নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে হাওরে পড়ছে তাই বাঁধ গুলো ঝুকিপূর্ণ হচ্ছে। জামালগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বিশ্বজিত দেব জানান সুরমা নদীসহ অন্যান্য পাহাড়ি নদীর পানি দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে
উপজেলার পাগনার হাওর, হালির হাওর, মিনি পাগনার হাওরের ক্লোজার সমুহের নিরাপত্তা ঝুকিঁ যাচাই করা হচ্ছে। বোগলা খালি ক্লোজার হাওরের সাইডে বালু ভরাট ও জিও ব্যাগ ফেলে অধিকতর মজবুত করার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করতে সবাই ঐক্যবদ্ধ ভাবে দিনরাত পরিশ্রম করছি।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ১ মো জহুরুল ইসলাম বলেন সুরমা নদীর পানি ৫,৬৭মিটার। গত দুই দিনে পানি বেড়েছে। এখন স্থিতিশীল আছে। তবে বেশীদিন এভাবে
থাকলে বাঁধের ক্ষতি হবে। তিনি আরও বলেন ভারতের মেঘালয় রাজ্যের চেরা পুঞজি সহ অন্যান্য স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে আর সেই ঢলের পানি প্রবেশ করে ফসল রক্ষাবাঁধের সর্বনাশ করছে।
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন বলেছেন প্রতিটি হাওরেই এডিসি ও ইউএনও গণ পাউবোর কর্ম কর্তা গণ ও হাওর পাড়ের কৃষক গণ বাধঁ রক্ষার জন্য প্রাণপন লড়াই করছেন। এমনকি নৌকার মধ্যেই রাত কাটাচ্ছেন। আমরা নিদের্শনা দিয়েছি ৮০ ভাগ ধান পাকা হলেই যেন কর্তন করা হয়। ইতিমধ্যেই অনেক জায়গাতেই ধান কাটার ধুম লেগেছে। দিন যতই যাচ্ছে ধান কাটা ও তত বাড়ছে। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিভিন্ন সাহায্য সহায়তার ব্যবস্থা করা হয়েছে আরও করা হবে।
এদিকে হাওর পাড়ের কৃষক দের চলমান হাওর রক্ষাবাঁধের কাজ নিয়ে নানা অভিযোগ রয়েছে তাদের ,
মতে সরকার কোটি কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় পিআইসিদের কিন্ত পিআইসি নামধারী প্রভাবশালীরা বাঁধ নির্মান ও রক্ষার দায়িত্ব নিয়েই বাঁধ রক্ষায় নামে রক্ষক হয়ে ভক্ষক হয়ে যায়। দায়সারা কাজ করায় আগাম পাহাড়ী ঢলে বাঁধে ফাটল ও ধসে পড়ায় সুনামগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলা বোরো ফসলের ১৫ হাওর ডুবে ২০ হাজার হেক্টর বোরো জমি পানিতে তলিয়ে গেছে। । একমাত্র বোরো ফসল হারিয়ে কৃষক ও তাদের পরিবার হাহাকার বিরাজ করছে। শনির হাওর পাড়ের কৃষক আরিফ মিয়া জানান,ফসল ডুবির পর যে বাঁধ গুলো আশা জাগিয়ে রেখেছে সেগুলোতেও ফাটল ও ধসে পড়ায় হাওরপাড়ের কৃষক পরিবার গুলোর মধ্যে আতংক বিরাজ করছে। আর বাঁধ রক্ষায় রাত জেগে পাহারা দেওয়াসহ বাঁধ টিকিয়ে রাখতে কাজ করছে পাউব কৃষক,শ্রমিক আর প্রশাসন। বাঁধ ভেঙ্গে কৃষকের ক্ষতি হলেও পিআইসি নামধারী প্রভাবশালীরা রাজনৈতিক দলের নেতারা প্রকল্প নিয়ে সরকারি টাকা লুটপাট করে লাভবান হয়েছে। হাওরের ব্যাপক ফসলহানির পুনরাবৃত্তি যে কোনো উপায়ে ঠেকাতে হবে। না হলে হাওর পাড়ের কৃষকদের কষ্টের শেষ থাকবে না বলে জানান,হাওর বাঁচাও আন্দোলন নেতা ও হাওরাঞ্চলে কৃষক ও কৃষির সাথে সম্পর্কিতরা। তাহিরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক,বৃহত্তর শনির হাওরের পাড়ের কৃষক হাবিবুর রহমান খেলু বলেন,হাওরে উৎপাদিত একমাত্র বোরো ধান এখনও ঝুঁকির মুখে। কিছু কিছু হাওরে বোরো ধান কাটা শুরু হলেও তা একেবারেই সামান্য। সময় মত ও সঠিক ভাবে বাঁধে কাজ না করায় দূর্বল বাঁধের কারনে বাঁধ ভাঙ্গার শংকা যেন কাটছেই না। বাঁধ নির্মান করল পিআইসি আর এখন বাঁধ টিকিয়ে রাখছে কৃষক,শ্রমিক আর প্রশাসন।
তাহিরপুর উপজেলা কৃষি অফিসার হাসান উদ দোলা জানান,এবার ছোট বড় ২৩টি হাওরে বোরো জমি চাষ করেছেন কৃষকরা ১৭,৪৯৫হাজার হেক্টর। এ থেকে চাল উৎপাদন হবে প্রায় ২৫০কোটি টাকা। এখনও পর্যন্ত হাওরে ২শত হেক্টর ধান কাটা হয়েছে। আর কাটার উপযোগী আছে ২৫০হেক্টরের বেশী। আশা করছি আল্লাহ সহায় হলে আমাদের প্রতিটি বাঁধ ঠিকে থাকবে ধান কাটাও শেষ হয়ে যাবে। সরজমিনে উপজেলার টাংগুয়ার হাওরের ২৩,২৪,২৫সং পিআইসিসহ কয়েকটি রক্ষা বাঁধে দেখা যায়,হাওর বাঁধের মাটি ধসে পড়ায় সেখানে কাজ করছেন শ্রমিকরা। রাতে বৃষ্টির কারনে বাঁধের মাটি ধসে পড়েছে। তাই ভোর রাতে এসে নৌকা দিয়ে মাটি ও বালু এনে বস্তায় ভরে বাঁধে ফেলছে শ্রমিকরা,তদরকি করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রায়হান কবির,এসিল্যান্ড আলাউদ্দিন। খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন। বাধেঁ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দিচ্ছেন। তাহিরপুর উপজেলা নিবার্হী কর্মকর্তা রায়হান কবির জানান,বাঁধ নিয়ে শুরু থেকেই কাজ করছি এখন বাঁধ রক্ষায় কঠোর নজরধারীর পাশাপাশি তদরকি করতে হচ্ছে বৈরী আবহাওয়া উপক্ষো করেই। তারপরও বাঁধ গুলো টিকে যাক কৃষকগন তাদের কষ্টের ফলানো বোরো ধান গোলায় তুলোক এতেই আমাদের স্বস্থি।
উল্লেখ,বাঁধ নির্মানে অনিয়ম ও দুনীতির তদন্তের জন্য জেলা প্রশাসক জাহাঙ্গীর হোসেন একটি কমিটি গঠন করে দিয়েছেন। এই কমিটি আগামী ২৫এপ্রিলের মধ্যে রিপোর্ট দিবে এরপর কঠোর ব্যবস্থা নেব অনিয়মকারীদের বিরুদ্ধে। এদিকে পানি সম্পদ মন্ত্রনালয় থেকেও ৫ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাঁধ ভেঙে যাওয়া ও ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছে।
সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার ৪২টি হাওরে ৭২৭টি পিআইসি,১৩৫ টি ক্লোজার সহ মোট ৫৩২কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ ও সংস্কারের জন্য সরকার ১২১ কোটি টাকার বরাদ্দ প্রদান করেন।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রের মতে জেলায়
২ লাখ ২৪ হাজার হেক্টর বোরো ধান আবাদ হয়েছে। এতে ১৩ লাখ মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের টার্গেট।