• ১৯শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২১শে শাওয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

রাঙামাটিতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর তিন দিনের সর্ব বৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবী শুরু

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ১২, ২০২২
রাঙামাটিতে পাহাড়ী জনগোষ্ঠীর তিন দিনের সর্ব বৃহৎ সামাজিক উৎসব বৈসাবী শুরু

 

|| মুহাম্মদ ইলিয়াস,রাঙামাটি প্রতিনিধি ||

পার্বত্য চট্টগ্রামের (রাঙামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবান) তিন জেলার পাহাড়ি জনগোষ্ঠী বর্ষ বরণ ও বিদায়কে কেন্দ্র করে তিন দিনব্যাপী সর্ব বৃহৎ সামাজিক উৎসব শুরু হয়েছে।

বর্ষ বরণ ও বিদায়কে কেন্দ্র করে রাঙামাটির কাপ্তাই হ্রদে মঙ্গলবার সকালে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্যে ফুল ভাসানোর মধ্য দিয়ে রাঙামাটিতে শুরু হয়েছে চাকমাদের বিজু, মারমাদের সাংগ্রাই ও ত্রিপুরাদের বৈসুক উৎসব। সকাল থেকে উপজাতীয় নারীরা বাগান থেকে ফুল তুলে নিয়ে একে একে চলে আসে কাপ্তাই হ্রদের নৌ ঘাটে। স্রষ্টার আর্শিবাদ প্রার্থনা করে কাপ্তাই হ্রদে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশে চাকমা রাজবাড়ী ঘাটে পানিতে ফুল ভাসিয়ে এ উৎসবের সূচনা করেন।


শুরুতে রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাসী উদযাপন কমিটি উদ্যোগে গ্রামের তরুন তরুনীরা ফুল নিয়ে একত্রিত হয়। এরপরে ফুল ভাসানোর জন্য হ্রদের পাড়ে সারিবদ্ধভাবে ফুলের ঢালি জলে ভাসানোর মধ্য দিয়ে তিন দিনের এই উৎসবের সূচনা করা হয়। একইভাবে সকালে শরের গর্জনতলীতে গঙ্গা দেবীর উদ্দেশ্য ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়ে ত্রিপুরাদের
বৈসুক উৎসবের উদ্বোধন করেন রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অংসুইপ্রু চৌধুরী। এসময় জেলা পরিষদ সদস্য বিপুল ত্রিপুরা সহ অন্যান্য নেতৃবৃন্দ
উপস্থিত ছিলেন। রাজবাড়ী ঘাটে বৈসাবি উৎদযাপন কমিটির উদ্যোগে ফুল বিজুর উদ্বোধন করেন
রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। এ সময় সাবেক উপসচিব প্রকৃত রঞ্জন চাকমা, রাঙামাটি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাজমা বিনতে আমিন এ সময় স্থানীয় নেতৃবৃন্দ উপস্থত ছিলেন। উৎসবে আগত অন্য সম্প্রদায়ের লোকজন বলেন, পার্বত্য অঞ্চলের সর্ব বৃহৎ সামাজিক এ উৎসবভবৈসাবি যেন সকল সম্প্রদায়ের উৎসব এখানে এসে মনে হচ্ছে না আমরা বাঙ্গালী। আমাদের মনে হচ্ছে আমরাও এদের একজন।

বিজু উদ্্যাপন কমিটির সদস্য সচিব ইন্টু মনি চাকমা বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর উৎসব না করলেও রাঙামাটিসহ তিন পার্বত্য জেলায় এবছর উৎসবের উচ্ছ্বাস বয়ে যাচ্ছে। এই ফুল ভাসানোর মধ্যে দিয়েই শুরু হচ্ছে পাহাড়ি জনগোষ্ঠীগুলোর তিন দিনব্যাপী প্রধান সামাজিক উৎসব বিজু। ফুল বিজু, মূলবিজু পালনের পর গোজ্যেপোজ্যে দিন পালিত হবে ঘরে ঘরে।

রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, এতো রং এতো বৈচিত্র দেখে আমি মুগ্ধ। গত দুই বছর করোনার কারণে পাহাড়ের বৈসাবী উৎসবের রংছড়াতে পারেনি। কিন্তু এবছর করোনা কিছু মুক্ত হওয়ায় পাহাড়ের তার ঐতিহ্য
ও সংস্কৃতিক চর্চা আবারো শুরু হয়েছে। তিনি বলেন, বৈসাবি উৎসব পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়কে এক করে দিয়েছে।

পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের প্রাণের উৎসব বৈসাবী উৎসব। এই উৎসবকে
ঘিরে পাহাড়ের প্রতিটি ঘরে ঘরে আনন্দ বয়ে যাচ্ছে। পার্বত্য শান্তি চুক্তি
বাস্তবায়নের ফলে পাহাড়ের সকল সম্প্রদায়ের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ সৃষ্টি
হয়েছে। সেই সাথে পার্বত্য অঞ্চলের এই উৎসবের মধ্যেমে পার্বত্য অঞ্চলে সকল
সম্প্রদায়ের মাঝে সম্প্রীতির বন্ধন সুদৃঢ় হবে। পার্বত্য অঞ্চলের সকল
সম্প্রদায় যাতে এক হয়ে সন্দুর একটি আগামীর বাংলাদেশ গড়তে পারে সেই দিকে
আমাদের সকলের প্রত্যাশা থাকবে।
বৈসাবীর উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবছর এই তিনদিনে আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে
পার্বত্য অঞ্চলের সকল সম্প্রদায়ের মানুষ। আগামীকাল মুল বিজুর উৎসব পালন
করবে পাহাড়ের জনগোষ্ঠী। ঐতিহ্যবাহী পাঁজন রান্না করে অতিথি আপ্পায়নের মধ্যে দিয়ে মুল বিজুর আনুষ্ঠানিকতা। আগামী ১৬ এপ্রিল সাংগ্রাই জলোৎসবের মধ্যে দিয়ে উৎসবের সমাপ্তি ঘটবে।