ডেস্ক ::: মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের ৫০ বছর পূর্তি বৃহস্পতিবার । ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ৩০ লক্ষ শহীদের আত্মত্যাগের বিনিময় অর্জিত হয় আমাদের মহান স্বাধীনতা। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ঐতিহাসিক বঙ্গবন্ধুর ভাষনের পর বাংলার আপামর জনতা দেশ স্বাধীনের জন্য হাতে তুলে নিয়েছিলেন অস্ত্র।
যুদ্ধের ময়দানে মহান মুক্তিযুদ্ধের বীর সেনানীদের সংঘবদ্ধ করতে যারা দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন, তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন কর্ণেল আতাউল গণি ওসমানী। দীর্ঘ ৯ মাস মরণপন যুদ্ধ শেষে পাক হানাদার বাহিনী ১৬ ডিসেম্বর আত্মসমর্পন করে। মুক্তিযোদ্ধারা ছিনিয়ে আনেন লাল সবুজের পতাকা। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে দায়িত্ব পালনকারীদের মধ্যে একজন বীরের জন্ম সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কদমতলীতে । বঙ্গবন্ধু যার নামের আগে জয় বাংলা হাজী বলে সম্মোধন করতেন।
তিনি হাজী রশীদ উল্লাহ। বর্তমান সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ২৬ নং ওয়ার্ডের কদমতলী স্বর্ণশিখা আবাসিক এলাকার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে মরহুম হাজী রশীদ উল্লাহ জন্মগ্রহন করেন। ৬ পুত্র ও ৬ কন্যা সন্তানের জনক হাজী রশীদ উল্লাহ ছিলেন একজন সাহসী ও রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব। বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সিলেট আসলেই সবার আগে জয় বাংলা হাজীকে খোঁজতেন। ১৯৭১ সালের আগে ও পরে কয়েকবার বঙ্গবন্ধু হাজী রশীদ উল্লাহ’র বাড়িতে এসেছেন।
এখানেই খাওয়া দাওয়া করতেন বঙ্গবন্ধু। কদমতলীর বাসিন্দা বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলের সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক বলেন, ১৯৬৫ সালে হাজী রশীদ উল্লাহ আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। সেই সময় হাজী রশীদ উল্লাহ ছিলেন বরইকান্দি ইউনিয়নের ইউপি সদস্য। তৎকালীন সময়ে পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্থান জুড়ে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচনে ছিলো সরগরম। তখন প্রধানমন্ত্রীকে বেসিক ডেমোক্রেসির মাধ্যমে প্রত্যেক এলাকার ইউপি সদস্যরা ভোট প্রদান করতেন।
নির্বাচনে ফাতেমা জিন্নাহকে এ অঞ্চল থেকে সমর্থন করা হলেও নির্বাচনে আইয়ুব খান জয়লাভ করেন। ১৯৬৫ সালের শুরু থেকে হাজী রশীদ উল্লাহ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দদের সাথে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন। ১৯৬৯ সালে হাজী রশীদ উল্লাহ ১৭ ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত সিলেট সদর আওয়ামী লীগের সভাপতি পদে মনোনীত হন। ১৯৬৯ ইং সালে ৬ দফা আন্দোলনে ঢাকায় নিহত হন নবম শ্রেণীর ছাত্র মতিউর রহমান ও ছাত্র ইউনিয়নের আসাদ। আন্দোলনের ফলে আইয়ুব খান দাবি মেনে নিয়ে ১৯৭০ সালে নির্বাচন দিতে বাধ্য হন। ১৯৬৯ সালের শেষের দিকে সিলেট গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজারে সভা শেষে বঙ্গবন্ধু সিলেট ফিরে আসার সময় হাজী রশীদ উল্লাহ’র বাড়িতে উপস্থিত হন। সেখানে বঙ্গবন্ধুসহ অন্যান্য আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দদের প্লেটে খাবার তুলে দেন তৎকালীন মদন মোহন কলেজ ছাত্র সংসদের সাধারণ সম্পাদক বৃহত্তর সিলেট ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি রফিকুল হক।
হাজী রশীদ উল্লাহ’র মুখে জয় বাংলার শব্দে মুখরিত থাকতো সেই সময়কার রাজপথ। হাজী রশীদ উল্লাহ ১৯৭৫ সালে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁর বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করেন বীর মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল হক। কদমতলী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভুমি দাতাদের মধ্যে অন্যতম হাজী রশীদ উল্লাহ। তিনি বেচেঁ থাকালীন সময়ে এলাকার উন্নয়ন ও দেশের কল্যাণে অনেক অবদান রেখেছেন। বর্তমানে হাজী রশীদ উল্লাহ’র বাড়ির সামনে তার সন্তানরা আওয়ামী লীগের প্রতিক নৌকার আদলে তৈরি করেছেন বাড়ির প্রধান ফটক। ফটকে লিখা রয়েছে জয় বাংলা হাজীর বাড়ি। বর্তমানে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়নের জন্য এই গেইটটি ভেঙে ফেলা হবে। এ ব্যপারে সিলেট সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র (১) ও ২৬ নং ওয়ার্ডের পরপর ২ বারের নির্বাচিত কাউন্সিলর রোটারিয়ান তৌফিক বকস্ লিপন বলেন, গেইটটি ভেঙে ফেলা হলেও একজন বীর ও মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক হিসেবে হাজী রশীদ উল্লাহ’র স্মৃতির প্রতি সম্মান রেখে পূর্বের মতো নতুন করে ঐ গেইট সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে তৈরি করে দেওয়া হবে।