• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

হাবিব চমকে নিরুত্তাপ সিলেট

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুন ১২, ২০২১
হাবিব চমকে নিরুত্তাপ সিলেট

 

মনোরম চক্রবর্তী:শিল্পাঞ্চল হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ সিলেট-৩ আসন। এই আসনে টানা তিনবার আওয়ামী লীগ থেকে সংসদ সদস্য ছিলেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস। তাঁর মৃত্যুতে সিলেট-৩ আসন শুণ্য ঘোষণা করা হলে এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন পেতে দৌড়ঝাঁপ করেন ২৫ জন নেতা। এর মধ্যে দলের তারকা নেতা সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ছাত্রলীগের সাবেক তুখোর নেতাসহ মাঠ কাঁপানো ছিলেক উল্লেখযোগ্য কয়েকজন। প্রবাসী নেতারাও ছিলেন মাঠে সরব। তবে সবাইকে একেবারে কাত করিয়ে দিলেন এক হাবিব। হাবিবুর রহমান হাবীব। তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও পূণর্বাসন বিষয়ক সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের কার্যকরী কমিটির সদস্য। শনিবার (১২ জুন) গণভবনে মনোনয়ন বোর্ডের এক সভায় তাকে মনোনয়ন প্রদান করা হয়।

করোনা আক্রান্ত হয়ে সিলেট-৩ আসনের সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস মারা যান। এরপর গত ১১ মার্চ নির্বাচন কমিশন (ইসি) জাতীয় সংসদের সিলেট-৩ আসনটি শূন্য ঘোষণা করে। সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১২৩ এর দফা (৪) অনুযায়ী, উক্ত শূন্য আসনে ৮ জুনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা থাকলেও করোনার কারণে ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন সম্ভব হয়নি। এ অবস্থায় শূন্য আসনটিতে ৮ জুন পরবর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য তফসিল ঘোষণা করে ইসি। আগামী ২৮ জুলাই এই আসনের উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা।

মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুতে শূন্য হওয়া সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন ২৫ জন নেতা। তাদের মধ্যে অন্যতম হলেন- মাহমুদ উস সামাদের স্ত্রী শেখ রাসেল জাতীয় শিশু কিশোর পরিষদের উপদেষ্টা ফারজানা সামাদ চৌধুরী, আওয়ামী লীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ, বাংলাদেশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক দুলাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক ও ডিগ্রি কলেজের সাবেক ভিপি শাহ মুজিবুর রহমান, ব্যবসায়ী নেতা তাহমিন আহমদ, সাবেক ছাত্রনেতা মুক্তিযোদ্ধা দেওয়ান গৌস সুলতান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি পিপি অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, জেলা আওয়ামী লীগের কোষাধ্যক্ষ শমসের জামাল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল বাছিত টুটুল, বাংলাদেশ অ্যাথলেটিক্স ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রকিব মন্টু, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ম্যানচেস্টার শাখার সাবেক সভাপতি স্যার এনাম উল ইসলাম, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ শিল্প ও বাণিজ্য সম্পাদক আসম আসম মিসবাহ, সিলেট জেলা যুবলীগের সাবেক সদস্য শামীম ইকবাল, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. সাইফুল আলম, বাংলাদেশে আওয়ামী লীগের অর্থ ও পরিকল্পনা বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এম সাদরুল আহমেদ খান, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য বদরুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, সিলেট এমসি কলেজ সাবেক ছাত্রলীগ সভাপতি সেলিম আহমদ ও বাংলাদেশ আওয়ামী মুক্তিযোদ্ধা যুব প্রজন্মলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আবদুস শহীদ কাজল।

এদিকে, হাবিবুর রহমান হাবিবের সিলেট-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন লাভের সংবাদে নিরুত্তাপ হয়ে পড়ে সিলেট। দলীয় কর্মীদের মধ্যেও সৃষ্টি হয় মিশ্র প্রতিক্রিয়া। হাবিব অনুসারীদের দাবি এর আগেও সিলেট-৩ আসনে দলীয় মনোনয়ন লাভের প্রচেষ্ঠায় ছিলেন তিনি। মাঠে সরব থেকে ত্রাণ কার্যক্রমসহ করোনাকালেও ছিলেন ভোটারদের পাশে। যুক্তরাজ্য থেকেও নেতা-কর্মীদের সাথে সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রাখতেন হাবিবুর রহমান হাবিব। এই অংশের দাবি- এই দলীয় সভানেত্রীর এই সিদ্বান্তের মাধ্যমে সিলেট-৩ আসনে দলের প্রার্থীর বিজয় সুনিশ্চিত হবে এবং উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকবে।

তবে, হাবিবের দলীয় মনোয়নকে কোনোভাবেই মানতে চাচ্ছে না দলের স্থানীয় একটি অংশ। নাম না প্রকাশের শর্তে-অনেকেই বিষয়টিকে যুক্তরাজ্য মিশন মনে মন্তব্য করেন। তাদের মতে, মনোনয়ন প্রত্যাশীদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন ক্লিন ইমেজের। দলের প্রতি উল্লেখযোগ্য অবদানও রয়েছে। স্থানীয় রাজনীতিতে তাদের পরিচ্ছন্ন ইমেজের কারণে বিজয়টাও ছিল অনেকটা সুনিশ্চিত। তাছাড়া দলের বিগত আন্দোলন সংগ্রামে না থেকেও হঠাৎ করেই হাবিবুর রহমান হাবিরের মনোনয়ন লাভ নি:সন্দেহে ভোটের রাজনীতিতে বিভাজন সৃষ্টি করবে।

এদিকে, দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার প্রতিক্রিয়ায় হাবিব বলেন, আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের কাছে চির কৃতজ্ঞ। যারা মনোনয়ন চেয়েছিলেন তারা সকলেই যোগ্য, সবাই আমার নেতা। তাদের সকলকে নিয়েই আমি কাজ করব।

নির্বাচন কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, সিলেট-৩ আসনে মোট ২ লাখ ৫৫ হাজার ৩০৯ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ২৮ হাজার ৬১৮ জন পুরুষ এবং ১ লাখ ২৬ হাজার ৬৯১ জন নারী ভোটার রয়েছে।