বিশেষ প্রতিনিধি ছাতক থেকে: বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ছাতক অফিস যেন ঘুস-দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা, ঘুস গ্রহণসহ নানা কারণে প্রতিদিন হাজার হাজার গ্রাহক চরম হয়রানির শিকার হচ্ছেন। জানা যায়, ছাতক বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অধীনে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলা, দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন এবং সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার লামাকাজি ইউনিয়নসহ প্রায় ২২ হাজার গ্রাহক রয়েছেন। ২০১৮ সালে ৫ মে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে আব্দুল্লাহ আল মামুন সরদার যোগদানের পর থেকে সেবামূলক অফিসটি ঘুস-দুর্নীতি ও চুরির আখড়ায় পরিণত হয়। তিনি অফিস সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেনের মাধ্যমে ঘুস বাণিজ্যে মেতে উঠেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ছাতক শহরে শতাধিক স্টোন ক্রাসিং মিল, লাফার্জ-সুরমা সিমেন্ট লি., ছাতক সিমেন্ট ফ্যাক্টরি লি., নিটল পাল্প অ্যান্ড পেপার মিল লি., আকিজ বেভারেজ ফুড লিমিটেডসহ বিভিন্ন শিল্প কারখানা রয়েছে। বিশেষ করে স্টোন ক্রাসিং মিলে ট্রান্সফর্মার নষ্ট হলে সেটি পরিবর্তনের নামে আদায় করা হয় দেড় থেকে দুই লাখ টাকা। এছাড়া আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকদের প্রতি বছর প্রায় অর্ধশতাধিক ট্রান্সফর্মার বিকল হলে পরিবর্তনের প্রয়োজন হয়। এ ক্ষেত্রে প্রতিটি ট্রান্সফর্মার বদলের নামে হাতিয়ে নেওয়া হয় বছরে প্রায় আড়াই কোটি টাকা। ছাতক অফিসে নির্বাহী প্রকৌশলী পদে আব্দুল্লাহ আল মামুন সরদার যোগদানের পর থেকে এ রেওয়াজ শুরু হয়। আবাসিক এলাকার ট্রান্সফর্মার বিকল হলে আব্দুল্লাহ আল মামুন সরদার তার প্রধান সহযোগী আবুল হোসেনের মাধ্যমে গ্রাহকদের অফিসে ডেকে ঢাকা থেকে ট্রান্সফর্মা পরিবর্তনে কয়েক মাস সময় লাগার কথা জানান। বাধ্য হয়ে গ্রাহকরা টাকার বিনিময়ে দ্রুত কাজ করিয়ে নেন। উপজেলার উত্তর সুরমার পৌর এলাকার নোয়ারাই, ফকির টিল্লা,রাজ গাও,নোয়ারাই ইসলাম পুর,মফিজ নগর সহ বিভিন্ন গ্রামের লোডশেডিং, গ্রাহক হয়রানি দুর্নীতি চলছেই। নোয়ারাই এলাকার রংপুর, একটি ক্রাসিং মেশিনের ট্রান্সফর্মার পরিবর্তনের জন্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা সংযোগের নামে হাতিয়ে নেন নির্বাহী প্রকৌশলী ও তার সহযোগী। এছাড়া নোয়ারাই ইউনিয়নের টিলাগাঁও গ্রামে এসটি ২২ খুঁটি ও এলটি ৩০ খুঁটিতে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে প্রায় ১৪ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন। এভাবে মোহনপুর, তেরাপুর ও রামপুর গ্রামে মেরামতের নামে আট লক্ষাধিক টাকা এবং দোয়ারাবাজার সদর ইউনিয়নের কান্দাগাঁও গ্রামের তিন কিলোমিটার বিদ্যুতের নতুন সংযোগ দেওয়ার নামে ২৫ লাখ টাকা আদায় করা হয়। প্রভাবশালী হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। মিটার রিডারদের এলাকায় না পাঠিয়ে গ্রাহকদের নামে তিনি মনগড়া বিল দিয়ে যাচ্ছেন। দেখা গেছে, জনৈক এক গ্রাহক নয়শ ইউনিট বিদ্যুৎ ব্যবহার করলেও বিল পরিশোধ করেছেন ১৮০০ থেকে দুই হাজার ইউনিটের। এছাড়া ২৯ মে রাত ১১টার দিকে ছাতক বিদ্যুৎ বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেন ৪২টি সরকারি মিটার চুরি করে নেওয়ার সময় ধরা পড়েন। কার্যালয়ের স্টোর রুম থেকে আবুল হোসেন মিটারগুলো নিয়ে যাচ্ছিলেন। এ সময় অফিসের লাইনম্যান সিকন্দর আলী প্রধান, মনজুর আলীসহ অন্যরা দেখে ফেলে তাকে আটক করেন। পরে ওই বিষয়টি অফিসজুড়ে জানাজানি হলে ৪২টি মিটার অফিসের একটি কক্ষে রাখা হয়। যার বাজার মূল্য প্রায় তিন লাখ টাকা। এ ব্যাপারে একজন লাইনম্যান বাদী হয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও ছাতক বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। এদিকে ৩০ বছরের পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ বিদুৎ লাইনের সংস্কার না করে লাখ লাখ টাকা নিয়ে সংস্কার করছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে উপ-সহকারী প্রকৌশলী আবুল হোসেনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান। তবে মিটার সরানোর ঘটনা তিনি নির্বাহী প্রকৌশলীর কাছে স্বীকার করেছেন। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ছাতকের বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল্লাহ আল মামুন সরদার ৪২টি মিটার সরিয়ে নেওয়ার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছেন। তবে তার বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেন।