বিবিএন স্পোর্টস ডেস্ক: আফগানিস্তানের বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ফিরতি ম্যাচে আজ মাঠে নামবে বাংলাদেশ। কাতারের দোহায় আফগানিস্তানের বিপক্ষে আজকের ম্যাচের পর ভারত ও ওমানের বিপক্ষে আরও দুটি ফিরতি ম্যাচ বাংলাদেশের। এশিয়া অঞ্চলের গ্রুপ ‘ই’তে এরই মধ্যে পাঁচটি ম্যাচ খেলা হয়ে গেছে।
২০১৯ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বরের মধ্যে আফগানিস্তান, কাতার, ভারত ও ওমানের বিপক্ষে একটি হোম ও তিনটি অ্যাওয়ে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। গত বছর মার্চ থেকে জুনে হোম ম্যাচগুলো খেলার কথা ছিল আফগানিস্তান, ভারত আর ওমানের বিপক্ষে। ডিসেম্বরে কাতারে অ্যাওয়ে ম্যাচটি হয়ে যাওয়ার পর পাঁচ মাস বিরতি দিয়ে আবারও বড় চ্যালেঞ্জের সামনে জাতীয় দল। করোনা-দুর্ভাগ্যে হোম ম্যাচগুলো বিদেশের মাটিতে খেলাটা স্বস্তিকর না হলেও চ্যালেঞ্জে উতরে যাওয়াই লক্ষ্য বাংলাদেশর।
দোহায় বিশ্বকাপ বাছাইয়ের এই তিন ম্যাচের আগে স্বাভাবিকভাবেই ফুটবলপ্রেমীদের আগ্রহ থাকবে অতীতের পারফরম্যান্স নিয়ে। ৩৬ বছর আগে, ১৯৮৫ সালে প্রথমবারের মতো ছিয়াশির মেক্সিকো বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে খেলেছিল বাংলাদেশ। এ নিয়ে দশমবারের মতো বাছাইপর্বে অংশ নিচ্ছে বাংলাদেশ।
এখনো পর্যন্ত কখনো বাছাইপর্বের প্রথম পর্ব পার হওয়া হয়নি বাংলাদেশের। বরং দুবার প্রাক্বাছাইয়ে আটকা পড়ে গেছে দল। এর মাঝে ২০০৬ বিশ্বকাপ বাছাইপর্বটা বাংলাদেশের জন্য খুব হতাশাজনক ছিল। তাজিকিস্তানের সঙ্গে প্রাক্বাছাইয়ের দুই ম্যাচে বাংলাদেশ শুধু হারেইনি, প্রথমবারের মতো কোনো বাছাইপর্ব গোল করতে না পারার লজ্জাও যোগ হয়েছিল সেবার।
এমনিতেই বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের পারফরম্যান্স বরাবরই হতাশাজনক। এখন পর্যন্ত ৫৫টি ম্যাচ খেলেছে জাতীয় দল। মাত্র ১০ ম্যাচে জিতেছে বাংলাদেশ। ৭টি ম্যাচ ড্র করেছে। আর হেরেছে ৩৮ ম্যাচে! এই ম্যাচগুলোতে প্রতিপক্ষ ১৩৫ বার বল পাঠিয়েছে বাংলাদেশের জালে। আর বাংলাদেশ করেছে ৩৬ গোল।
বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে বাংলাদেশের অবস্থা গোলের এই পরিসংখ্যানেই বোঝা যায়। এখন পর্যন্ত খেলা ৫৫ ম্যাচে বাংলাদেশের গোল মাত্র ৩৬টি। এর মধ্যে একটি আত্মঘাতী গোল। বাকি গোলগুলো এসেছে ২৩ জনের মাথা বা পা থেকে! সর্বোচ্চ ৩টি করে গোল করেছেন তিনজন। মামুন জোয়ার্দার, আলফাজ আহমেদ আর জাহিদ হাসান এমিলি। দুটি করে গোল করেছেন আশরাফউদ্দিন আহমেদ চুন্নু, কায়সার হামিদ, রুম্মান বিন ওয়ালি সাব্বির, রিজভী করিম রুমি, জুয়েল রানা, মোহাম্মদ সুজন।
স্ট্রাইকিং সমস্যা বাংলাদেশের ফুটবলের চিরকালীন সমস্যা, সেটি গোলদাতাদের তালিকা দেখেই বোঝা যায়। বাংলাদেশের জার্সিতে স্ট্রাইকার হিসেবে অনেকেই খেলেছেন। কিন্তু বাছাইপর্বে সর্বোচ্চ গোলদাতার গোলও মাত্র তিনটি। এঁদের মধ্যে দুজন স্ট্রাইকার। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হিসেবে যাঁরা আছেন, তাঁদের মধ্যে কায়সার হামিদ, জুয়েল রানা ও মোহাম্মদ সুজন পুরোদস্তুর ডিফেন্ডার।
বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত ২৩ দলের সঙ্গে খেলেছে। এদের মধ্যে বাংলাদেশ চারটি দলের সঙ্গে কখনো হারেনি। পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, লাওস ও মঙ্গোলিয়ার বিপক্ষে এখন পর্যন্ত দুটি করে ম্যাচ খেলে হারেনি বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তো শতভাগ জয়ের রেকর্ডই আছে। তবে শতভাগ হারের রেকর্ড বেশ লম্বা বাংলাদেশের ক্ষেত্রে।
অস্ট্রেলিয়া, চীন, ইরান, জাপান, জর্ডান, কিরগিজস্তান, মালয়েশিয়া, কাতার, সৌদি আরব ও আরব আমিরাত—এদের সবার বিপক্ষেই কখনো হার এড়াতে পারেনি বাংলাদেশ। সৌদি আরবের বিপক্ষে তো হার চারবার।
চারবার হারের রেকর্ড তাজিকিস্তান ও থাইল্যান্ডের বিপক্ষেও আছে। এর পেছনেও গোল করতে না পারার ব্যর্থতা। বাছাইপর্বে ৫৫ ম্যাচের ৩১টিতেই বাংলাদেশ গোল করতে পারেনি। মাত্র আট ম্যাচে দুই বা ততোধিক গোল করেছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জয় ৩-০ ব্যবধানের, প্রতিপক্ষ—শ্রীলঙ্কা (১৯৯৩), মঙ্গোলিয়া (২০০১), ও পাকিস্তান (২০১১)।
বাছাইপর্বে রক্ষণ ব্যর্থতাও কম পোড়ায়নি বাংলাদেশকে। অন্তত ৪ গোল হজম করতে হয়েছে ১৭ ম্যাচে। এক ম্যাচে সর্বোচ্চ আট গোল খাওয়ার রেকর্ড আছে। সেটাও দুবার। ১৯৯৩ সালে জাপান বাংলাদেশকে ৮ গোল দিয়েছিল। সে ভয়াবহ স্মৃতি ২০১৬ সালে আম্মানে জর্ডান আবার ফিরিয়ে এনেছিল। ১৯৯৩ সালের বাছাইপর্বে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সঙ্গে সর্বশেষ দেখায়ও বাংলাদেশকে টানতে হয়েছিল সাত গোলের বোঝা।