বিবিএন নিউজ ডেস্ক: প্রতারণার মাধ্যমে প্রিন্সেস ডায়ানার সেই বিখ্যাত প্যানারোমা সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল বলে স্বীকার করেছে ব্রিটিশ গণমাধ্যম বিবিসি।
এ নিয়ে সম্প্রতি প্রতিষ্ঠানটির তদন্ত প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুঃখ প্রকাশ করছে বিবিসি।
এ তদন্ত প্রতিবেদনের পর ডায়ানার দুই ছেলে দ্য ডিউক অব কেমব্রিজ প্রিন্স উইলিয়াম এবং দ্য ডিউক সাসেক্স প্রিন্স হ্যারি তাদের মায়ের মৃত্যুর জন্য বিবিসিকে দুষছেন।
দুই রাজপুত্রের দাবি— বিবিসির কারণে তাদের বাবা-মায়ের সম্পর্ক আরও খারাপ হয়েছিল, যা ডায়ানাকে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়।
হ্যারি বলছেন, বিষাক্ত একটি সংস্কৃতির কারণে ১৯৯৭ সালে আমার মা প্রাণ হারিয়েছেন। এ ধরনের সংস্কৃতি পৃথিবীতে এখনও ছড়িয়ে আছে।
পৃথক বার্তায় উইলিয়ামের দাবি— তার মা বাজে সাংবাদিকতার বলি হয়েছেন। বিবিসির একজন উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তা দ্বারাও প্রতারিত হন তিনি।
উইলিয়াম, হ্যারির এসব বিবৃতির পর তাদের কাছে চিঠি দিয়ে ক্ষমা চেয়েছে বিসিবি। ডায়ানার ভাই আর্ল স্পেন্সারের কাছেও ক্ষমা চেয়েছে বিবিসি।
উল্লেখ্য, ১৯৯৭ সালে এক সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান প্রিন্সেস ডায়ানা। এর দুই বছর আগে পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত ব্রিটিশ সাংবাদিক মার্টিন বশির প্যানারোমা সাক্ষাৎকারটি নেন ডায়ানার।
সাক্ষাৎকার প্রকাশের পর ওই সময় তা তুমুল আলোচনার জন্ম দেয়। কারণ বিবিসির এই সাক্ষাৎকারে প্রিন্সেস ব্রিটিশ রাজপরিবার ও তার জীবন নিয়ে প্রথমবার এমন সব কথা বলেছিলেন, যা ব্যাপক চাঞ্চল্য সৃষ্টি করেছিল।
প্রিন্স চার্লসের সঙ্গে অসুখী বিবাহিত জীবন ও তার বুলিমিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার কথা বলেন ডায়ানা।
ওই সাক্ষাৎকারে ডায়ানা তার বিখ্যাত উক্তিটি করেছিলেন, ‘এই বিয়েতে ছিলাম আমরা তিনজন।’
তবে আলোড়ন সৃষ্টি করা ওই প্রতিবেদনটি করতে প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন বিবিসির সাংবাদিক মার্টিন মরিস।
বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক তদন্ত প্রতিবেদনে এমনটিই দাবি করা হয়েছে।
তদন্তের নেতৃত্বদানকারী অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি লর্ড ডাইসন বিবিসিকে বলেন, ‘বিবিসি বস্তুনিষ্ঠতা ও স্বচ্ছতার ব্যাপারে যে উঁচু মানদণ্ড মেনে চলে, যেটি তার সাংবাদিকতার মূল স্তম্ভ, এ ক্ষেত্রে তার ব্যত্যয় ঘটেছে।’
ওই রিপোর্ট ও বিচারপতি লর্ড ডাইসনের বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে বিবিসি।
গণমাধ্যমটি বলেছে— ওই রিপোর্টে ‘স্পষ্ট ব্যর্থতার’ চিত্র বেরিয়ে এসেছে এবং আমরা এ জন্য খুবই দুঃখিত।
এ বিষয়ে ডায়ানার ভাই স্পেনসারের অভিযোগ ছিল, ভুয়া ব্যাংক স্টেটমেন্ট দেখিয়ে ডায়ানাকে ওই সাক্ষাৎকার দিতে রাজি করিয়েছিলেন বশির। ওই ভুয়া দলিলপত্রের মাধ্যমে প্রিন্সেস ডায়ানাকে বিভ্রান্ত করেছিলেন তিনি।
দলিলপত্রগুলো ভুয়া বা জাল বলেও স্বীকার করলেও এর সঙ্গে ডায়ানার সাক্ষাৎকারের কোনো সম্পৃক্ততা নেই বলে দাবি জানিয়েছেন অভিযুক্ত সাংবাদিক মার্টিন বশির।
একটি বিবৃতিকে বশির বলেন, ‘ব্যাংক স্টেটমেন্ট জাল করার জন্য দুঃখিত। তবে ডায়ানার ওই সাক্ষাৎকার নিয়ে আমি অসম্ভব গর্বিতও বটে। কারণ প্রিন্সেস ডায়ানা ব্যক্তিগতভাবে রাজি হয়েছিলেন সাক্ষাৎকার দিতে। ব্যাংকের ওই দলিলপত্রের সঙ্গে তার সিদ্ধান্তের কোনো যোগাযোগ ছিল না।’
বশিরের এমন বিবৃতিতে সহমত পোষণ করেননি বিবিসির মহাপরিচালক টিম ডেভি।
তিনি বলেন, ‘প্রিন্সেস ডায়ানা বিবিসিকে সাক্ষাৎকার দেওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী ছিলেন ঠিকই কিন্তু এটি স্পষ্ট যে, ওই সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য যে পথ বেছে নিয়েছিলেন মি. বশির, তা শ্রোতাদর্শক আমাদের কাছ থেকে যা প্রত্যাশা করে তা পূরণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। আমরা এ জন্য খুবই দুঃখিত। লর্ড ডাইসন এই ব্যর্থতা স্পষ্টভাবেই চিহ্নিত করেছেন।’
জানা গেছে, অভিযুক্ত সাংবাদিক বশির এখন আর বিবিসির সঙ্গে কাজ করছেন না। শারীরিক অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে গত সপ্তাহে বিবিসির চাকরি থেকে ইস্তফা দিয়েছেন তিনি।
৫৮ বছর বয়সি এ সাংবাদিক ২০১৬ সাল থেকে বিবিসির ধর্মবিষয়ক সংবাদদাতা ও সম্পাদক ছিলেন।
এদিকে প্রতিবেদন প্রকাশের পর দুই রাজপুত্র উইলিয়াম ও হ্যারির দাবি, ওই সাক্ষাৎকারের পর আমাদের বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়। তার পর যেভাবে মায়ের মৃত্যু হয়েছে, তাতেও সাক্ষাৎকারটির ভূমিকা রয়েছে। সূত্র: বিবিসি/জনমত