• ১৮ই নভেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৭ হিজরি

মনোনয়ন বিতর্কে উত্তাল সাতক্ষীরা-২: আব্দুল আলিমের মনোনয়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত নভেম্বর ১৮, ২০২৫
মনোনয়ন বিতর্কে উত্তাল সাতক্ষীরা-২: আব্দুল আলিমের মনোনয়নের দাবিতে সড়ক অবরোধ

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

নভেম্বরের নরম রোদে মঙ্গলবার দুপুরটা ছিল অন্যদিনের মতো স্বাভাবিকই। কিন্তু দুপুর ১২টার কিছু আগে সাতক্ষীরা শহরের মিলবাজার মোড়ে হঠাৎই জমতে শুরু করেন শত শত নেতাকর্মী। হাতে প্ল্যাকার্ড, মুখে ক্ষোভের সুর একজন নেতাকে ঘিরে দাবি ও প্রতিবাদের ঢেউ ছড়িয়ে পড়ে মুহূর্তেই। সাতক্ষীরা–২ (সাতক্ষীরা সদর-দেবহাটা) আসনে দলীয় মনোনয়ন না পাওয়া চেয়ারম্যান আব্দুল আলিমের পক্ষেই এই সমাবেশ।

 

শহরের ব্যস্ত সড়ক পেরিয়ে মিছিলটি যখন আমতলা মোড়ে পৌঁছায়, সেখানে ক্রমে বাড়তে থাকে জনসমাগম। নিত্যযাত্রীরা একপাশে দাঁড়িয়ে লক্ষ্য করেন, দেড় দশক ধরে রাজপথে থাকা এক ত্যাগী নেতার মনোনয়ন বঞ্চনার ক্ষোভ কেমন করে সড়কে উপচে পড়ছে। প্রায় এক ঘণ্টা ওই মোড়ের যান চলাচল পুরোপুরি বন্ধ থাকে।

 

বিক্ষোভকারীদের ভাষায়, আব্দুল আলিম শুধু একজন রাজনীতিক নন, দলের দুর্দিনে নেতাকর্মীদের ‘ভরসার জায়গা’। এই অঞ্চলের রাজনীতির সঙ্গে তাঁর নাম জড়িয়ে আছে প্রায় দেড় দশক। ২০০৯ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি সামনের সারিতে ছিলেন বলে দাবি করেন স্থানীয় নেতারা। কখনো রাস্তা অবরোধের মুরুব্বি, কখনো আহত কর্মীদের হাসপাতালে ছুটে যাওয়ার দায়িত্ব, কখনো সংগঠন গোছানোর নীরব শ্রম সব জায়গাতেই তাঁকে পাওয়া গেছে।

এ সময় বিক্ষোভকারিরা দাঁড়িয়ে সদর উপজেলা বিএনপির সাবেক আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট নুরুল ইসলাম বলেন,এই এলাকায় আলিম ভাইয়ের মতো ত্যাগী নেতা নেই বললেই চলে। আন্দোলন-সংগ্রামে তিনি বারবার নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সেই মানুষটিই আজ মনোনয়ন বঞ্চিত এটি আমাদের জন্য অপমান।

 

জেলা জাসাসের আহ্বায়ক জিল্লুর রহমান বলেন, “নেতাকর্মীরা যখন দলে নিরুৎসাহিত হয়ে যাচ্ছিলেন, আলিম চেয়ারম্যান তখনই সংগঠনকে ধরে রাখার কাজ করেছেন। তাকে বাদ দিয়ে বহিষ্কৃত ব্যক্তিকে মনোনয়ন দেওয়া অযৌক্তিক।

 

এদিকে বিক্ষোভকারীদের বড় অংশই এই সিদ্ধান্তে ক্ষুব্ধ। তাদের দাবি, দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে বহিষ্কৃত যে নেতাকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে, তাঁর প্রতি জনসম্পৃক্ততা বা মাঠের রাজনীতিতে নেতৃত্বের প্রভাব নেই। এ কারণে তাঁকে মনোনয়ন দেওয়ার সিদ্ধান্ত মেনে নেওয়া কঠিন।

 

নুরে আলম সিদ্দিকি বলেন, একজন ত্যাগী নেতার জায়গায় বহিষ্কৃত কাউকে মনোনয়ন দিয়ে দলের মধ্যে বিভক্তি তৈরি হবে। আমরা কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি এই সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করা হোক।

 

প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আমতলা মোড়ে সড়ক অবরোধের ফলে বাস, অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলসহ সব ধরনের যানবাহন আটকে যায়। যাত্রীরা অসুবিধায় পড়লেও বিক্ষোভকারীদের আবেগ ও স্লোগানে পরিবেশ উত্তপ্ত ছিল। মিছিলের মেগাফোনে বারবার উচ্চারিত হচ্ছিল, মনোনয়ন চাই, ত্যাগী নেতার প্রাপ্য সম্মান চাই!

 

বিক্ষোভকারীরা জানিয়েছেন, প্রয়োজন হলে রাজধানীতেও কর্মসূচি দেবেন। দলীয় সিদ্ধান্তের প্রতি সম্মান রেখেই তাঁরা আন্দোলন করছেন, তবে ‘ন্যায়বোধের জায়গা থেকে’ সিদ্ধান্ত সংশোধনের দাবি জানান।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন প্রভাষক আনারুল ইসলাম, জেলা কৃষক দলের যুগ্ম আহ্বায়ক কাজী আহসান হাবিবসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতারা।

সাতক্ষীরা-২ আসনে মনোনয়ন ঘিরে রাজনীতির তাপমাত্রা এখন চরমে। ত্যাগী নেতার দাবিতে রাজপথে নামা কর্মীদের ভাষায়, “লড়াইটা শুধু মনোনয়ন নয় ত্যাগ, যোগ্যতা আর সম্মানের। কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা না হলে এই আন্দোলন আরও বিস্তৃত হতে পারে বলেই মনে করছেন স্থানীয় রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকেরা।