• ১৩ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

গোনাহের গহ্বর থেকে নাজাতের আলোকপথ- টিএ সুলেমান

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুলাই ১২, ২০২৫
গোনাহের গহ্বর থেকে নাজাতের আলোকপথ- টিএ সুলেমান

মানুষ আশরাফুল মাখলুকাত। অথচ সেই মহামূল্যবান সৃষ্টি পাপের নীল বিষে বিষণ্ণ হয়ে উঠে মাঝে মাঝে। একজন মুসলমান, যিনি সিজদাহে মাথা রাখেন, যিনি কালিমার ওজনে হৃদয় ভারাক্রান্ত রাখেন, তিনিও কখনো কখনো নফসের হাতছানিতে, শয়তানের কুটিল কুহকে, কিংবা দুনিয়ার চমকদার মোহে পড়ে গোনাহের গহ্বরে নিমজ্জিত হয়ে পড়েন। এমন এক মুসলমান যখন দীর্ঘকাল ধরে পাপের সরণিতে হেঁটে ক্লান্ত হয়ে পড়েন, তখন তাঁর হৃদয়ে জাগে ফিরে আসার এক অনুচ্চারিত আকুলতা। এই ফিরে আসার আকাঙ্ক্ষাই তাঁর নাজাতের প্রথম সোপান।

কেন ফিরে আসা জরুরি—
কারণ, পাপ হলো এক বিষাক্ত শৃঙ্খল—যা আত্মাকে বন্ধন দেয় চেতনার কালো ছায়ায় ফেলে। গোনাহ কেবল পার্থিব অস্থিরতা ডেকে আনে না, আখিরাতের ভয়াল পরিণতিও বয়ে আনে। যে হৃদয় একসময় আল্লাহর জিকিরে উজ্জ্বল ছিল, গোনাহে সে হৃদয় হয়ে পড়ে নিস্তব্ধ—ধূসর, মৃতপ্রায়। পাপের ভারে মানুষের ভেতরের ‘ইমানি আলো’ নিভে যেতে চায়, চোখে দেখা দেয় চিরস্থায়ী পথহারা অন্ধকার।
আরো গুরুত্বপূর্ণ হলো—আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা স্বয়ং বলেন:

“হে আমার বান্দাগণ, যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয়ই আল্লাহ সকল গোনাহ মাফ করে দেন।”(সূরা আয-যুমার, ৩৯:৫৩)

এই আয়াত সেই সকল ক্লান্ত-প্রাণ মুসলমানের জন্য এক আলোকময় আহ্বান— যারা নিজেকে গোনাহে নিমজ্জিত করে চিরতরে নিঃস্ব ও পরিত্যক্ত ভাবতে শুরু করেছে। আল্লাহর দরজা কখনো বন্ধ নয়। প্রত্যাবর্তনের পথ সবসময় উন্মুক্ত, শুধু চাই অন্তরের অনুশোচনায় অশ্রুসিক্ত এক মোনাজাত।

কীভাবে ফিরে আসা যাবে?
প্রথমত, প্রয়োজন সত্যিকারের তাওবা—যেখানে অনুতাপ হবে হৃদয়ের অন্তস্তলে, গোপনে, গভীরভাবে। তাওবা মানে কেবল ‘ক্ষমা চাই’ নয়; বরং গোনাহের জন্য দুঃখবোধ করা, সেই কর্ম ছেড়ে দেওয়া, এবং দৃঢ় সংকল্প করা যে ভবিষ্যতে আর সে পথে ফিরবে না।

দ্বিতীয়ত, নিজেকে ডুবিয়ে দিতে হবে ইবাদতের প্রশান্ত ধারায়। নামাজ, কুরআন তিলাওয়াত, জিকির—এইসব ইবাদাত আত্মাকে পরিশুদ্ধ করে, পাপের কলুষতা ধুয়ে দেয়।

তৃতীয়ত, বিচ্ছিন্ন হতে হবে সেইসব সঙ্গ-পরিবেশ থেকে, যা পাপের দিকে আহ্বান জানায়। কারণ, যেমন পানি পাত্রে রাখা হলে তা পানযোগ্য থাকে, তেমনি পবিত্র মনোভাবও থাকে পবিত্র পরিবেশে।

চতুর্থত, আল্লাহর ভালোবাসা অর্জনের জন্য কাজ করা—একমাত্র এ ভালোবাসাই একজন মানুষকে এমন উচ্চতায় পৌঁছায়, যেখানে পাপ লজ্জাকর হয়ে ওঠে, অপছন্দনীয় হয়ে পড়ে।

পরিশেষে—
এক মুসলমান, যিনি পাপ করতে করতে ক্লান্ত, তিনি জানেন—এই ক্লান্তি নিছক দৈহিক ক্লান্তি নয়, বরং তা রূহানী জাগরণের পূর্বাভাস। যেদিন তাঁর চোখে অনুশোচনার অশ্রু নেমে আসে, সেদিনই তাঁর জীবনে নেমে আসে রহমতের সুবহে সাদিক। ফিরে আসা মানে শুধু নিজেকে সংশোধন নয়, বরং রবের দিকে প্রত্যাবর্তন—যার সাথে বিচ্ছেদ ছিল আত্মার সকল কষ্টের মূল।
গোনাহের গহ্বর যতই গভীর হোক, আল্লাহর করুণা তার চেয়ে গভীরতর। তাই এসো, পাপের পথচলা থামিয়ে আমরা আল্লাহর দিকে ফিরি। হৃদয়ের অলিন্দে উচ্চারিত হোক—
“ইয়া রব্বি! আমি ক্লান্ত, আমি ফিরে এসেছি—তোমার করুণার আশ্রয়ে।”