ডেস্ক নিউজঃ
ছাতকের হাওরে-হাওরে বোরো ধান কাটার এখন উৎসব চলছে। উপজেলার সকল বিল- হাওর এলাকায় বোরো ধান কাটা,মাড়াই-ঝাড়াই ও ধান শুকানোতে মেতে উঠছেন কৃষক কিষাণীরা। এখানের সকল বিল-হাওর এখন পাকা সোনালী বোরো ফসলে ভরপুর। উপজেলা কৃষি বিভাগের মতে চলতি মৌসুমে বোরো ধানের ফলন ভালো হয়েছে। উপজেলার নাইন্দার হাওর,ফাটার হাওর,বাড়ুকা হাওর,চাতলা হাওর সহ
বড়-বড় হাওরে বোরোর বাম্পার ফলন হয়েছে বলে হাওর
পাড়ের মনির উদ্দিন, ইব্রাহিম আলী,পীর ছায়াদুর রহমান, আজাদ মিয়া,জাকির হোসেন,আব্দুল কুদ্দুস,কামাল উদ্দিন সহ কৃষকরা জানিয়েছেন। এ পর্যন্ত বন্যা ও প্রবল বৃষ্টি না থাকায় পাকা বোরো ধান কাটা,মাড়াই-ঝাড়াই ও ধান শুকানোতে সুবিধা পেয়েছেন কৃষকরা।
কয়েক বছর ধরে এখানে কৃষি বিভাগের উদ্যোগে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে জমিতে আগাম জাতের বোরো ধান চাষাবাদ হওয়ায় ফলে কিছু-কিছু এলাকার পাকা ধান আগে-ভাগেই কাটা শুরু হয়।গত ১০ দিন ধরে এখানে পুরোদমে বোরো ধান কাটা শুরু হয়েছে। কৃষক-কিষাণীরা ধান কাটা,মাড়াই-ঝাড়াই নিয়ে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন। উপজেলার সকল বিল হাওরের অর্ধেক বোরো ফসল কাটা শেষ হয়ে গেছে। বন্যার
আশংকায় অতি দ্রুত ফসল কেটে নিতে কৃষকদের সরকারি ভাবে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। দ্রুত ফসল কাটায় কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো তরিকুল ইসলাম ও কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান ফসলের মাঠে প্রায়ই
কৃষকদের সাথে বোরোধান কাটতে দেখা গেছে। ছাতকের
বিভিন্ন হাওরে এলাকায় ধান কাটার ব্যবহৃত হচ্ছে ৪৩ টি কম্বাইন্ড হারভেষ্টার মেশিন। তবে সনাতন পদ্ধতিতে কাস্তে দিয়ে বোরোধান বেশি কাটা হচ্ছে। ধান মাড়াইয়ে আগে গরু ব্যবহার করা হলেও এখন সকল এলাকায় ধান মাড়াই মেশিন দিয়ে ধান মাড়াই করছেন কৃষকরা। গরুদিয়ে ধান মাড়াইয়ের
দৃশ্য এখন এখানে আর নেই। খলায় ধান টানার কাজে গরু
ও মহিষের গাড়ি অনেক হাওরে কৃষকরা ব্যবহার করছেন।
পর্যাপ্ত শ্রমিক না থাকলেও আধুনিক পদ্ধতির কারণে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে মেশিন ব্যবহার করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা তৌফিক হোসেন খান জানান, ৮ থেকে ১০ দিনের মধ্যে ছাতকে বোরো ধান কাটা শেষ হয়ে
যাবে। এ বছর বোরোধানের ফলন ভালো হয়েছে জানিয়ে
তিনি বলেন দ্রুত ফসল কেটে গোলায় তুলে নিতে কৃষকদের
তাগিদ দেয়া হচ্ছে।
কৃষি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী ছাতক উপজেলায় ছোট-বড় বিল-হাওর রয়েছে ৬৩ টি। চলতি বোরো মৌসুমে এখানে বোরো চাষাবাদ হয়েছে ১৪ হাজার ৯শ’ ১০ হেক্টর জমিতে। এর মধ্যে উফশী জাতের ১০ হাজার ৭০০ হেক্টর, হাইব্রিড জাতের ধান ২ হাজার ১০ হেক্টর ও স্থানীয় জাতের বোরো ধান ২ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে চাষাবাদ করা হয়েছে। সরজমিন হাওরে গিয়ে দেখা গেছে, বোরো ধান কাটার যেন এক মনোরম দৃশ্য। হাওরে বোরো ধান কাটা ও মাড়াই-ঝাড়াই নিয়ে ব্যস্ত কৃষকরা। পাশাপাশি কিষাণীরা ধান ঝাড়াই করে শুকিয়ে গোলায় তুলতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছেন। হাওরে ধানের খলায় কাজ করছেন কৃষক-শ্রমিক,নারী ও শিশুরা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো.তরিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার নাইন্দার হাওর, ফাটার হাওর,বাড়ুকা হাওর সহ বড়-বড় হাওরগুলোর পাকা বোরো ধান প্রায় অর্ধেক কাটা শেষ হয়েছে। দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষকদের আগে থেকেই পরামর্শ দেয়া হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে কৃষকরা বোরো ধান গোলায় তুলে নিতে পারবে বলে তিনি আশাবাদী।