সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
আবহাওয়া ভাল থাকায় সুনামগঞ্জ জেলার হাওরের বোরো ধান কাটা, মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পাড় করছেন সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার কৃষকরা। ইতিমধ্যেই ৫১ শতাংশ ধান কর্তন সম্পন্ন হয়েছে।আরও এক সপ্তাহ আবহাওয়ার অবস্হা অপরিবর্তিত থাকলে ৮৫ শতাংশ ধান কর্তন সম্ভব এমন দাবী কৃষি বিভাগের।
জেলার ১২ উপজেলার বেশির ভাগ মানুষই এখন হাওরে ধান কাটা মাড়াইয়ে ব্যস্ত। পৌঁনে চার লাখ কৃষক পরিবারের কর্তা ব্যক্তি থেকে শুরু করে স্কুল শিক্ষার্থী, নারী , শিশুরাও ভোর থেকে সন্ধ্যা অবধি আছেন ধানের খলায়। পহেলা বৈশাখ থেকে রবিবার পর্যন্ত আবহাওয়া এতোটাই অনুকূলে ছিল যে, ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ধান কাটা মাড়াইয়ের কাজে ছিলেন লাখো মানুষ। জেলা প্রশাসন, কৃষি বিভাগ ও পানি উন্নয়ন বোর্ড আবহাওয়ার বরাত দিয়ে জানিয়েছিলেন ১৮ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনার কথা কিন্ত আবহাওয়ার অবস্থা অনুকূলেই ছিল। ফলে কৃষকেরা নির্বিঘ্নে প্রায় অর্ধেক ধান কর্তন করে ফেলেছেন।
তবে আগামী ২৬ এপ্রিল থেকে উজানে (ভারতের মেঘালয়- চেরাপুঞ্জিতে) বৃষ্টি হতে পারে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিধেরা। তাদের পরামর্শ এর আগেই নীচু এলাকার ধান কেটে ফেললে ভালো হয়।
সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ শাহ্ মো সজীব হোসেন জানিয়েছেন, আগামী তিন চারদিন আবহাওয়া একই ধরণের থাকবে। তিনি জানালেন, আবহাওয়ার অবস্থা পরিবর্তনশীল। তবে আগামী চার-পাঁচ দিন ভয়ের বা উৎকণ্ঠার কিছু দেখছি না।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের সাবেক আবহাওয়াবিদ বর্তমানে বেসরকারি সংগঠনে কর্মরত আবু সাঈদ চৌধুরী জানিয়েছেন, ২২ তারিখ অর্থাৎ মঙ্গলবার সুনামগঞ্জে বৃষ্টি হবে, কিছু বৃষ্টিপাত হয়েছে ও ।এরপর থেকে ক্রমান্বয়ে বৃষ্টি কিছুটা বাড়তে পারে। ২৬ এপ্রিল থেকে সুনামগঞ্জের উজানে অর্থাৎ ভারতের মেঘালয় চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টি হবে।
সুনামগঞ্জ জেলার সদর উপজেলার মোল্লা পাড়া ইউনিয়নের দেখার হাওরের কৃষক মঙ্গল মিয়া, ইসলাম উদ্দিন জানান, হার্ভেষ্টার মেশিন থাকায় ধান দ্রুত কর্তন করা হচ্ছে। আমাদের হাওরে অর্থাত ইছাগরি বাজারের দক্ষিণ পাশের হাওর বৈশা, পাও ধোয়া, রৌয়া সহ এখানে একটি মাত্র হার্ভেষ্টার মেশিন যদি আরও দু একটা থাকতো তাহলে ধান কাটা আরও দ্রুত হত।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মোস্তফা ইকবাল আজাদ বললেন, জেলার হাওর ও নন হাওর মিলিয়ে এবার ২ লাখ ২৩ হাজার ৪১০ হেক্টর জমিতে বোরো ধান আবাদ করা হয়েছে। ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৪ লক্ষ মেট্রিক টন। টাকার অংকে ৫ হাজার কোটি টাকা। তিনি আরও জানান ২২ এপ্রিল পর্যন্ত সুনামগঞ্জ জেলার হাওরের ধান ৫১ শতাংশ কর্তন হয়েছে। যদি আবহাওয়া আগামী এক সপ্তাহ অনুকূলে থাকে তাহলে ৮৫ শতাংশ ধান কর্তন করা সম্ভব।
পানি উন্নয়ন বোর্ড সুত্র জানায়,এ বছর সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার, ৫০টি হাওরের ৬৮৭টি প্রকল্পের মাধ্যমে ৫৯৬ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণের জন্য ১২৭ কোটি টাকার বরাদ্দ দিয়েছে সরকার।
সুনামগঞ্জ জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে প্রাপ্ত তথ্য মতে, সরকার সারা দেশে আগামী ২৪ এপ্রিল থেকে ধান চাল সংগ্রহ অভিযান শুরু করবে। সুনামগঞ্জ জেলায় এবার ১৪ হাজার মেট্রিক টন ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে। ৩৬ টাকা কেজি ধরে ১৪৪০টাকা মন ধরে ধান কেনার সিদ্ধান্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান, সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার হাওরের বোরো ফসল কর্তন করে কৃষকের গোলায় তোলার জন্য সব কিছুই করা হচ্ছে। ধান কর্তন করার জন্য পর্যাপ্ত শ্রমিক, হার্ভেষ্টার মেশিন, রিপার মেশিন রয়েছে।