• ৫ই মার্চ, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রমজান, ১৪৪৬ হিজরি

সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জল মহালের মাছ লুটপাটের মহোৎসব ।

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মার্চ ৫, ২০২৫
সুনামগঞ্জের বিভিন্ন জল মহালের মাছ লুটপাটের মহোৎসব ।

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:

শাল্লা উপজেলার আটগাঁও ইউনিয়নের সতুয়ানদীর মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছে উচ্ছৃঙ্খল জনতা। মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে হাজারো উচ্ছৃঙ্খল লোক সতুয়ানদী নামক বিল থেকে পলো, কুচ ও ছোট ছোট ত্রিকোণ আকৃতির জালি দিয়ে মাছ ধরে নিয়ে গেছে। বাঁধা দিতে গেলে উচ্ছৃঙ্খল জনতা আটগাঁও গ্রামের এক টমটম চালক রনি মিয়ার বাড়িঘরে ভাঙচুর করে। এ সময় তার টমটম ও তার ভাইয়ের একটি মোটরসাইকেলেও ভাঙচুর করা হয়েছে। স্থানীয়রা জানান, এসব উচ্ছৃঙ্খল জনতার সামনে কেউ দাঁড়াতেই সাহস পায়না। ফলে এভাবেই চলছে একের পর এক জলমহাল লুটপাট। শুরুটা হয় ১ মার্চ দিরাই উপজেলার চরনারচর ইউপির কামান বিল থেকে। সেখানে লুটপাট হয় কামান বিলের মাছ। পরেরদিন ২মার্চ একই উপজেলার মেঘনা বারঘর লাইলাদিঘার উদীর হাওর। এরপর হাতনীবিল। একইদিনে শাল্লা উপজেলার জোয়ারিয়াবিল ও ৪মার্চ উভয় উপজেলার সীমানায় অবস্থিত সতুয়ানদীতে মাছ লুটপাটের ঘটনা ঘটে। ঐতিহ্যবাহী এসব জলমহালে বৃহৎ আকৃতির মিঠাপানির রুই, কাতলা, বোয়াল, চিতলসহ নানা জাতের মাছ থাকে। জানা যায়, কামান বিলটি ইজারা নেয় চরনারচর বিএম মৎস্যজীবী সমবায় গ্রুপ সমিতি লিমিটেড। তবে এর পেছনে রয়েছেন দিরাই উপজেলা আ.লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মোশাররফ মিয়া, আ.লীগ নেতা জয়কুমার বৈষ্ণব ও হাফিজুর রহমান তালুকদারসহ আরও অনেকে। অন্যদিকে হাতনীবিল জয়পুর মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে থাকলেও তথ্যসূত্রে জানা গেছে এর অংশীদার রয়েছে দিরাই উপজেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক প্রদীপ রায়, সভাপতি কামাল উদ্দিন তালুকদারসহ আরও বেশ ক’জন। এদিকে শাল্লা উপজেলায়ও এরপূর্বে আরও ছোটখাটো দু’একটি বিলে এমন ঘটনা ঘটেছে। এসব বিল মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে থাকলেও নেপথ্যে ছিল উপজেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক আল আমিন চৌধুরীর অংশীদারিত্ব। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জলমহালের সাথে যুক্ত দিরাই উপজেলার বাসিন্দা এক ব্যক্তি বলেন, ১মার্চ থেকে উন্নয়ন স্কিমের এসব জলমহালে থেকে কোটি কোটি টাকার মাছ লুটপাট করে নিয়ে গেছে একটি কুচক্রী মহলের ইন্ধনে। তিনি উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের কর্মকা- চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জলমহাল নিয়ে ইজারাদারদের আর আগ্রহ থাকবে না। ফলে সরকার কোটি কোটি টাকার রাজস্ব হারাবে। দিরাই উপজেলার জয়পুর হাতনীবিল মৎস্য সমবায় সমিতির সাধারণ স¤পাদক বিকাশ রঞ্জন দাস বলেন, আমার হাতনীবিল লুটপাট করা হয়েছে। আমরা সরকারকে প্রতি বছর প্রায় কোটি টাকা রাজস্ব দেই। হাতনীবিল থেকে কোটি টাকার মাছ লুট করা হয়েছে। তবে প্রশাসনের লোকজন এসে এ বিষয়ে লিখে নিয়ে গেছে। শাল্লা সদর সংলগ্ন ডুমরা গ্রামের বাসিন্দা বাদল চন্দ্র দাস বলেন, জোয়ারিয়াবিলে অর্ধেক শেয়ার আমার। গত দুদিনে তার ৫০লাখ টাকার মাছ ও বিলে থাকা বাঁশ ট্রলি দিয়ে নিয়ে গেছে। এনিয়ে মামলা করবেন বলে জানান তিনি। এটি হিলিফ মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির নামে রয়েছে। তবে এটির অংশীদার ছিল সাবেক উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান অরিন্দম চৌধুরী অপুসহ আরও ক’জন। তবে বাদল চন্দ্র দাসের দাবি তারা স্ট্যা¤প করে শেয়ার হস্তান্তর করে গেছেন। এভাবে জলমহাল লুটপাটের ঘটনায় পুলিশের নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ তুলে অনেকই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সমালোচনা করছেন। জলমহাল লুটপাটের বিষয়টি ভাল চোখে দেখছেন না উভয় উপজেলার সচেতন মানুষও। এ বিষয়ে দিরাই থানার ওসি আব্দুর রাজ্জাক বলেন, এনিয়ে আমাদের কাছে কেউ অভিযোগ করেননি। তবুও আমরা জলমহালকে লুটপাটের হাত থেকে রক্ষা করতে পুলিশ পাঠিয়েছি। কিন্তু ১৫ হাজার মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করা কয়েকজন পুলিশের পক্ষে সম্ভব ছিল না বলে জানান তিনি। এনিয়ে জানতে চাইলে শাল্লা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পিয়াস চন্দ্র দাস বলেন, জলমহাল লুটপাটের ঘটনার খবর পেয়ে আমি পুলিশ পাঠিয়েছি। পাশাপাশি সাধারণ মানুষকে সচেতন করছি। ভবিষ্যতে যাতে এধরণের ঘটনা থেকে বিরত থাকেন তারা।