সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডাঃ শফিকুর রহমান বলেছেন, যারা মানুষ হত্যা করেছে তাদের বিচার এ দেশে নিশ্চিত করতে হবে। যারা গণ হত্যার জন্য দায়ী তাদের বিচার চাই। প্রতিশোধ নয় বিচারের ধারা সৃষ্টি করতে হবে। মানুষ কে তারা মানুষই মনে করেনি। অনেককেই আয়না ঘরে বন্দি করে অবর্ণনীয় নির্যাতন করা হয়েছে।অনেক কে গুম করা হয়েছে, এখনও অনেকেই গুম আছেন।
শনিবার দুপুরে সুনামগঞ্জ সরকারী জুবিলী উচ্চ বিদ্যালয়ের মাঠে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী আয়োজিত
কর্মী সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে জামায়াতের আমীর ডা.শফিকুল রহমান আরও বলেন, আমি সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জে ডাক্তার হিসেবে কাজ করেছি। সুনামগঞ্জের সাথে আমার অনেক স্মৃতি জড়িত রয়েছে।
বর্তমানে আয়তনের দিক থেকে অনেক বড় সুনামগঞ্জ। মাছের অভয়আশ্রম সহ প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্ত এর সুষ্ঠ ব্যবহার হচ্ছে না। আমাদের দেশের প্রায় ৭৮ শতাংশ মানুষ যে কোনও ভাবে কৃষির সাথে জড়িত।কৃষকদের চিন্তা করতে হবে।
জামায়াতের আমির ডা.শফিকর রহমান আরও বলেন, আমাদের পেট বন্ধক দিয়েছি অন্য দেশে। মাথাও বন্ধক দিয়েছি কি না আল্লাহ জানেন। দেশের মেধাবীরা দেশ থেকে পড়াশোনার জন্য গেলে আর ফিরে। কিন্তু দু থেকে আড়াইশ বছর আগেও আমাদের দেশের উপর মোগলরা বৃটিশরা পতূগীজরা ঝাপিয়ে পড়তও ভাগ্য গড়ার জন্য। কিন্তু এখন উল্টো রথ কেন। আমাদের দেশের মানুষ কাজের জন্য নিজেদের ভাগ্য গড়ার জন্য বিদেশ যাচ্ছেন।
আমাদের দেশের নেতারা বলে দেশের চেয়ে দল বড়। কিন্তু না আমরা দেখি দলের চেয়ে ব্যক্তি বড়।
ধোঁকাবাজির রাজনীতি যারা করবে তাদের মাধ্যমে দেশের আমূল পরিবর্তন সম্ভব নয়।
সুপ্রিম কোর্টের একজন বিচারককে কি আপনারা দেখেছেন কলা পাতায় ঘুমিয়েছেন। এটা তার পরিণতি। তিনি ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়ে ক্ষমতার অপ ব্যবহার করেছেন।
জামায়াতের আমির আওয়ামী লীগকে ইঙ্গিত করে বলেন, অনেকেই আমাদেরকে পাসপোর্ট ভিসা টিকেট ছাড়াই অমুক দেশে তুমুক দেশে পাঠিয়ে দিতেন। কিন্তু তারাই এখন পালিয়ে গেলও পাসপোর্ট ভিসা ছাড়া।
দুনিয়ার জেলকে আমরা পরোয়া করি না। আমাদের মাথার তাজ পাঁচ জন নেতাকে একে একে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। কিন্তু এই ফাঁসির দড়ি তাদের কাছে জুতার ফিতার মতও। ফাঁসির আদেশ হওয়ার পর তারা বলতেন আলহামদুলিল্লাহ। ফাঁসির দিন সন্ধায় পরিবারের লোকজন দেখা করতেন। তখন পরিবারের লোকজনদেরকল সান্ত্বনা দিতেন তারা। সব কিছু সম্পন্ন হওয়ার পর তারা দুই রাকাত নামাজ আদায় করতেন। তারা স্বেচ্ছায় ফাঁসির তকতায় গিয়ে দাড়াতেন। তারা দুনিয়ার কোনও অপশক্তির কাছে আপস করেন নি। তারা আল্লাহর দরবারে আত্বহুতি দিয়েছেন।
জুলাই আগস্টের বিপ্লবের প্রসঙ্গটেনে জামায়াতের আমির আরও বলেন, গণ হত্যার বিচার হতে হবে। নির্বাচন প্রয়োজনে আরও পরে দেয়া হোক।
ডা.শফিকুর রহমান নিজের দলের নেতাকর্মীর সম্পর্কে বলেন, আমাদের নেতাকর্মীরা কোনও জল মহাল বালু মহাল কোনও কিছুতেই ঝাপিয়ে পড়ছে না। আমাদের নেতাকর্মীরা চাঁদাবাজির সাথে জড়িত না। আমাদের নেতারা মামলা বাণিজ্যর সাথে জড়িত না। কেউ যদি অপরাধ করে তাকে আইনের আওতায় নিয়ে আসুন।
কিন্তু নিরীহ মানুষ কাউকে হয়রানি করা যাবে না। আমাদের নেতাকর্মীরা ৫ আগস্টের পর থেকে টানা ১৫ দিন স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে পাহাড়া দেয়ার জন্য। সকল ধর্মের মানুষের জন্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি। গত জালেম সরকার ১০ হাজার রাজাকারের তালিকা তৈরি করেছে। সেই তালিকায় ৮০ ভাগ লোকই আওয়ামী লীগের।
আমরা যদি ক্ষমতায় যেতে পারি তা হলে আমরা শিক্ষায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিবও শিক্ষায়। আমরা যে আধুনিক শিক্ষার ব্যবস্হা গড়ে তুলবও সে শিক্ষা হবে কর্মমুখি শিক্ষা। একজন পড়াশোনা শেষ করার সাথে সাথে ঐ শিক্ষা সংশ্লিষ্ট সাটিফিকেট তুলে দেয়া হবে।
আমরা চাই আমাদের বেশি বেশি সমালোচনা করুন। সমালোচনা করলে আমাদের কাজের গতি আরও বাড়বে। আমরা যদি ভাল কাজ করতে পারি না তা হলে আমাদেরকে ছেড়ে যাবেন। যারা সমালোচনা করেন তারা আমাদের বন্ধু।
আমরা জনগণের সমথর্ন নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারলে সুনামগঞ্জকে উন্নয়নের গতিতে এগিয়ে নিয়ে আসা হবে। যদি আমরা ক্ষমতায় যেতে না পারি তা হলে দাবি আদায়ের জন্য আপনাদের সাথে আন্দোলন করে দাবি আদায় করবও উন্নয়নের জন্য।
সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের আমীর মাওলানা তোফায়েল আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল অ্যাডভোকেট এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, জামায়াতে ইসলামীর ঢাকা মহানগর উত্তরের আমীর মুহাম্মদ সেলিম উদ্দিন, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট মহানগর উত্তরের আমীর ফখরুল ইসলাম, জামায়াতে ইসলামীর সিলেট জেলা শাখার আমীর মাওলানা হাবিবুর রহমান, কেন্দ্রীয় ছাত্র শিবিরের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাভোকেট মোহাম্মদ শিশির মনির, সুনামগঞ্জ জেলা জামায়াতের নায়েবে আমীর অ্যাভোকোট শামসউদ্দিন প্রমুখ।