সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলায় এক যোগে ১৫ ডিসেম্বর ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই কাজ শেষ করার বাধ্য বাধ্যকতা রয়েছে। ফলে কৃষকদের মাঝে চরম উদ্বেগ ও হতাশা দেখা দিয়েছে এই ভেবে যে সঠিক সময়ে কাজ শেষ হবে কি না। সময় মতো কাজ শুরু না করলে আগাম বন্যা ও পাহাড়ী ঢলে সোনার ফসল তলিয়ে যাবার আশঙ্কা থেকেই যায়।
প্রসঙ্গত: সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলায় বোরো ফসলের সুরক্ষায় ২০২৪ -২০২৫ অর্থ বছরে জেলার ৫৩টি হাওরে ৫৮৮ কিলোমিটার ফসলরক্ষা বেঁড়িবাঁধ নির্মাণ করার লক্ষ্যে ইতিমধ্যেই প্রকল্প তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। অবশ্য অনেক উপজেলার কাজ শুরু হয়েছে। আবার কোন কোন উপজেলার পিআইসি গঠন হলেও কার্যাদেশ দেয়া হয়নি । এ জন্য কাজ ও শুরু হয়নি। আবার কোন কোন জায়গাতে হাওরের পানি এখনও না নামার কারণে কাজ শুরুই হয়নি। ফলে কৃষকদের মাঝে অজানা এক আশংকা থেকেই যাচ্ছে।
এবার বরাদ্দ ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি টাকা। চলতি অর্থ বছরের ১৫ ডিসেম্বর ২০২৪ থেকে আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫ এর মধ্যে বাঁধ নির্মাণ কাজ শেষ করার বাধ্যবাদকতা দেয়া হয়েছে। এদিকে নির্ধারিত ১৫ ডিসেম্বর জেলাব্যাপী বাঁধ নির্মাণ কাজের নাটকীয় উদ্বোধনের অভিযোগ উঠেছে পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের বিরুদ্ধে। উদ্বোধনের খবর জেলা কমিটির অনেককেই অবহিত করা হয়নি।
ফলে বিগত সরকারের মতো এবারও বাঁধের কাজের অনিয়ম দুর্নীতির শঙ্কায় রয়েছেন হাওরে কৃষকরা। এদিকে বাঁধের কাজে বিলম্বিত হওয়ায় উদ্বেগ জানিয়েছে হাওর ও কৃষকের সংগঠন হাওর বাঁচাও আন্দোলন। সংগঠনের কেন্দ্রিয় সাধারন সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন সময় মতো কাজ শুরু না হলে আগাম বন্যা সহ নানা প্রাকৃতিক দূর্যোগের শংকা থাকে। তিনি দ্রুত কাজ শুরু করে নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই কাজ শেষ করার আহবান জানিয়েছেন।
,
হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল হক মিলন বলেন,
আমরা স্পষ্টভাবে বলে দিতে চাই এবারও যদি নির্ধারিত সময়ের আগে বাঁধের কাজ শেষ না করা হয় আর এতে কৃষকের ফসল ঝুঁকিতে থাকে তাহলে কৃষকদের সাথে নিয়ে আন্দোলনের ডাক দেয়া হবে। আমরা দাবি করবো সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এখনই সতর্ক হবেন।
জেলা কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন কমিটির সদস্য সালেহীন চৌধুরী শুভ জানান, ১৫ ডিসেম্বর বাঁধের কাজ আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলেও এখন ও অনেক জায়গাতেই কাজ শুরু হয়নি। ৫/৬ জানুয়ারির দিকে পিআইসির কমিটি গঠন কার্যক্রম সম্পন্ন হয়েছে, আবার অনেক জায়গাতেই কার্যাদেশ দেয়া হয়নি। বাঁধের পাশে যে সাইনবোর্ড লাগানোর কথা তা এখনও সব খানে লাগানো হয়নি। সুনামগঞ্জ শহরের সাইনবোর্ড তৈরির দোকানে এখনও শোভা পাচ্চে। তিনি দাবী করেন এখন পর্যন্ত ৩৩/৩৪ শতাংশ কাজ হয়েছে। দ্রুত গতিতে কাজ শেষ না করলে বিপদের আশঙ্কার কথা ও জানান শুভ।
শান্তিগঞ্জ উপজেলার কৃষকদের অভিযোগ সাইনবোর্ড এর জন্য আলাদা করে টাকা নেয়া হচ্ছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী ও জেলা কাবিটা কমিটির সদস্য সচিব মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন, হাওর থেকে পানি না নামায় কাজ শুরু করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হয়েছে। ১৫ ডিসেম্বর জেলার প্রতি উপজেলায় বাঁধের কাজ উদ্বোধন হয়েছে,পানি সরলে পুরোদস্তর কাজ হবে। তিনি জানান মোট ৬৭৫ টি বাঁধের মধ্যে আনুমানিক তিনশো বাঁধের কাজ শুরু হয়েছে। বাকী গুলোও দ্রুত শুরু হবে। দুয়েকটি উপজেলার সমস্যার কথাও জানান তিনি।
জেলা কাবিটা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক ডঃ মোহাম্মদ ইলিয়াস মিয়া জানান সব জায়গাতেই কাজ শুরু করা হয়েছে। এ পর্যন্ত ফিফটি পার্সেন্ট কাজ হয়েছে বাকী গুলো পানি নামলে শুরু হবে।
প্রসঙ্গত: সুনামগঞ্জ জেলার ১২ উপজেলার মোট ৬৭৫টি পিআইসির বিপরীতে ৫৮৮ কিলোমিটার বাঁধ নির্মাণ কাজের জন্য এবার ব্যয় ধরা হয়েছে ১২৫ কোটি ১৯ লক্ষ ৪২ হাজার টাকা। এর মধ্যে ক্লোজার বা বড় ভাঙ্গন রয়েছে ১০৫ টি।