সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:
প্রতি বছরই শীত মৌসুমে সুনামগঞ্জ জেলার রামসার সাইট খ্যাত টাঙ্গুয়ার হাওরে ঝাঁকে ঝাঁকে বিভিন্ন প্রজাতির পাখি আসে। এদের অতিথি পাখি বলা হয়। কারণ সুদূর সাইবেরিয়া থেকে প্রচন্ড শীতের কারণে হাজার হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে বিভিন্ন দেশে যায়। সুনামগঞ্জ জেলার টাঙ্গুয়ার হাওর সহ অন্যান্য হাওর, বিলে ও পাখির আগমন ঘটে। আবার শীতের শেষে ঠিকই চলে যায় নিজ গন্তব্যে। কিন্ত সাম্প্রতিক বছর গুলোতে পাখি আগের মত আসছে না। কারন পাখির অভয়াশ্রম নষ্ট হয়ে গেছে। ইদানিংকালে পর্যটকদের হাউস বোট সহ শত শত ইঞ্জিন চালিত নৌকা এবং হাজার হাজার পর্যটকদের উৎপাতসহ নানা কারণেই পাখি কম আসে এমনটাই জানিয়েছেন হাওর পাড়ের লোকজন। টাঙ্গুয়ার হাওরে দুই শতাধিক প্রজাতির পাখির সন্ধান পাখি বিশেষজ্ঞ গণ পেয়েছিলেন। কিন্ত দিন দিন তা কমছে। সরালি ,লেঞ্জাহাঁস, বালী হাঁস, মৌভভী, পানকৌড়ি, সহ অনেক প্রজাতির পাখি ছিল।
স্থানীয়রা আরও জানান, প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে এক শ্রেণির অসাধু লোক চুরি করে মাছ ও পাখি শিকার এবং বন জঙ্গল কেটে উজার করছে। প্রশাসনের হাতে মাঝে মাঝে ধরাও পড়ে জীব বৈচিত্র বিপন্নকারী এসব মানুষ। রাতের বেলায় টর্চ জ্বালিয়ে পাখি শিকার করারও অভিযোগ আছে। জ্বালানি হিসেবে অবাধে কেটে নেওয়া হচ্ছে নলখাগড়া, চাইল্যাবন, হিজল—করচ গাছের ডালপালা। এতে উজাড় হচ্ছে ঘন সবুজ বন। নিষিদ্ধ জাল ব্যবহারের কারণে হাওরের নিচের জলজ প্রাণি এবং উদ্ভিদ নষ্ট হচ্ছে। পাহাড়ি ঢলে ওপার থেকে নেমে আসা বালির কারণে ভরাট হচ্ছে হাওর ও নদী। এছাড়াও হাওরে পর্যটকদের ফেলে দেয়া প্লাস্টিকের থালা, পলিথিন, চিপস—চানাচুরের প্যাকেট ও সংরক্ষিত এলাকায় উচ্চ শব্দে মাইক বাজানোয় পরিবেশের ক্ষতি হচ্ছে। হাওর পাশ^র্বর্তী হোটেলে খাবারের বিশেষ আইটেম হিসেবে দেখানো হয় অতিথি পাখির মাংস। শুধু তাই নয় শহরে ও লুকিয়ে লুকিয়ে পাখি বিক্র হয়। এতে বিপন্ন হচ্ছে টাঙ্গুয়ার হাওরের জীব বৈচিত্র্য।
বাংলাদেশ বার্ড ক্লাব, বন বিভাগ এবং প্রকৃতি সংরক্ষণ বিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএনের বিভিন্ন সময়ের জরিপে টাঙ্গুয়ার হাওরে প্রাণ—প্রকৃতি কমে যাওয়ার প্রমাণও মিলেছে। ২০২২ সালে ২৭ হাজার ১৭০টি পাখি গণনা করা হয়। এর আগে ২০২১ সালে পাখির সংখ্যা ছিল ৫৯ হাজার ৭৪ টি। ২০২০ সালে ৫১ হাজার ৩৬৮টি, ২০১৯ সালে এক লাখ ৪৬ হাজার ৩০টি, ২০১৮ সালে ৫৯ হাজার ৫৪২টি, ২০১৭ সালে ৯১ হাজার ২৩৬টি, ২০১৬ সালে ৪২ হাজার ৫৫৮টি এবং ২০১৫ সালে ৫২ হাজার ২৯৯টি পাখি গণনা করা হয়। তবে এবার টাঙ্গুয়ার হাওরে কম এসেছে অতিথি পাখি।
সম্প্রতি দেলোয়ার নামে এক ব্যক্তি তার নিজ ফেসবুক
আইডিতে কিছু পাখির সাথে জড়িয়ে লাইভ করে নিজেই স্বীকার করেছে সে পাখি শিকার করেছে। এটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, ও মিডিয়ায় প্রচার হলে ও স্হানীয় প্রশাসন এখনও কোন ব্যবস্থা গ্রহন করেন নি।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. আবুল হাসেম বলেন তাহিরপুর থানার ওসি সাহেব চেষ্ট করছেন। ওসি দেলোয়ার হোসেন বলেন এখনও শনাক্ত করা সম্ভব হয়ন। সম্ভবত আমাদের এলাকার নয়।