নিজস্ব প্রতিবেদক:
বঙ্গবন্ধু আবৃত্তি পরিষদ সাতক্ষীরা স্ব-ঘোষিত সভাপতি, কলরোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের প্রাক্তন প্রচার সম্পাদক, সাতক্ষীরা কবিতা পরিষদের সেই স্ব-ঘোষিত সভাপতি মন্ময় মনির ও ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরদের আস্থাভাজন এবং সাতক্ষীরা কবিতা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জলের নেতৃত্বে বিশতম কবিতা উৎসব বাস্তবায়নে চাঁদাবাজির পায়তারা শুরু হয়েছে। এতে ক্ষুব্ধ জেলার কবি-সাহিত্যিকবৃন্দ।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, আগামী শুক্রবার (২০ ডিসেম্বর ২০২৪) সাতক্ষীরায় বিশতম কবিতা উৎসব আয়োজনের লক্ষ্যে গত বৃহস্পতিবার (৫ ডিসেম্বর ২০২৪) বিকালে সাতক্ষীরা পাবলিক লাইব্রেরীর ক্যাফেটেরিয়া ‘পেটুকের আড্ডা’ তে এক প্রস্তুতিমূলক সভা বসেছিল। সভায় সেই বিতর্কিত মন্ময় মনির ও মোস্তাফিজুর রহমান উজ্জল নিজেদের ঘৃণ্য ও কুৎসিত মুখ আড়ালে রেখে ব্যাপকতর চাঁদাবাজি করার মিশন সাকসেস করতে নবাগত জেলা প্রশাসককে প্রধান অতিথি করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে বলে চাউর হয়েছে। এছাড়াও চাঁদাবাজির অর্থের ২৫% কমিশন পাওয়ার শর্তে ওই দুইজনের কাজে সহযোগিতা করতে কাজী গুলশান আরাকে আহবায়ক ও হেলাল সালাহউদ্দীনকে বিশতম কবিতা উৎসবের প্রধান সমন্বয়ক বানানোর সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
আরো জানা গেছে, বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের প্রাক্তন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা: আফম রুহুল হক এমপি, জেলার সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার শেখ মুজিবুর রহমান, মুনসুর আহমেদ, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি একে ফজলুল হক, সহ-সভাপতি মীর মোস্তাক আহমেদ রবি এমপি ও সাধারণ সম্পাদক মোঃ নজরুল ইসলাম, প্রাক্তন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শেখ আবু নাসিম ময়না, মোঃ আসাদুজ্জামান (বাবু), প্রাক্তন সংরক্ষিত মহিলা এমপি রিফাত আমিন, আওয়ামীলীগ নেতা মহিদুল ইসলাম, শেখ আমজাদ হোসেন, জেলা শ্রমিকলীগের সভাপতি সাইফুল করিম সাবু, জেলা কৃষকলীগের সভাপতি বিশ^জিত সাধু, বঙ্গবন্ধু সৈনিক লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও জেলা আওয়ামী লীগের কৃষি বিষয়ক সম্পাদক সরদার মুজিব, দপ্তর সম্পাদক হারুন-অর-রশিদ, সদর উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এসএম শওকত হোসেন, সাধারণ সম্পাদক শাহাজান আলী, কলারোয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ফিরোজ আহমেদ স্বপন এবং তাদের সমর্থকদের সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের পদ দখল করে ক্ষান্ত থাকেনি বিতর্কিত জেলখাটা আসামী মন্ময় মনির ও মাছের কাটা এবং বর্তমান সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এড. শাহ আলমের সেরেস্তায় প্রতিদিন ২০ টাকা মজুরীতে কাজ করা মুহুরী উজ্জল। তারা দুইজনে মিলে সাতক্ষীরায় কবিতা উৎসবের নামে সাহিত্য অনুরাগী বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে রমরমা সাহিত্য ব্যবসা চালিয়ে আসছিলেন যা এখনো অব্যাহত। প্রকাশ থাকে যে, গণ-অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসররা বিএনপির ঘাড়ে সওয়ার হয়েছে। সেই ধারাবাহিকতায় সাতক্ষীরার বিশতম কবিতা উৎসবে সাতক্ষীরা জেলা বিএনপির প্রাক্তন সহ-সভাপতি কামরুল ইসলাম ফারুককে ও বর্তমান জেলা বিএনপির আহবায়ক সৈয়দ ইফতেখার আলীর মেঝো ভাই সৈয়দ এখতেদার আলীকে কবিতা পরিষদ পুরুস্কার ২০২৪ প্রদানের মাধ্যমে নিজেদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। এতে বিস্মিত বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের পহেলা মার্চ সাতক্ষীরার কবিদের একমঞ্চে আনার লক্ষ নিয়ে কবিতা উৎসব শুরু করা হলেও বর্তমানে তা নিছক একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। এতে কবিতা সমৃদ্ধ হয়নি এবং কবিদেরও কোনো উপকার হয়নি। বরং প্রত্যেক বছর কবিতা উৎসবের দপ্তর উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে ২০ টাকার বিনিময়ে তথাকথিত কবিদের নাম নিবন্ধন শুরু হয়। উৎসবে একটি নামমাত্র স্মরণিকা প্রকাশ করা হয়ে থাকে। এছাড়াও এই উৎসবের দিনে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতা ও পাতিনেতা এবং দালালদের সমাবেশ ঘটেছিল। এখানেই শেষ নহে, উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রকাশিত স্মরণিকায় বিগত বছরগুলোতে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসর ও সমর্থকদের পাশাপাশি বিভিন্ন ব্যাংক, বীমা, ভোমরা সিএন্ডএফ এজেন্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, বরষা এনজিও, অগ্রগতি সংস্থা, সুশীলন, তুফান কোম্পানী, লেক ভিউ, নয়াবেঁকী গণমূখী ফাউন্ডেশন, পল্লী চেতনা, সাতক্ষীরা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সাতক্ষীরা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতি, সাতক্ষীরা জেলা ক্রীড়া সংস্থার বিজ্ঞাপন স্থান পায়। তবে সেই বিজ্ঞাপনের পাশাপাশি সাহিত্য অনুরাগী বিভিন্ন ব্যক্তিদের কাছ থেকে টাকা উৎকোচ ও চাঁদাবাজির অর্থের কোনো হিসাব প্রকাশ করা হয় না। অথচ ঐ অর্থ আত্মসাতের পাশাপাশি তারা দুইজন সাহিত্য ব্যবসা করে অঢেল সম্পদ, বাড়ি ও মোটর সাইকেলের মালিক হয়েছেন।
এ প্রসঙ্গে কবিতা পরিষদের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক সরদার গিয়াস উদ্দিন জানান, কবিতা উৎসবের নাম করে মন্ময় মনিররা আওয়ামী লীগের সময়কালে ব্যাপকতর চাঁদাবাজি করেছে। এর কোনো হিসাব সংগঠনের কাউকে দেয়নি। তবে কেউ হিসাব চাইলে তাদের সংগঠন থেকে বের করে দেওয়া হয়েছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় কবিতা উৎসবের কার্যক্রম শুরু করেছে। এটি বন্ধ হওয়া দরকার।
তিনি আরো জানান, যদিও কবিতা পরিষদ একটি প্রতিষ্ঠান তবুও তার কোনো ক্যাশখাতা নেই। বিগত বছরগুলোতে কোনো বিল ভাউচার মেনটেইন করে না। কিন্তু সংগঠনের নামে একটি ব্যাংক একাউন্ট রয়েছে।
তিনি জানান, নামে মাত্র ছিলাম। সংগঠনের নামে সরকারি অনুদানের টাকা পেলেও তথ্য প্রকাশ করে না। তাদের মতের বিরুদ্ধে যাওয়ায় আমাকে সহ ম.জামান, সোহবান আমিন ও সায়েম ফেরদৌস মিতুলকে ইতিপূর্বে সংগঠন থেকে বাদ দিয়েছিল। বিশেষ করে নির্ধারিত সংগঠনের কোনো কাগজপত্র নেই। তারা কবিতা পরিষদের সংগঠন পরিপন্থী কাজ করে। কোনো জেনারেল মিটিং করে না। তাদের মনপুত কয়েকজনকে নিয়ে মিটিং করে। সংবিধান মোতাবেক কার্যকরী কমিটি গঠন করে না। আমাকে যে বাদ দিয়েছে তার অফিসিয়াল কোনো চিঠি দেয়নি। আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেই নি।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক কবি সাহিত্যিকরা জানান, জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে আগত কবিরা উৎসব অনুষ্ঠানে বৈষম্যের শিকার হয়। বিগত বছরগুলোতে কবিদের কবিতা স্মরণিকায় প্রকাশের প্রতিশ্রুতি দিলেও তা রক্ষা করে না। এছাড়াও উৎসব অনুষ্ঠানে কবি-সাহিত্যিকদের অংশগ্রহণের নাম করে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে আদায়কৃত অর্থের যথোপোপযুক্ত ব্যবহার করে না। বরং যখন যে সরকার ক্ষমতায় আসে তখন সেই সরকারের তলপিবাহক হয়ে সভাপতি ও সম্পাদক নিজেদের রক্ষা এবং স্বার্থসিদ্ধি করতে স্বচেষ্ট হয়। তাই কবিতা উৎসবকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্তা-ব্যক্তিরা তাদের প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি নিজেদের প্রচারে ইতিপূর্বে স্মরণিকায় বিজ্ঞাপন প্রকাশ করিয়েছেন। সেই বিজ্ঞাপনের নামে আদায়কৃত অর্থ বিগত বছরগুলোতে তারা আত্মোসাৎ করায় এবার কবিতা উৎসব স্মরণিকায় স্ব-স্ব-ব্যক্তি প্রতিষ্ঠানের কর্তা-ব্যক্তিদের বিজ্ঞাপন প্রদান করা থেকে বিরত থাকার পাশাপাশি এধরণের উৎসব বন্ধের দাবি করেন তারা।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কবিতা পরিষদের কার্যনির্বাহী কমিটির এক প্রাক্তন সদস্য জানান, উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিবার নতুন নতুন চটি রেজুলেশন খাতা ব্যবহার করে। তাদের কেউ চ্যালেঞ্জ করলে বিগত বছরগুলোর হিসাব-নিকাশ ও নথিপত্র প্রদর্শন করতে পারবে না। এছাড়া গঠনতন্ত্রে উল্লেখ না থাকলেও নাম মাত্র রেজুলেশন করে উৎসবকে কেন্দ্র করে যারা বিজ্ঞাপন সংগ্রহ করে তাদেরকে ২৫% কমিশন দেওয়া হবে বলে অধিকাংশ টাকা মন্ময় মনির গ্রহণ করেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির এক নেতা জানান, কবিতা উৎসবে ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগের দোসরা নিজেদের বাঁচাতে ও চাঁদাবাজির পায়তারা করতে জেলা বিএনপির শীর্ষ নেতৃবৃন্দের আত্মীয়দের কবিতা পরিষদ পুরুস্কার ২০২৪ প্রদান করছে। যা নিছক হাস্যকর। তাদের অপকর্মের দায় দল নেবে না। তাদের ভন্ডামির দিন শেষ। ফ্যাসিস্টের দোসরা যাতে কবিতা উৎসব পরিচালনা করতে না পারে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন।
বিষয় সম্পর্কে জানতে কবিতা উৎসবের সভাপতি মন্ময় মনিরকে ফোন করলে তিনি ফোন রিসিভ করেনি। তবে কবিতা পরিষদের উপদেষ্টা আমিনুর রশিদ (আরশি বাউল) জানান, গত বৃহস্পতিবার বিকালে পেটুকের আড্ডায় কবিতা উৎসব বাস্তবায়নে এক প্রস্তুতি সভার দাওয়াতে গিয়েছিলাম। সেখানে আগামী ২০ মার্চ ২০২৪ অগ্রগতি সংস্থার হলরুমে বিশতম কবিতা উৎসব পালন এবং সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ৩জনকে কবিতা পরিষদ পুরুস্কার ২০২৪ প্রদান করার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।