সুনামগঞ্জে ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে আকস্মিক বন্যার কারণে। মানুষের দুর্ভোগ চরমে।
লতিফুর রহমান রাজু.সুনামগঞ্জ: ঈদুল আযহা উদযাপনের সাথে সাথেই ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানিতে সুনামগঞ্জের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার কারণে ঈদের আনন্দ মলিন হয়ে গেছে। কিছু কিছু বাড়ি ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠায় মানুষের দুর্ভোগ চরমে পৌছৈঁ।
পাহাড়ি ঢল ও অব্যাহত বর্ষণের ফলে সুনামগঞ্জ জেলার সকল নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমা অতিক্রম করেছে। রোববার সন্ধ্যায় নদীর পানি কিছুটা কমলেও রাতের ভারী বৃষ্টিতে বৃদ্ধি পেতে শুরু করেছে। এতে সুরমা নদী তীরবর্তী সুনামগঞ্জ পৌর শহরের বেশ কয়েকটি আবাসিক এলাকার বাসা বাড়িতে পানি প্রবেশ করছে। শহরের অনেক রাস্তাঘাট পানিতে নিমজ্জিত।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের তথ্য অনুযায়ী সোমবার দুপুরে সুনামগঞ্জের সুরমা নদীর পানি বিপৎসীমার ১৮ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। বর্তমানে সুরমা নদীর ছাতক পয়েন্টে বিপৎসীমার ১০২ সেন্টিমিটার ওপরে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মামুন হাওলাদার জানিয়েছেন পানি সন্ধ্যার পর থেকেই কমেছে, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার ১৬ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টিপাত হলেও বন্যার আশংকা নেই।
সীমান্তের ওপারে মেঘালয়-চেরাপুঞ্জিতে বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকায় সুনামগঞ্জের সীমান্ত নদী দিয়ে পানি সুরমা ও কুশিয়ারা নদীতে নামছে। সেইসঙ্গে আসছে পাহাড়ি ঢলের পানি। দোয়ারাবাজারের লক্ষ্মীপুরের খাসিয়ামারা নদীর বেড়িবাঁধ ও বোগলাবাজার ইউনিয়নের চিলাই নদীর বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় দুই ইউনিয়নের অন্তত ৫০টি গ্রাম ও সড়ক প্লাবিত হয়ে প্রায় অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ দুর্ভোগে পড়েছেন। তবে পানি কমতে শুরু হলেও দুর্ভোগ দেখা দিয়েছে চরমে।
অন্যদিকে মাত্র দুই সপ্তাহের ব্যবধানে ভারী বর্ষণ এবং ভারত থেকে নেমে আসা ঢলে আবারও ছাতকের নিম্নাঞ্চল নতুন করে প্লাবিত হয়েছে। বৃষ্টি অব্যাহত থাকায় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে ছাতকের সুরমা নদীর পানি। ক্রমাগত পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নিম্নাঞ্চলসহ শহরের মানুষের মধ্যে বিরাজ করছে বন্যাতংক। উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের সীমান্তবর্তী এলাকা দিয়ে প্রবল বেগে ঢলের পানি প্রবেশ করছে। এই ইউনিয়নের ১০ থেকে ১২টি গ্রামের মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে।
দোয়ারাবাজার উপজেলার লক্ষিপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা নুরুল ইসলাম বলেন, ঢলের পানিতে বসতভিটার সাথে সাথে ভাসিয়ে নিয়ে গেছে ঘরে থাকা খাবার ও বস্ত্র। আমরা এখন খাদ্য সংকটে আছি।’
দোয়ারাবাজার উপজেলার ইউএনও মেহের নিগার তনু জানিয়েছেন দোয়ারাবাজার উপজেলার ৫টি ইউনিয়ন যেমন লক্ষী পুর,সুরমা, বোগলাবাজার মান্নারগাঁও ও সদর ইউনিয়নের অনেক গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হলেও কেউ উঠেনি। তবে শুকনো খাবার বিতরণ করেছি।
তাহিরপুর উপজেলার ইউএনও সালমা পারভীন ও বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার ইউএনও মফিজুল ইসলাম জানিয়েছেন পানি বৃদ্ধি হলেও এখনও তেমন বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়নি, তবে আমরা সতর্ক রয়েছি।
সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার ইউএনও মৌসুমী মান্নান জানিয়েছেন, সুরমা নদীর পানি বিপদসীমার উপর প্রবাহিত হলেও বন্যার আশংকা এখনও নেই। আমাদের পক্ষ থেকে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলায় ৬২ টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে কিন্ত আশ্রয় নেয়ার মত পরিস্থিতি হয়নি। আমাদের সকল ইউপি চেয়ারম্যান ও সদস্য দের সতর্ক থাকার ও প্রস্তুত থাকার জন্য বলেছি।
সুনামগঞ্জ পৌরসভার বিভিন্ন পাড়া মহল্লায় নদীর পানি ও জলাবদ্ধতার কারণে অনেক বাড়ি ঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। বিভিন্ন সড়ক গুলো ও নিমজ্জিত। সুনামগঞ্জ শহরের তেঘরিয়া,বড়পাড়া,পশ্চিম হাজীপাড়, আরপিনগর, উকিল পাড়া,নবীনগর, ষোলঘর, ধোপাখালী কাজীর পয়েন্ট. বাজার সহ বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত। গতকাল থেকেই প্রবল বৃষ্টিপাত ও বজ্রপাত হয়েছে ঈদের দিন ও ভারী বর্ষণ হওয়ার ফলে ঈদের নামাজ ঈদগাহের পরিবর্তে মসজিদে পড়তে হয়েছে। কোরবানীর পশু নিয়ে মানুষ চরম দুর্ভোগে পড়েন। সড়ক ও বাসা বাড়ির আঙ্গিনায় পানি থাকায় বারান্দা কিংবা উচুঁ জায়গাতেই পশু জবাই করতে হয়েছে।
সদর উপজেলার লঞ্চঘাট এলাকার বাসিন্দা রেনু মিয়া বলেন, ‘ সকালে দোকান খুলতে এসে দেখি আমার দোকানের সব মালামাল পানিতে ভেসে আছে। ঈদের জন্য যে মালামাল তুলেছিলাম তার বেশির ভাগই নষ্ট হয়ে গেছে।’
জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ রাশেদ ইকবাল চৌধুরী জানিয়েছেন বন্যা মোকাবিলার জন্য সকল প্রস্তুতি রয়েছে। ইতিমধ্যেই দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার সভা করে সকল ইউএনও দের সতর্ক থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। কোন কোন জায়গাতে শুকনো খাবার বিতরণ করা হঘেছে।