|| মুহাম্মদ ইলিয়াস-৩০ নভেম্বর, রাঙামাটি ||
শিকড়গড়া কর্মচারী হিসেবে পরিচিত রাঙামাটির আদালত পাড়ায় বিশেষ সিন্ডিকেট গড়ে তুলে হত্যাসহ বিভিন্ন মামলায় তদ্বির,বিচার প্রার্থীদের হয়রানিসহ নানান অনিয়মে দূর্নীতির মাধ্যমে
কোটিপতি বনে যাওয়া রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালত’র প্রধান তুলনা সহকারী কাম ভারপ্রাপ্ত বেঞ্চ সহকারী কামরুল হাসানকে অবশেষে বদলী করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে আদালত পাড়ার আইনজীবিসহ বিভিন্ন পেশাজীবি ও বিচারপ্রার্থীদের একাধিক লিখত অভিযোগ রয়েছে।
আদালত সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, হাইকোর্ট’র বিজ্ঞপ্তি নাং-২১২ জে তারিখ – ২৮-১১-২০২৩খ্রী: মূলে হাইকোর্ট বিভাগের ডেপুটি রেজিস্ট্রার (প্রশাসন ও বিচার) মো: মিজানুর রহমান’র আদেশ এবং স্মারক নং ১ই-৪৮/২০২২ (অংশ-০৪)- ১০৯১৮ (০৫) জে. তারিখ- ২৮-১১- ২০২৩ খ্রী: সহকারী রেজিস্ট্রার ( বিচার) রাশেদুর রহমান স্বাক্ষরিত বদলী আদেশে রাঙামাটি জেলা জজ আদালতের প্রধান তুনাকারী কামরুল হাসানকে ৩০ নভেম্বর তারিখে পঞ্চগড় চীপ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তুলনা সহকারী হিসেবে যোগদান করতে বলা হয়েছে। এ আদেশে তার বদলীর পাশাপাশি ডিমোশন হয়েছে বলে জানিয়েছে, অভিযোগকারীরা।
তার বিরুদ্ধে দায়ের করা একাধিক অভিযোগ পত্র ও ভুক্তভোগীদের অভিযোগে উল্লেখ রয়েছে, তিনি রাঙামাটিতে দায়িত্ব পালন কালীন সময়ে বিচারপ্রার্থী ও বিচার প্রক্রিয়ার সাথে জড়িত অনেকের কাছে নিজেকে পেশকার এবং কারো কাছে জেলা জজ আদালতের নাজির হিসাবে পরিচয় দিতেন। ৩০ নভেম্বর রাঙামাটি থেকে বদলী জনিত অব্যাগতি পেয়েছে। রাঙামাটি জেলা ও দায়রা জজ আদালতের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি হিসাবে মামলার কার্যক্রম সম্পর্কে মোটা অংকের ঘুষ লেনদেন করতেন। জেলা জজ আদালতের গেইটের সম্মুখস্থ দরবার হোটেল মালিক মো: নুরুচ্ছাপাট ছেলে মোঃ নাছির উদ্দিন’র মাধ্যমে হত্যা মামলা, চাঁদাবাজী, মাদক মামলার নিষ্পত্তির জন্য
বড় ধরনের আর্থিক লেনদেন করতেন। রাঙামাটি জেলা জজ আদালতে দীর্ঘ ১৫ বৎসর’র বেশি সময় ধরে একই কর্মস্থলে দায়িত্ব পালনের সুযোগে তিনি এখানে অপ্রতিরোধ্য ও শেখড় গাড়া হয়ে গেছেন মনে করেন। তিনি এতটাই দূ:সাহসী যে, আদালতের গুরুত্বপূর্ণ বিচারক/ব্যক্তিদের ঘুষ’র টাকা নেয়া ছাড়াও কাপ্তাই লেকে ১০/১২ কেজি ওজনের মাছ উপঢৌকন গ্রহন করতেন।
কামরুল হাসানকে নকল শাখা অফিস সহায়ক জুনায়েদ’র মাধ্যমে আগাম মোটা অংকের ঘুষ পরিশোধ ছাড়া কোন বিচারপ্রার্থী মামলা সংশ্লিষ্ট সহি মোহরকৃত নকল/সার্টিফাইড কপি নিতে পারে না। ঘুষ ব্যতিত নকল পবার কোন সুযোগ নেই। এখানে কামরুলের সীদ্ধান্তই অলিখিত আইন। অদৃশ্য ক্ষমতার জোরে দীর্ঘদিনের তার বেপরোয়া অনিয়ম, দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারীতা সম্পর্কে আদালত পাড়ার ওপেন সিক্রেট বিষয় হলেও কেউ মুখ খুলতে সাহসী হয়নি। তার আপন শ্যালক আরিফুল ইসলাম (মোবাইল নং- ০১৮১৫-২৬৮০৪০)কে যুগ্ম জেলা জজ আদালতে অস্থায়ী স্টেনোগ্রাফার হিসেবে কাজের সুযোগ করে দিয়েছেন। অর্থের বিনিময়ে ইতোপূর্বে জামায়াত পন্থী একজন বিচারককে দিয়ে তিনি রাঙামাটি জেলার অনেকগুলো মামলার ইচ্ছে মতো মর্মে অভিযোগ রয়েছে। একাধিক অভিযোগের প্রেক্ষিতে কামরুলকে বদলী করলেও তার শ্যালকের প্রভাব কমেনি। সম্প্রতি আদালতের কর্মচারী নিয়োগ পরীক্ষা স্থগিতের মাধ্যমে তার শ্যালকের চাকরী নিশ্চিত হয়েছে দাবী করে মিষ্টি বিতরণ করেছে।
কামরুল চট্টগ্রামের চাঁন্দগাঁও আবাসিকে একটি ফ্ল্যাট ও গ্রামের বাড়ি বোয়ালখালীতে একটি বৃহৎ গবাদিপশুর খামার স্থাপনসহ নামে বেনামে বহু জায়গা জমি ক্রয় করেছে এবং স্ত্রী, শ্বশুড়, শ্যালক, বোন, ভগ্নিপতির নামে বহু ব্যাংক ব্যালেন্স রেখেছে মর্মে অভিযোগে দাবী করা হয়েছে। তবে অবাক করার মতো বিষয় হলেও সত্য যে তার ব্যক্তিগত গাড়ি রেজি: নং- ঢাকা মেট্রো-গ-১৪-৯৩১৬
‘র চালক রাঙামাটির একজন শীর্ঘ ইয়াবা কারবারী মোঃ বাদশা মিয়ার ছেলে নুরুল আলম। বদশা ও তার ছেলের নামে রাঙামাটিতেই কয়েক ডজন মামলা রয়েছে। কামরুলের বিরুদ্ধে মাদক কারবারে বাদশা মিয়া ও নুরুল আলমকে পৃষ্ঠপোষকতারও অভিযোগ রয়েছে। সামনের গ্লাসের অভ্যন্তরে টাইপ করা জজ কোর্ট স্টিকারযুক্ত গাড়িটি সব সময় কোর্ট প্রাঙ্গনে পার্কিং করা থাকে। তিনি রিজার্ভ বাজার এলাকার যত মাদক ব্যবসায়ী আছে সকলের সাথে মাদক ব্যবসায়ী ফোরকান এর মাধ্যমে আর্থিক লেনদেন করেন। এছাড়া নারী ও শিশু নির্যাতন আদালতের বেঞ্চ সহকারী জহির’র নিকট কাছ থেকে মামলা তদবির বাবদ নগদ ৫০ হাজার টাকা ঘুষ নিয়েছেন।
গত ঈদুল আজহায় বিক্রির জন্য ভারত হতে চোরাই পথে আনা ২৬ লাখ টাকা মূল্যের তার ১১টি গরু বিজিবি জব্দ করে। তখন বিজিবি কমান্ডারকে একজন বিচারক’র মাধ্যমে তদবির করায়, কিন্তু বিজিবি প্রকাশ্য নিলামে গরুগুলো বিক্রি করে দেয়।
তিনি বর্তমানে চট্টগ্রামে ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা শেয়ার দিয়ে তার বন্ধু নাছির সহ কয়েকজন ব্যবসায়ী মিলে জায়গা জমির ডেভেলপার হিসেবে ব্যবসা শুরু করেছে। কামরুল হাসান সোনালী ব্যাংক ও ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে স্ত্রীর নামে আর্থিক লেনদেন করে থাকেন। তার স্ত্রী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন সহকারী শিক্ষক মাত্র। অথচ তিনিও স্বামীর মতো নিজস্ব পৃথক গাড়ি নিয়ে চলাফেরা করেন। তার হাত থেকে আদালত পাড়ার বিজ্ঞ আইনজীবীগণের অভিযোগও কম নয়। তার হয়রানির হাত থেকে তারাও রেহায় পায়নি। তেমন একাধিক অভিযোগ এ প্রতিনিধি’র হাতে রয়েছে।
কামরুল হাসান’র নিকট তার বিরুদ্ধে অভিযোগ সংক্রান্তে জানতে চাইলে, তিনি সমস্থ অভিযোগ অস্বীকার করেন। তবে তিনি বদলী আদেশ পেয়েই দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়ে পঞ্চগড় জেলার উদ্দেশ্যে রওনা