সাঈদ চৌধুরী,অতিথি প্রতিবেদক:বিশিষ্ট চিন্তক ও মুফাসসিরে কুরআন আল্লামা আবু তায়্যিব সৎপুরী চলে গেলেন মহান মাবুদের দরবারে। ইন্না-লিল্লা-হি ওয়া ইন্না-ইলাইহি রা-জিউ’ন। মঙ্গলবার (২১ ফেব্রুয়ারি ২০২৩) বাংলাদেশ সময় দুপুর ১২টা ৭মিনিটে সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেছেন।
আল্লামা আবু তায়্যিব সৎপুরী ছিলেন একজন মহৎপ্রাণ মানুষ। প্রচার বিমুখ পন্ডিত। মহান আল্লাহ তাঁকে গভীর ইল্ম ও সঠিক উপলব্ধি শক্তি দিয়েছিলেন। অসংখ্য মানুষ তাঁর কাছ থেকে জীবনের প্রকৃত দিকনির্দেশনা পেয়েছেন। সহজ ও সাবলীল ভাষায় তাঁর আলোচনা তথা কুরআনের তাফসির বিপুল মানুষকে মুগ্ধ ও অনুপ্রাণিত করেছে।
আবু তায়্যিব সৎপুরী আল কুরআনকে মূল ভিত্তি হিসেবে গ্রহন করে হাদীস গ্রন্থগুলোকে বুঝতে সচেষ্ট ছিলেন। আর সেভাবেই মানুষকে ইসলামী শরীয়তের দাওয়াত দিতেন। কুরআনে ব্যবহৃত শব্দগুলো আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহার করার জন্য অনুপ্রাণিত করতেন। বয়ানে কিছু আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি দুরূহ বা জটিল উদাহরণ না দিয়ে সহজ ও সাবলীল ভায়ায় উপস্থাপন করতেন। দর্শক বা শ্রোতাকে কুরআন-হাদিস বুঝা তথা আল্লাহর আদেশ মানার ক্ষেত্রে জটিলতায় পড়তে হতোনা। একজন সাধারণ মানুষও কুরআন-হাদিস অনুধাবনের ক্ষেত্রে সংসয়ের কারণ হয়নি।
বিজ্ঞানের যে সকল আবিষ্কার কুরআনের ঐতিহাসিক বর্ণনার সাথে মিলে গেছে, আল্লামা সৎপুরী তা আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গিতে বিশ্লেষন করে সাধারণ্যের জন্য সহজ করে দিতেন। ইসলাম ও বিজ্ঞান নিয়ে তাঁর ব্যাপক পড়াশোনায় মুগ্ধ হতে হয়।
বিশ্ববিখ্যাত তাফসির গ্রন্থ থেকে তিনি আল্লাহর সৃষ্টি জগতের অসাধারণ নান্দনিকতা তুলে ধরতেন। কুরআনের সূরাসমূহের পারস্পরিক মিল ও ধারাবাহিক সংযোগ, আয়াতসমূহের পারস্পরিক অন্তমিল ইত্যাদি বিশেষ করে আল্লাহর বানী হিসেবে আয়াতের নন্দনতত্ত্ব ও অলংকার শাস্ত্রের প্রয়োগ তুলে ধরতেন। ফলে সাধারণ মানুষ বা উচ্চ শিক্ষিত সকলেই শৎপুরীর জ্ঞানগর্ভ আলোচনা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত গভীর মনেযাগ সহকারে গ্রহন করতেন।
আল্লামা সৎপুরী শরীয়তের আলোচনা বা গবেষণায় তাঁর মতের বিরোধী চিন্তাবিদ বা আলেমের ব্যাপারে সম্মান রেখে কথা বলতেন। তিনি মনে করেতন, নির্দিষ্ট কোন মাসআলায় তাঁর চেয়ে জ্ঞানে তুলনামূলক কম জানা আলেমও বড় কোন আলেমের মাধ্যমে সঠিক জ্ঞানপ্রাপ্ত হতে পারেন। সকল প্রকার ফেরকা বা ফিতনা থেকে নিজেকে সচেতনভাবে দূরে রাখতেন। যাবতীয় সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে আল্লাহর নির্দেশসমূহ তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন তিনি। ফলে তাঁর বয়ান শ্রোতাদের হৃদয়-মনে গভীর রেখাপাত করেছে। মানবতার কথা পরিষ্কারভাবে মানুষের সামনে তুলে ধরার পেছনে তিনি সারাটা জীবন ব্যয় করে গেছেন।
আল্লামা আবু তায়্যিব সৎপুরী সিলেট সরকারী আলিয়া মাদ্রাসার মেধাবী ছাত্র ছিলেন। কর্মজীবনে সিলেটের শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা পাঠানটুলার অধ্যক্ষ ও সৎপুর কামিল মাদ্রাসার মুহাদ্দিস হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। সিলেট শহরের শাহচট জামে মসজিদের খতীব হিসেবে তিনি দীর্ঘদিন দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা করেছেন। সেখানে সিলেট বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ সরকারি কর্মকর্তা, অধ্যাপক, চিকিৎসকসহ বিশিষ্ট জনেরা অংশ নিতেন।
এছাড়া দেশ-বিদেশের বড় বড় মাহফিলে তিনি পবিত্র কুরআনের আলোচনা পেশ করেছেন। সর্বত্রই মানুষের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা ও প্রশংসা কুড়িয়েছেন।
মৃত্যুকালে আল্লামা আবু তায়্যিব সৎপুরীর বয়স হয়েছিল ৭০ বছর। তিনি স্ত্রী, ৩ছেলে ও ৪মেয়ে সহ অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখেছেন।
মরহুমের জানাযা মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টায় সৎপুরী আলিয়া মাদ্রাসা ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়। তাঁর বড় ছেলে খালেদ সাইফুল্লাহ জানাযার নামাজে ইমামতি করেন।
হাজার হাজার শোকার্ত জনতার উপস্থিতিতে বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বদের মধ্যে অংশ গ্রহন করেন জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্য ও সাবেক এমপি অধ্যক্ষ মাওলানা ফরিদ উদ্দিন চৌধুরী, ইবনে সিনা হাসপাতাল সিলেটের চেয়ারম্যান মাওলানা হাবিবুর রহমান, ইসলামী চিন্তাবিদ ও গবেষক আল্লামা শায়খ ইসহাক আল মাদানী, অধ্যক্ষ শায়েখ আব্দুস সালাম আল মাদানী, সৎপুর দারুল হাদিস কামিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা আবু জাফর মুহাম্মদ নুমান, সিলেট মহানগরী জামায়াতের আমীর মুহাম্মদ ফখরুল ইসলাম, সিলেট জেলা উত্তরের আমীর হাফিজ মাওলানা আনোয়ার হোসাইন খান, দক্ষিণ সুরমা উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও দক্ষিণ জেলা জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত আমীর মাওলানা লোকমান আহমদ, ছাতক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান অলিউর রহমান চৌধুরী বকুল, ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান সাইফুল্লাহ আল হোসাইন, গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান হাফিজ নজমুল ইসলাম, লামাকাজী ইউপি চেয়ারম্যান কবির হোসেন ধলা মিয়া, শাহজালাল জামেয়া ইসলামিয়া কামিল মাদরাসা পাঠানটুলার প্রিন্সিপাল মাওলানা লুৎফুর রহমান হুমাইদি ও ভাইস প্রিন্সিপাল মাওলানা সৈয়দ ফয়জুল্লাহ বাহার।
মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মরহুমকে জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন। আমিন।