• ১৮ই আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৪শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

ছাতক-সিলেট রেলপথ আধুনিকায়নে পদক্ষেপ:দ্রুত সংস্কার হচ্ছে রেল লাইন ও ব্রিজ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত ডিসেম্বর ২৭, ২০২২
ছাতক-সিলেট রেলপথ আধুনিকায়নে পদক্ষেপ:দ্রুত সংস্কার হচ্ছে রেল লাইন ও ব্রিজ

 

বিবিএন ডেস্ক:দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা ছাতক-সিলেট রেলপথ সংস্কার করে শীঘ্রই রেল যোগাযোগ স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। ছাতক- সিলেট রেলপথ সংস্কারের জন্য গত এক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন ধরনের সমিক্ষা চালিয়ে যাচ্ছে রেলওয়ে বিভাগ। গত ১৩ নভেম্বর বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ছাতক- সিলেট রেলপথ পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ে বিভাগের উর্ধ্বতন কর্মকর্তা এবং এশিয়া উন্নয়ণ ব্যাংকের (এডিবি) একটি প্রতিনিধি দল। এ সময় তারা রেললাইন পুনঃসচল করার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। ছাতক-সিলেট রেলপথ ও স্টেশনগুলো আধুনিকায়ন করার গৃহীত পরিকল্পনার কথাও জানান প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা। তারা জানিয়েছেন সব ঠিকঠাক থাকলে ২০২৩ সালের মধ্যে ছাতক-সিলেট রেলপথ ও স্টেশনগুলো আধুনিকায়ন করে পুনরায় রেল যোগাযোগ স্থাপন করা হবে।

ওই দিন রেলওয়ে সিলেটের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী মোঃ আনোয়ার হোসাইন,এশিয়া উন্নয়ণ ব্যাংকের (এডিবি) কনসালডেন্ট রাকিবুল ইসলামসহ প্রতিনিধি দলের কর্মকর্তারা বিকেলে ছাতক বাজার রেলওয়ে ষ্টেশনে জনপ্রতিনিধি, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ ও সুধীজনদের সাথে মতবিনিময় করেছেন। এ সময় ছাতক-সিলেট রেলপথ পুনরায় চালু করার বিষয়ে এসব সম্ভাবনার কথা তুলে ধরেন তারা। পরে আরো দু’ দফায় রেলপথ পরিদর্শন করেছেন রেলওয়ের উর্ধ্বতন প্রকৌশলী ও এডিবির কর্মকর্তারা।

বাংলাদেশ রেলওয়ে সিলেটের সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী আনোয়ার হোসাইন, সহকারি নির্বাহী প্রকৌশলী (ছাতক বাজার) জুবায়ের আহমদ, সিলেটের উর্ধ্বতন সহকারি প্রকৌশলী(কার্য) জুয়েল হোসেন, উর্ধ্বতন সহকারি প্রকৌশলী (ওয়ে) মোহাম্মদ জুলহাস, উপ-সহকারি প্রকৌশলী(কার্য)আব্দুল নুরসহ কর্মকর্তারা জানান,

করোনা মহামারির সময় থেকে রেল যোগাযোগ বন্ধ থাকা ছাতক-সিলেট রেলপথের মধ্যে বন্যায় অধিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে ছাতক থেকে আফজলাবাদ পর্যন্ত ১২ কিলোমিটার রেলপথ ও আংশিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে আফজলাবাদ থেকে খাজাঞ্চিগাঁও পর্যন্ত আরো ১২ কিলোমিটার রেলপথ । ক্ষতিগ্রস্থ রেলপথ মেরামতের জন্য ইতিমধ্যেই ২২ কোটি টাকার প্রকল্প বরাদ্দ হয়েছে। পরবর্তিতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ছাতক-সিলেট রেলপথকে আধুনিকায়ন করতে ২শ’ ২২কোটি টাকার নুতন একটি প্রকল্প মন্ত্রনালয়ে প্রেরণ করা হয়েছে।এ রেলপথের কয়েকটি ব্রিজের সংস্কার কাজও ইতিমধ্যে সম্পন্ন করা হয়েছে।

রেলপথ সংস্কার কাজের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের সুপার ভাইজার আব্দুল মান্নান জানিয়েছেন,রেলপথের ব্রিজ গুলোর কাজ করছেন তারা। রেল লাইন মেরামতের কাজ এখনো শুরু হয়নি। লাইন মেরামতের জন্য জরিপ চলছে। তিনি বলেন, ছাতক থেকে সিলেট পর্যন্ত রেল লাইনে ছোট -বড় ব্রিজ রয়েছে ৩৮ টি। এর মধ্যে ছাতক অংশে ১০ টি ব্রিজ। ইতিমধ্যে রেলপথের ৩১ টি ব্রিজের মেরামত কাজ সম্পন্ন হয়েছে।

স্মরণ কালের ভয়াবহ বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ছাতক-সিলেট রেলপথে সংস্কার কাজ শুরু করায় জনমনে আশার আলো দেখা দিয়েছে। বিগত বন্যার পানির তীব্র স্রোতে ছাতক থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথের ব্যাপক ক্ষতি সাধন হয়। ছাতক থেকে আফজলাবাদ পর্যন্ত প্রায় ১৩ কিলোমিটার রেলপথ বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। রেলপথের এই অংশ প্রায় লন্ড-ভন্ড হয়ে গেছে। অধিকাংশ স্থানে রেলপথের মাটি-পাথর সরে ঝুলে-ঝুলে রয়েছে শ্লীপার।

করোনা মহামারির সময়ে এই রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়ে। সম্পুর্ণ চালু অবস্থায় ছাতক-সিলেট রেলপথে রেল যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল। বন্যার আগপর্যন্ত এই রেলপথে আর রেল যোগাযোগ স্থাপিত হয়নি। এর মধ্যে বন্যায় রেলপথের অধিকাংশ স্থান ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। ফলে এই রেলপথে যাতায়াতকারি ৩ উপজেলার কয়েক লক্ষ মানুষকে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।

১৯৫৪ সালে সিলেট রেলওয়ে স্টেশন হতে বর্তমান সুনামগঞ্জ জেলার ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ করা হয়। ওই সময়ে এই রেলপথের সর্বশেষ স্টেশন হিসেবে ছাতক বাজার রেলওয়ে স্টেশন নির্মাণ করা হয়। আগে এটি ছিলো আখাউড়া-কুলাউড়া -সিলেট পর্যন্ত সীমাবদ্ধ। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পাথর,বালি,চুনাপাথর,কমলালেবু ধান-চাল ও তেজপাতাসহ বিভিন্ন মালামাল আনা-নেয়ার জন্যই মুলত রেলপথটি নির্মিত হয়েছিলো। পরে এখানের কয়েকটি শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল পরিবহন, ছাতক-দোয়ারাবাজার অঞ্চলসহ সুনামগঞ্জ জেলার মানুষের যাতায়াত সুবিধার ব্যাপক উন্নতি হয় রেলপথের মাধ্যমে।এই অঞ্চলের মানুষের সে সময় থেকেই ছিলো একমাত্র ভরসা রেলপথ । শুরু থেকেই রেল বিভাগের রাজস্ব আয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখে ছাতক-সিলেট রেলপথটি। ১৯৭৯ সালে রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের রাজস্ব আয়ে ছাতক বাজার স্টেশন শ্রেষ্ঠত্বের স্থান দখলে করে নেয়।
ছাতক- সিলেট রেলপথে প্রতিদিন ৩টি ট্রেন যাতায়াত করতো। মাঝে নানান অজুহাত দেখিয়ে কমিয়ে দেয়া হয় ট্রেন ও ট্রেনের বগি সংখ্যা। ট্রেনে করে প্রায় ৪৫ মিনিটে ছাতক থেকে সিলেট পৌঁছানো সম্ভব। ছাতক- সিলেট রেলপথের ট্রেন খাজাঞ্চীগাঁও,সৎপুর ও আফজালাবাদ ষ্টেশনে যাত্রা বিরতি করে।ছাতক অঞ্চল,দোয়ারাবাজার সিলেটের সৎপুর ও খাজাঞ্চীগাঁও এলাকার হাজার- হাজার মানুষের সিলেট শহর ও দেশের অন্যান্য অঞ্চলে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যমই ছিলো রেলপথ। শিল্প শহর ছাতক থেকে চুনা পাথর, সিমেন্ট,শ্লীপার,বালু,বোল্ডার পাথরসহ বিভিন্ন মালামাল দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করতে এই রেলপথে সড়ক পথের চেয়ে পরিবহণ খরচ কয়েক গুণ কম । ছাতক থেকে সিলেট পর্যন্ত ৩৪ কিলোমিটার রেলপথে যাত্রী ভাড়া মাত্র ১২ টাকা। এ দিকে ট্রেনের ভাড়া ১২ টাকার বিপরীতে বাস ভাড়া বর্তমানে ৮০ টাকা ও সিএনজি ভাড়া ১৩০ থেকে ১৫০টাকা।

সুনামগঞ্জ জেলার সরকারি বিভিন্ন প্রকল্প ও সহায়তার চাল-গম ইত্যাদি এই রেলপথে পরিবহনেও অনেক সুবিধা। দেশের বিভিন্ন স্হান থেকে রেলপথে বিভিন্ন পণ্য সামগ্রী ছাতক নিয়ে এসে নৌপথে জেলার অন্যান্য উপজেলায় পৌছানো সহজ। এতে ট্রাক ভাড়ার চেয়ে প্রায় কয়েকগুণ সরকারি অর্থ আগে সাশ্রয় হতো বলে জানা গেছে। রেলপথটি লাভজনক হওয়ার কারণে পাথর পরিবহনের জন্য দেশের একমাত্র ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ স্থাপন করে রেলওয়ে বিভাগ। এখানে স্থাপিত হয়েছে দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রিট শ্লীপার প্ল্যান্ট। সরকারের এই দুটি প্রকল্পও এখন বন্ধ রয়েছে।

ছাতকে রয়েছে রেলওয়ের ৩৫০ একর মুল্যবান ভুমি ও শতাধিক স্থাপনা। ভোলাগঞ্জে ও রয়েছে রেলওয়ে বিদ্যালয়, রেস্ট হাউজ সহ বেশ কয়েকটি স্থাপনা এবং ২ শতাধিক একর ভুমি।সবই ঠিক – ঠাক শুধু মাত্র রেল যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছে। গুরুত্বপুর্ণ এই রেলপথটি দ্রুত সংস্কার না হলে রেলওয়ের শ্লীপার সহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি চুরি হয়ে যাবারও আশংকা রয়েছে।রেল যোগাযোগ না থাকায় অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারীরা কর্মস্থলে থাকেন না। ফলে রেলওয়ে স্টেশন সহ সরকারি কোটি-কোটি টাকা মুল্যের সম্পদ এখানে অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে রয়েছে।
মুহিবুর রহমান মানিক এমপি জানান, বাংলাদেশ রেলওয়ের ছাতক-সিলেট রেলপথ, ছাতক-ভোলাগঞ্জ রজ্জুপথ,ছাতক কংক্রিট স্লিপার প্ল্যান্ট সরকারের লাভজনক ও জনকল্যাণকর প্রতিষ্ঠান। জনস্বার্থে এগুলো দ্রুত সংস্কারের মাধ্যমে সচল করা প্রয়োজন।