নিজস্ব প্রতিবেদক: টাকা আদান প্রদানের অন্যতম মাধ্যম বিকাশ। ব্যবহারের নিজেদের মোবাইল সিম নম্বরে বিকাশ একাউন্ট খুলে মানুষ টাকা-পয়সা আদান প্রদান করে সেবা গ্রহণ করছেন। সহজ ভাবে টাকা-পয়সা আদান প্রদানের এ মাধ্যমটিতে ঝুঁকেছেন অনেকেই। বিশেষ করে ব্যবসায়ীরা প্রতিনিয়ত বিকাশের মাধ্যমে টাকা পয়সা লেনদেন করছেন। এর মধ্যে সমাজের অনেক নিম্ন আয়ের মানুষ রয়েছেন যাদের আয় অনুযায়ী ব্যাংকে কোন একাউন্ট নেই। মোবাইলে নিজেদের রোজগারের জমানো সামান্য টাকা ওই বিকাশ একাউন্টে ফেলে রাখেন। তারা মনে করেন, পরিবারের বা নিজের প্রয়োজনে যখন-তখন বিকাশ থেকে টাকা বের করে খরচ করা সহজ। বিকাশে জমিয়ে রাখা টাকা প্রায় সময় প্রতারণা করে নিয়ে যায় একটি চক্র। বিভিন্ন কলাকৌশলী অবলম্বন করে চক্রটি গ্রাহকদের ঠকিয়ে তারা বিকাশ একাউন্ট থেকে টাকা-পয়সা নিয়ে যায়। এতে করে সাধারণ মানুষ টাকা-পয়সা খুইয়ে হচ্ছেন সর্বশান্ত। টাকা পয়সা ফিরে পাওয়ার জন্য অনেকেই থানায় জিডি এন্টি করেন। কিন্তু বিকাশ প্রতারক চক্রের মূল হোতারা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায়।
এমন অসংখ্য ঘটনা ঘটে যাচ্ছে সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলে।
জানা যায়, গত ১৪ অক্টোবর উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ-সৈদেরগাঁও ইউনিয়নের দশঘর গ্রামের সোনাহর আলীর ছেলে, গোবিন্দগঞ্জের নিউ বুরাইয়া রেস্টুরেন্টের ম্যানেজার জুবায়ের আহমদের (০১৭২৩-৩২৭১৬৭) মোবাইল ফোনে ৪হাজার ২০০টাকার একটি এসএমএস আসে। অজ্ঞাতনামা (০১৫৭৬-৪৬৯৯৫৩) নম্বর থেকে এসএমএসএ এভাবে উল্লেখ করা হয়, প্রিয় শিক্ষার্থী COVID-19 এর কারণে উপবৃত্তির (৪.২০০) টাকা দেয়া হচ্ছে। টাকা গ্রহণের জন্য শিক্ষাবোর্ডের ০১৮১০-৮৫২৩৮৪ নম্বরে কল করুন সকাল ১০টা থেকে রাত ১০টা। এ এসএমএস পেয়ে রেস্টুরেন্ট ম্যানেজার জুবায়ের তাদের প্রতারণার বিষয়টি আঁচ করতে পেরে এসএমএস আসা বিকাশ নম্বরের টাকা তার (০১৭৫২-৩০৩৫৮৬) অন্য নম্বরে ট্রান্সফার করে নেন। পরে তিনি ওই নম্বর দিয়ে তাদের দেয়া শিক্ষাবোর্ডের নম্বরে যোগাযোগ করেন। এ সময়ের মধ্যে অজ্ঞাত প্রতারক বুঝতে পেরেছে যে, এসএমএস পাঠানো নম্বরের বিকাশের টাকা অন্য নম্বরে ট্রান্সফার করেছে। তারা দ্রুত টাকা ট্রান্সফারের নম্বর চেক করে বিকাশের টাকা নেয়ার চেষ্টা করলে বিকাশটি একাউন্টটি ব্লক হয়ে যায়। যে কারণে বিকাশ প্রতারক টাকা নিতে ব্যর্থ হয়।
এদিকে, গত (১৬ মে) সকালে নিউ বুরাইয়া রেস্টুরেন্টের কর্মচারী, উপজেলার দোলারবাজার ইউনিয়নের উত্তরকুর্শি গ্রামের শানুর আলীর ছেলে সাবেক আলীর ব্যবহৃত ০১৭২২-৭৪৮২২১ নম্বরে এভাবে একটি এসএমএস এসেছিল। অজ্ঞাতনামা ০১৮৭৮-৮৩৪৯৭১ থেকে উপবৃত্তির (৪.২০০) টাকার একটি এসএমএস পেয়ে ওই নম্বরে তিনি যোগাযোগ করেন। এসময় অপর প্রান্তে থাকা অজ্ঞাতনামা প্রতারক তাকে বলে উপবৃত্তির টাকা পেতে হলে একটি বিকাশ নম্বর দিতে হবে। সরল মনে তিনি তার ওই নম্বরটি বিকাশ একাউন্ট আছে বলে দিলে একটি ম্যাসেজ পাঠিয়ে দেয় এবং ওই ম্যাসেজের কোড নম্বর বলার পর টাকাগুলো বিকাশে পেয়ে যাবেন এমন কথা কর্মচারীকে বলে। এক পর্যায়ে কোড নম্বর বলে দেয়ার পর বিকাশ প্রতারক একাউন্টের ১২হাজার টাকা নিয়ে মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে দেয়। টাকা ফেরত পেতে ছাতক থানায় সাধারণ ডায়েরীর করার জন্য গেলে জনৈক এক উপ-পরিদর্শক তিনি বিষয়টি দেখবেন বলে তাকে শান্তনা দেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত টাকাগুলো সে আর ফেরত পায় নি।
ছাতক থানার উপ-পরিদর্শক আসাদুজ্জামান রাসেল বলেন, প্রায় দেড় বছর ধরে থানার আধুনিক প্রযুক্তির চেকিং মেশিন নষ্ট থাকায় বিকাশ প্রতারকদের ধরা যাচ্ছে না। নষ্ট চেকিং মেশিন ঠিক করে আনা হলে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ওইসব প্রতারকদের ধরা সম্ভব আছে।