• ২১শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৭শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

বন্যায় সুনামগঞ্জে প্রাণী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুলাই ১, ২০২২
বন্যায় সুনামগঞ্জে প্রাণী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে

লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ: সাম্প্রতিক কালের ভয়াবহ বন্যার কারণে সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণী সম্পদ বিভাগের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। সেই সাথে গো খাদ্যের চরম সংকট দেখা দিয়েছে। যার প্রভাব আসন্ন কোরবানির ঈদে পড়ার সম্ভবাবনা রয়েছে। মোট ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫২৮ টি প্রাণীর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়াও আনুমানিক ২০ কোটি টাকার খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। গোখাদ্য ও প্রচুর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, সম্প্রতি বন্যায় প্রাণী সম্পদ বিভাগ সুনামগঞ্জের প্রাথমিক ভাবে গবাদি পশু ও হাঁস মুরগির মৃত্যু হয়েছে ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫২৮  টি। এর মধ্যে গরু ৪২২  টি, মহিষ ৩৭ টি, ছাগল ৬৯৯ টি, ভেড়া ৫১৪ টি,মোট ১৬৪২ টি। হাঁস ৯৭৮৩১ টি, মুরগী ২ লক্ষ ৮৮ হাজার ০৫৫ টি। সর্বমোট ৩ লক্ষ ৮৭ হাজার ৫২৮  টি । সুনামগঞ্জ জেলার ১১ উপজেলায় আনুমানিক ২০  কোটি টাকার খড় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও প্রচুর গোখাদ্য বন্যার পানিতে ভেসে গেছে। যার ক্ষতির পরিমাণ এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারনা করা হচ্ছে অন্তত ৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত।  জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ডঃ আসাদুজ্জামান জানান তার অধিদপ্তর ও সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে ৯শ মেট্রিকটন গোখাদ্য বরাদ্দ চেয়ে চিঠি দিয়েছেন।  প্রতি টন ৫২ হাজার টাকা হলে মোট ৪   কোটি ৫৮ লক্ষ টাকা হবে। এখনও সরকারের পক্ষ থেকে গোখাদ্য বরাদ্দ পাননি বলও জানান।
সম্প্রতি ভয়াবহ বন্যার ফলে অনেক খামারীদের গরু ছাগল সহ অন্যান্য প্রাণীর ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেগুলো বেঁচে আছে সেগুলোর খাদ্যের সংস্থান করতে হিমশিম খাচ্ছেন।  কারণ এখনও গ্রামের পর গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত।  এছাড়াও জমানো খড় ও পানিতে ভেসে গেছে। সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার পাঠান বাড়ি গ্রামে এডভোকেট আমিনুর রশিদ রনক একটি গরুর খামার করেছিলেন।  ১৮ টি অস্ট্রেলিয়ান ফিজিয়ান জাতের গরু দীর্ঘদিন ধরেই লালন পালন করছেন। আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহার সময়ে কোরবানির জন্য হাটে তুলবেন।  কিন্ত সর্বনাশা বানের পানিতে তার বড় ৯ টি গরুই মারা গেছে। যার মূল্য আনুমানিক ৩০ লক্ষ টাকা। এছাড়াও ১ লক্ষ টাকার গোখাদ্য এবং অবকাঠামোগত অনেক ক্ষতি হয়েছে। এডভোকেট আমিনুর রশিদ রনক জানান আমার সর্বস্ব বানের পানিতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে  যা পোষানো খুবই কঠিন।  সুনামগঞ্জ জেলার বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের পলাশ নতুন পাড়ার বাসিন্দা মুক্তার মিয়ার ৩ টি অস্ট্রেলিয়ান গাভী ও বাছুর এবং গোখাদ্য বানের জলে ভেসে গেছে। দক্ষিণ বাদাঘাট ললিয়ার পার গ্রামের সোলেমান মিয়ার ৫ টি গরুও গোখাদ্য ভেসে গেছে। মুক্তার মিয়া ও সোলেমান মিয়া এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন।
সুনামগঞ্জ জেলার প্রাণী সম্পদের ব্যাপক ক্ষতির প্রভাব আসন্ন পবিত্র ঈদুল আযহায় কোরবানির পশুর হাটে পড়বে বলে স্থানীয়দের অভিমত।
সুনামগঞ্জ জেলা প্রাণী সম্পদ অফিস সুত্রে জানা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার নিরাপদ গবাদি পশুর মাংস উৎপাদনে হ্রষট পুষ্ট করন গবাদি পশুর মোট সংখ্যা ৫৭ হাজার ৩৬৭ টি। মোট খামারীর সংখ্যা ৩৩১৬জন। কোরবানির যোগ্য পশুর মধ্যে ষাড় ৩০৪৫৯টি, বলদ ৭৭৯৯ টি, গাভী ৭১৫৬  টি, মোট ৪৬৪০৬টি। মহিষ ১২৯৪  টি,ছাগল ৫৩৩৬ টি, ভেড়া ৪৩৩১ টি মোট ৯৬৬৭ টি। সর্বমোট ৫৭ হাজার ৩৬৭টি।
কোরবানির পশুর হাটে এবার সংকট দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে স্থানীয়দের অভিমত। কিন্ত প্রাণী সম্পদ বিভাগের মতে সংকট সৃষ্টি হবে না। কারণ সুনামগঞ্জ জেলার বাইরে থেকেও পশুর আগমন ঘটবে।