বিবিএন ডেস্ক: বজ্রাঘাতে মৃত্যু শূন্যের কোটায় নামিয়ে আনতে কাজ করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। বজ্রপাত হলেও মৃত্যু ঘটবে না এরকম প্রযুক্তির পথেই হাঁটছে বাংলাদেশ। হাওর অঞ্চলসহ দেশের ১৫টি স্থানে বসানো হচ্ছে লাইটনিং অ্যারেস্টার বা বজ্রনিরোধক দণ্ড।
দক্ষিণ এশিয়ার বজ্রপাত প্রবণ দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম বাংলাদেশ। ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত প্রায় নয় মাস জুড়েই বজ্রপাত হয়। তবে এপ্রিল থেকে জুনে বেশি বজ্রপাত হয়ে থাকে।
মূলত তালগাছসহ উঁচু গাছপালার সংখ্যা কমে যাওয়ায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু বাড়ছে। সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়ে থাকে খোলা জায়গায়।
এ অবস্থায় বজ্রাঘাতে মৃত্যু ঠেকাতে বিগত ১৫ বছর ধরে কাজ করছেন মো. মনিরুজ্জামান। এই কৃষিবিদ বিভিন্ন জেলায় এ পর্যন্ত ২৭ হাজার তালগাছ লাগিয়েছেন। কৃষকদের নিরাপত্তায় তৈরি করেছেন বজ্রশেল্টার। কৃষি কর্মকর্তাদের মাঝে এই উদ্যোগ ছড়িয়ে দিতে চান মনিরুজ্জামান।
দামুড়হুদা কৃষি কর্মকর্তা মো. মনিরুজ্জামান বলেন, “বজ্রপাতে যখন মানুষ মারা যায় সেখানে সর্বোচ্চ উঁচু গাছ হিসাবে তালগাছ। যে তালগাছ সর্বোচ্চ ৩০ মিটার পর্যন্ত হয় এবং দেড়শ’ থেকে দুইশ’ বছর বেঁচে থাকে। যখনই কোন জায়গায় বজ্রপাত হয় তখন সে তালগাছের উপর অথবা নারিকেল গাছ বা বড় উঁচু গাছ সেই গাছে পড়ে।”
মৃত্যুরোধে নানা সতর্কবার্তা ও উদ্যোগের পর এবার ৩০০ কোটি টাকা ব্যয়ে লাইটনিং শেল্টার ও লাইটনিং অ্যারেস্টার বসানোর উদ্যোগ নিয়েছে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়। বজ্রপাতপ্রবণ এলাকা শনাক্ত করে হাওরাঞ্চলসহ ১৫ জেলায় বসবে এই প্রযুক্তি।
বজ্রপাতের ৪০ মিনিট আগেই সতর্ক বার্তা পাওয়া যাবে। প্রকল্পটি মন্ত্রীসভার অনুমোদনের অপক্ষোয় আছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান বলেন, “পাইলট প্রজেক্ট আমরা নিচ্ছি। সেখানে ৩০শ’ কোটি টাকা ব্যয়ে লাইটনিং শেল্টার ও লাইটনিং অ্যারেস্টার সংযোগ করে বজ্রপাতে নিরাপদ আশ্রয়ের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।”
১০ মিটার উচ্চতার এই অ্যারেস্টার কৃষকের নিজ জমিতেই বা খোলা মাঠে ১ থেকে ২ কিলোমিটার দূরত্বে বসানো হবে। যন্ত্রটি বজ্রকে ভূমিতে আসতে বাধা দেবে। এতে বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যুর সংখ্যা শূন্যের কোটায় নেমে আসবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারপার্সন তৌহিদা রশীদ বলেন, “এগুলো খুবই আধুনিক ও উন্নতমানের অ্যারেস্টার। সেগুলো প্রায় ১শ’ মিটার এরিয়া পর্যন্ত নিরাপত্তা দিবে। ওই এলাকার মধ্যে যত বজ্রপাত হবে সেগুলো গ্রাউন্ডে আসবে না। অ্যারেস্টারগুলো লাগানো হবে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আবহাওয়া বিজ্ঞান বিভাগ, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউট, ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের গবেষণার সমন্বয়ে পাইলট প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে সরকার।