• ৩রা জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ১৯শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ৮ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি মানুষের

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মে ২০, ২০২২
সুনামগঞ্জে বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি মানুষের
লতিফুর রহমান রাজু সুনামগঞ্জ: সুনামগঞ্জ জেলার ৫টি উপজেলার বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হলেও দুর্ভোগ কমেনি মানুষের।  তবে ছাতক ও দোয়ারাবাজার উপজেলার চিত্র আগের মতই।  সামান্য উন্নতি হলেও এখনও বসত বাড়ি, সড়ক, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পানি থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন ঐ এলাকার জনগন।  সুনামগঞ্জ শহরের বিভিন্ন পাড়া মহল্লার সড়ক ও ঘর বাড়ি তে পানি কদিন ধরেই জমাট বেঁধে আছে। পানি না নামার কারনে চলাচল করতে খুব কষ্ট করতে হচ্ছে। এছাড়াও পানি পচে ও ময়লা হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। সুনামগঞ্জ জেলার ৩টি সেতু ইতিমধ্যেই পানির প্রবল চাপে ভেঙ্গে গেছে। এ গুলো হচ্ছে দোয়ারাবাজার উপজেলার দোহালিয়া ইউনিয়নের বিয়ানিবাজার গ্রামের পাশে ২০ মিটার দৈর্ঘ্যর পানাইল সেতু, তাহিরপুর উপজেলার দক্ষিণ শ্রীপুর ইউনিয়নের লামাগাও সেতু ও বিশ্বমভর পুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর রবারড্যাম এপ্রোচ। ফলে হাজার হাজার মানুষ চরম ঝুঁকির মধ্যেই বিকল্প পথে চলাচল করছেন।  এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী মাহাবুব আলম জানান সাম্প্রতিক বন্যার কারণে ১৭৫ কিলোমিটার পাকা সড়ক, ৪ টি বড় কালভার্ট ও রাবার ড্যাম ক্ষতিগ্রস্ত সহ অন্তত ৫০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ ক্ষতির পরিমাণ আরও বাড়তে পারে বলেও জানান।
 সুনামগঞ্জ জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সুনীল মন্ডল জানান এবার বন্যার কারণে ৪৫০টি পুকুর, ৩৫ টন বড় মাছ,৩০ লক্ষ রেনু পোনা মাছের ক্ষতি হয়েছে যা টাকার পরিমাণে আড়াই কোটি টাকা।
জেলা কৃষিসম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপ পরিচালক বিমল চন্দ্র সোম জানান সুনামগঞ্জ জেলার হাওর বহির্ভূত বোর ফসলের ৫শ হেক্টর ৫০ হেক্টর বাদাম ও আউশ ধানের ক্ষতি হয়েছে। অনেকেই ধান কাটার পর বৃষ্টিপাতের কারণে শুকাতে না পারার কারণে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। সুনামগঞ্জের ৩টি হাসপাতাল ছাতকের কৈতক, তাহিরপুর ও সদরের টিবি হাসপাতালে পানিতে প্লাবিত হওয়ার ফলে চিকিৎসা বিঘ্নিত হয়। সুনামগঞ্জ জেলার ২১৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় সাময়িক বন্ধ রয়েছে।
এদিকে শুত্রুবার সকা‌লে ধী‌রে ধী‌রে পা‌নি কম‌লে ও দুপু‌রে মুষলধারে বৃষ্টি   হয়েছে ছাত‌কে। গো‌বিন্দগঞ্জ ও ছাতক সড়‌কের পা‌নি  কম‌লে ও  বড় বড় কোষ্টার যান চলাচল শুরু কর‌ছে ছোট ছোট যান চলাচল বন্ধ আছে ।
সুরমা, চেলা ও ইছামতি,পিয়াইন নদীর পানি বিভিন্ন স্থানে বিপদসীমার ৪০ থেকে ৫০ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। লাখ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় দুর্বিষহ জীবন যাপন করছেন।  শুত্রুবার সকা‌লে পানির প্রবল শ্রেুাতের কারনে বুড়াইরগাও ও আলমপুর পাকা সড়ক ভে‌ঙ্গে গে‌ছে।
। ছাতক উপজেলার ১৩ টি  ইউনিয়নের বিভিন্ন গ্রামের ও পৌরসভার মানুষ পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছেন। এ‌তে লাখ লাখ  মানুষ পা‌নিব‌ন্ধি হ‌য়ে প‌ড়ে‌ছে। হাজার হাজার ঘরবা‌ড়ি‌ ও বসত ঘ‌রের মধ্যে হাঁটুপানি, কোমরপানি থাকায় ৫ দিন ধ‌রে হাড়ি বসছে না বানভাসি পরিবারে ঘ‌রে। পাকা,কাচা রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়াসহ ক‌লেজ,মাদ্রাসা,মাধ‌্যমিক ও প্রাথ‌মিক; শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গুলো‌তে পানি ঢোকায় বন্ধ রয়েছে শিক্ষা কার্যক্রম। মানুষ ঘর বাড়ির মায়ায় মাচা বেঁধে আছেন।
। গবাদি পশুর খাদ্য সংকট প্রকট আকার ধারণ করেছে। উপ‌জেলার বন্যা দুর্গতদের জন্য ৩টি আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে।দুর্গতদের উপজেলা প্রশাসন থেকে শুকনা খাবার বিতরণ করা হচ্ছে।
এ উপজেলার বানভাসি মানুষের মধ্যে ত্রাণের জন্য এখন চলছে হাহাকার। তারা ত্রাণের অপেক্ষায় আছেন। প্রতিদিন শত শত মানুষ যাত্রীবাহী নৌকা দেখলেই ত্রাণ পাওয়ার আশায় ছুটে যাচ্ছেন সেখানে। এতে বন্যাদুর্গত এলাকায় তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে।এভাবেই সীমাহীন দুঃখ-কষ্টে দিন কাটছে বানভাসি মানুষের। বিভিন্ন গ্রা‌মে পাড়া মহল্লায় ত্রাণের জন্য হাহাকার দেখা দিয়েছে।
গত শুত্রুবার একা‌ধিক চেয়ারম‌্যান ও মেম্বাররা
জানান,তারা পর্যাপ্ত ত্রাণ বরাদ্দ পাচ্ছেন না। গবাদিপশু ও গোখাদ্য নিয়েও চরম বিপাকে পড়েছেন বন্যার্তরা।  টিউবওয়েল গুলো পানির নীচে থাকার কারণে বিশুদ্ধ খাবার পানির সংকট দেখা দেয়ার ফলে ডায়রিয়াসহ নানা পানিবাহিত রোগবালাই দেখা দিয়েছে।  নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে।

ছাতক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মামুনুর রহমান জানান, বন‌্যার পানি কম‌তে শুরু কর‌ছে ।
বন্যাদুর্গত এলাকায় ১৩‌টি  ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায়  ইতিমধ্যে সরকা‌রি ভা‌বে ২০ টন চাউল বরাদ্ধ করা হ‌য়। এছাড়াও আশ্রয় কেন্দ্র গুলোতে শুকনো ও রান্না করা খাবার বিতরণ অব্যাহত আছে।

দোয়ারাবাজার উপজেলার বন্যা পরিস্থিতি অপরিবর্তিত রয়েছে। সেখানকার বাসিন্দ আশীষ রহমান জানান মানুষ চরম দুর্ভোগ ও কষ্টের মধ্যে আছে। যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছেন সুনামগঞ্জ সদর ও অভ্যন্তরীণ সড়ক গুলোর সাথে। এদিকে গতকাল বৃহস্পতিবার রাতে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের এক যৌথ সভায় সুনামগঞ্জ জেলাকে অবিলম্বে দুর্গত এলাকা ঘোষনা করে বানভসী মানুষ কে পর্যাপ্ত খাবার, নগদ অর্থ ও কৃষি ঝণ সহ অন্যান্য সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করার দাবী জানান।