• ১২ই জুলাই, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৮শে আষাঢ়, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৭ই মহর্‌রম, ১৪৪৭ হিজরি

বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে ৩ স্কুলশিক্ষার্থী নিহত,আহত ৮

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মে ২০, ২০২২
বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে ৩ স্কুলশিক্ষার্থী নিহত,আহত ৮

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি:গ্রামের হাওরে বাদাম তুলতে গিয়ে বজ্রপাতে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুলের তিন স্কুলশিক্ষার্থী নিহত হয়েছেন। একই সময় বজ্রপাতে আহত হয়েছেন স্কুলশিক্ষার্থী ও নারীসহ কমপক্ষে আরও আটজন।

বৃহস্পতিবার বেলা ১১টা থেকে সোয়া ১১টার দিকে সুনামগঞ্জের তাহিরপুরের বাদাঘাটের সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের সামনে থাকা হাওরে বজ্রপাতে নিহত ও হতাহতের এ ঘটনাটি ঘটেছে।o

স্কুলের নিহত ক্ষুদে তিন শিক্ষার্থী হলো— উপজেলার বাদাঘাটের সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের আব্দুল হালিমের ১৩ বছরের শিশুকন্যা সপ্তম শ্রেণির স্কুলছাত্রী তাওহিদা বেগম, একই গ্রামের প্রতিবেশী ফজ রহমানের ১১ বছর বয়সি শিশুকন্যা পঞ্চম শ্রেণির স্কুলছাত্রী রিপা বেগম, আব্দুল আজিজের ১২ বছর বয়সি শিশুপুত্র ষষ্ঠ শ্রেণির স্কুলছাত্র আমিরুল ইসলাম। নিহত তিন শিক্ষার্থী উপজেলার ঘাগটিয়া সরকারি প্রাথমিক ও নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতেন।

আহতরা হলো— উপজেলার বাদাঘাটের সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের আব্দুল হালিমের অপর শিশুপুত্র নিহত স্কুলছাত্রী তাওহিদার সহোদর ভাই নবম শ্রেণির স্কুলছাত্র মাছুম মিয়া (১৫), বোন দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী ওয়াহিদা বেগম (৭), তাসলিমা আক্তার (৪), একই গ্রামের আব্দুল আউয়ালের শিশুকন্যা দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী আলিজা বেগম (৭), আব্দুস সাক্তারের শিশুকন্যা দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী সাদিয়া আক্তার পুষ্প (৭), ফজ রহমানের অপর শিশুকন্যা দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী শেফা আক্তার (৭), আব্দুল আজিজের অপর শিশুকন্যা দ্বিতীয় শ্রেণির স্কুলছাত্রী রিয়া মণি (৭), মৃত এনাম উদ্দিনের ছেলে হবি রহমান (৪৫)।

আহতদের মধ্যে আশঙ্কাজনক থাকায় দুই শিক্ষার্থীকে সুনামগঞ্জ জেলা সদর ও অপর দুজনকে তাহিরপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার সরেজমিন গিয়ে জানা যায়, হাওড়ে বাদাম তুলতে যাওয়া উপজেলা সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের প্রয়াত আব্দুল মালেকের স্ত্রী নুরজাহান বেগম (৫৫) ও নিহতের পরিবারের সঙ্গে আলাপকালে জানা যায়, বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৭টার দিকে উপজেলার সুন্দর পাহাড়ি গ্রামের মৃত তমিজ উদ্দিনের ছেলে আব্দুল হালিমের গ্রামের সামনে থাকা হাওড়ের জমিতে শ্রমিক, প্রতিবেশী পরিবারের নারী পুরুষ, শিশু কিশোর-কিশোরদের সঙ্গে তার নিজ পরিবারের শিশু সন্তানসহ ৩০-৩৫ জন এক সঙ্গে উৎপাতিত রবিশস্য বাদাম তুলতে যান।

বেলা ১১ থেকে সোয়া ১১টার দিকে আকস্মিক ঝড়বৃষ্টি শুরু হলে প্রাপ্তবয়স্ক নারী-পুরুষরা দৌড়ে হাওড়ের পাশে থাকা ঘরবাড়িতে আশ্রয় নেন। অন্যদিকে জমির মালিক আব্দুল হালিমের শিশুসন্তানসহ বেশ কয়েকজন শিশু হাওড়ের জমিতে থাকা এক পাতার টিন ছাউনি ও প্লাস্টিকের ত্রিপলের নিচে আশ্রয় নেন। এর পর আকস্মিক বজ্রপাত পড়লে স্কুলের তিন শিক্ষার্থী হাওড়ের জমিতেই তাৎক্ষণিকভাবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে এবং শিক্ষার্থী, নারী, পুরুষসহ বাদাম তুলতে হাওড়ের জমিতে থাকা আরও আটজন আহত হন।

খবর পেয়ে তাৎক্ষণিকভাবে সুনামগঞ্জ পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএমের নির্দেশে নিহতদের উদ্ধার ও হতাহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে ঘটনাস্থলে ছুটে যান থানার বাদাঘাট পুলিশ ফাঁড়ি ইনচার্জ মো. জাহাঙ্গীর হোসাইন, এএসআই মো. আরিফুর রহমানসহ পুলিশের একটি টিম।

একই সময় তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান কবির ঘটনাস্থলে নিহত পরিবারের সদস্য ও হতাহতদের সরকার, জেলা, উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সমবেদনা জানান।

এ সময় তিনি প্রত্যেক নিহত পরিবারের সদস্যদের হাতে তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি সহায়তা হিসাবে লাশ দাফনের জন্য নগদ ২০ হাজার টাকা করে অনুদান প্রদান করেন।

উপজেলার বাদাঘাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নিজাম উদ্দিন ও উত্তর বড়দল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মো. মাসুক মিয়া নিহত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ব্যক্তিগত তহবিল হতে নগদ অর্থ সহায়তা প্রদান করেন।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মো. রায়হান কবির বলেন, জেলা প্রশাসক মহোদায় বজ্রপাতে নিহত শিক্ষার্থীদের ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ দাফনের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিয়েছেন। এ ছাড়া আহতদের উন্নত চিকিৎসার জন্য সব ধরনের সরকারি সহায়তা করতে জেলা ও উপজেলা হাসপাতালে দায়িত্বশীলদের নির্দেশনা দিয়েছেন।

খবর পেয়ে বজ্রপাতে স্কুলের নিহত তিন শিক্ষার্থীর শোকাহত পরিবার ও হতাহত পরিবারের সদস্যদের সমবেদনা জানান সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান বিপিএম।

বৃহস্পতিবার বিকালে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, নিহত স্কুল শিক্ষার্থীদের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে আপাতত ইউএনওর মাধ্যমে নগদ ২০ হাজার টাকা করে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে। পরে নিহত প্রতিটি পরিবারকে ও হতাহতদের প্রত্যেককে সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সহায়তা প্রদান করা হবে।