• ২২শে আগস্ট, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই ভাদ্র, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৮শে সফর, ১৪৪৭ হিজরি

সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত,বন্যার পদ ধ্বনি 

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত মে ১৫, ২০২২
সুনামগঞ্জে নদনদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত,বন্যার পদ ধ্বনি 
সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি: সীমান্তের ওপাড় থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সুনামগঞ্জের সুরমা এবং অভ্যন্তরীণ নদী যাদুকাটা, রক্তি, বৌলাই কুশিয়ারা পাটলাই সহ সকল নদনদীর পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। গত কয়েক দিনের অব্যাহত বৃষ্টিপাতের ফলে ভাটির উপজেলা তাহিরপুর,বিশ্বম্ভরপুর, জামালগঞ্জ, ধর্মপাশার পানি কয়েক গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। হাওর এলাকার নদনদীতে মেঘালয়ের পাহাড়ি ঢল প্রবল বেগে  নেমে আসছে। তাহিরপুর উপজেলার রতনশ্রী,গোলাবাড়ি,মান্দিয়াতা, জয়পুরসহ টাংগুয়া ও মাটিয়ান হাওর তীরবর্তী বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে দেখা যায় পাহাড়ি ঢলের পানিতে গ্রামের ছোট ছোট খাল গুলো টইটুম্বুর হয়ে আছে। ঢলের পানিতে ভেসে আসা পলি মাটিতে হাওরের পানির রং বদলে গেছে। পানি শূন্য হাওর গুলোরে বিভিন্ন স্লুইসগেট রেগুলেটর ও বাধের ফাক ফোকর দিয়ে পানি প্রবেশ করছে। ইতিমধ্যেই স্লুইসগেট গুলো খুলে দেয়া হয়েছে।
মান্দিয়াতা গ্রামের আব্দুল জলিল বলেন, এখন হাওরে পানি ঢুকলে মাছের উৎপাদন বাড়বে। হাওরে কোন ফসল নেই তাই ক্ষয়ক্ষতির সম্ভাবনা নেই। তবে দীর্ঘদিন বৃষ্টিপাতের কারণে ধান চাল শুকাতে বেশ সমস্যা হচ্ছে। গোলাবাড়ি গ্রামের ইদ্রিস আলী বলেন, এতোদিন পানি না হওয়ায় পায়ে হেটে চলাচল করতে পারতাম এখন নৌকাছাড়া কোথাও যাওয়া যাবে না। তবে বালিজুড়ি গ্রামের কৃষকরা জানান, আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে তাদের বাদাম ক্ষেত পানিতে তলিয়ে গেছে তবে দ্রুত পানি সরে গেলে তেমন কোন ক্ষয়ক্ষতি হবে না। এদিকে তাহিরপুর আনোয়ারপুর সড়কের রক্তি নদীর তীরের ডুবন্ত সড়ক পানিতে নিমজ্জিত হওয়ায় সরাসরি যানবাহন চলাচল আপাতত বন্ধ রয়েছে। তবে পানি সরে গেলে যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক হবে। বিশ্বম্ভরপুর উপজেলার সলুকাবাদ ইউনিয়নের সোনাপুর রবারড্যাম উপচে খরচার হাওরের উচু জমিতে ঢলের পানি প্রবেশ করছে।  এই এলাকার অন্তত ৫০ টি ঘর বাড়ির ক্ষতি হয়েছে। ঘটনাস্থল পরির্দশন করে ইউএনও সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন এবং তাৎক্ষনিক কিছূ সহায়তা প্রদান করেন।
  এদিকে দোয়ারাবাজারে টানা ৩ দিন ধরে অঝোরে বৃষ্টিপাত ও মেঘালয় থেকে নেমে আসা আকস্মিক পাহাড়ি ঢলে উপজেলার নিম্নাঞ্চল ও লোকালয়সহ বিভিন্ন রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন।
সুরমা, চেলা, মরা চেলা, চিলাই, চলতি, কালিউরি, ধূমখালি ও ছাগলচোরাসহ বিভিন্ন হাওর, খাল-বিলের পানি হু হু করে বৃদ্ধি পাওয়ায় বন্যার আশঙ্কা করছেন উপজেলাবাসী। সীমান্তবর্তী বাংলাবাজার, লক্ষীপুর, বগুলা, নরসিংপুর, সুরমা, দোহালিয়া, পান্ডারগাঁও, মান্নারগাঁও ও দোয়ারা সদর ইউনিয়নের বিভিন্ন রাস্তা, মাঠঘাট, আউশ জমিতে পানি ঢুকছে। পানিবৃদ্ধি অব্যাহত থাকলে মাঠের অবশিষ্ট বোরো ফসল ও রবিশস্য উৎপাদন অনিশ্চিতের আশঙ্কা করছেন কৃষকরা। মাঠ ও গোচারণ ভূমিতে পানি উঠায় গো-খাদ্য সংকটসহ মৎস্য খামারিরাও রয়েছেন চরম শঙ্কায়। কেননা গত বছর চার দফা বন্যায় ভেসে যায় শতাধিক খামারের কোটি কোটি টাকার মাছ ও মাছের পোনা ও রেনু। দোয়ারাবাজার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) দেবাংশু কুমার সিংহ জানান, পানি বাড়লেও কোথাও ক্ষয়ক্ষতির খবর এখনও পাওয়া যায়নি। তবে দূর্যোগ মোকাবেলায় আমাদের প্রশাসনিক তৎপরতা অব্যাহত থাকবে। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা বিমল চন্দ্র সোম বলেন, সদর বিশ্বম্ভরপুর দোয়ারাবাজার উপজেলার কিছু জমিতে পানি প্রবেশের খবর পেয়েছি যদি পানি দ্রুত নেমে যায় তাহলে কোন ক্ষতি হবে না।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ নয়ন মিয়া জানান, খরচার হাওরের সব ধান কাটা শেষ। এখন উঁচু জমিতে কিছু ধান আছে যা আগামী দুই একদিনের মধ্যে কাটা হয়ে যাবে। তবে ঢলে বাদাম ক্ষেতের ক্ষতি হয়েছে।
বিশ্বম্ভরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাদি উর রহিম জাদিদ বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করে ১০ কেজি চাল,তেল,গুড়,বিস্কিট সাবান,মোমবাতি দিয়াশলাই চিড়া,মুড়ি বিতরণ করা হয়েছে। পরে প্রয়োজন অনুযায়ী প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
সুনামগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো জহরুল ইসলাম বলেন ৪৮ ঘন্টায় চেরাপুঞ্জিতে ৪০৯ এবং সুনামগঞ্জে ১৬০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। সুরমা নদীর পানি বিপদ সীমার কাছাকাছি অবস্থান করছে। বৃষ্টিপাত কমলে পরিস্থিতি উন্নতি হবে।
জেলা প্রশাসক মো জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন জেলার সকল ইউএনও দের সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে এবং ক্ষতিগ্রস্থ পরিবারের সদস্যদের সাহায্য সহযোগিতার ও নির্দেশ প্রদান করা হয়েছে।