সিদ্দিকুর রহমান নির্ঝর : দীর্ঘ এক যুগ পর হ্যাট্রিক করে বাঙালি অধ্যুষিত টাওয়ার হ্যামলেটস বারায় মেয়র নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত ‘মজলুম জননায়ক‘ লুৎফুর রহমান। মূলধারার ব্রিটিশ রাজনৈতিক বিশ্লেষক, রাজনৈতিক বোদ্ধা, রাজনৈতিক সমালোচক, ভিন্ন ভিন্ন বারায় বসবাসরত বোদ্ধাশ্রেণী ইত্যাদি সব ধরনের বিশ্লেষকদের ধারণাকে উল্টে দিয়ে ৪০,৮০৪ ভোট পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হলেন টাওয়ার হ্যামলেটসের স্থানীয় জনতার নেতা লুৎফুর রহমান। লুৎফুর রহমানের বিজয়ে তাঁর সমর্থকগণ বিজয়ের আনন্দে উদ্বেলিত, উল্লসিত, আবেগ আপ্লুত।
৫ মে‘র মেয়র ইলেকশনে মোট ভোট পড়েছে ৮৬ হাজার ৯ টি। এরমধ্যে ১৮৬৪ ভোট বাতিল হয়। অবশিষ্ট থাকে ৮৪ হাজার ১২৫ টি ভোট। প্রথম ধাপে লুৎফুর রহমান পান ৩৯,৫৫৩ ভোট এবং জন বিগস পান ২৭,৮৯৪ ভোট। নিয়ম অনুযায়ী প্রথম রেফরেন্স ভোট এককভাবে ৫১% কারো পক্ষে না পড়ায়, দ্বিতীয় ধাপের ভোট গণনা করতে হয়। দ্বিতীয় ধাপের ভোট গনণা শেষে লুৎফুর রহমান পান ৪০,৮০৪ ভোট। এদিকে জন বিগস এর ভোটের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩৩,৪৮৭ ভোট। লুৎফুর রহমান পেয়েছেন মোট ভোটের ৫৪.৯% শতাংশ এবং জন বিগস পেয়েছেন মোট ভোটের ৪৫.১% শতাংশ।
তৃতীয় স্থান লাভ করেন লিবডেম দলের বাঙালি প্রার্থী রাবিনা খান। তাঁর প্রাপ্ত ভোট ৬,৪৩০। চতুর্থ স্থানে ছিলেন কনজারভোটিভ প্রার্থী এলিয়ট উইভার। তিনি পেয়েছেন ৪,২৬৯ ভোট।
জনতার সরাসরি ভোটে আজকের বিজয়ী মেয়র লুৎফুর রহমান প্রথম জনগণের ভোটে প্রথমবার মেয়র হিসাবে জয়লাভ করেন ২০১০ সালে। সেই সময়ে তাঁর মেয়াদকালে তিনি টাওয়ার হ্যামেলেটসবাসীর জন্য এমন কিছু জনকল্যাণকর কাজ করেন, যা পুরো ব্রিটেন জুড়ে আলোড়ন সৃষ্টি করে। তাঁর অসামান্য অবদানের জন্য তিনি কেন্দ্রীয় সরকার থেকে পুরস্কৃত হন। আর বারার জনগন তাঁদের নিজেদের প্রাণের মানুষকে মেয়র হিসাবে পেয়ে খুব সহজেই সব দাবি-দাওয়া তুলে ধরতে থাকে। তাঁর চুম্বকসম মোহনীয় ব্যক্তিত্বের জন্যে তিনি বারার সব শ্রেনী ও পেশার মানুষের মন জয় করতে সক্ষম হন। এর ফলও তিনি হাতেনাতে পেয়ে যান। প্রথমবারের মেয়াদ শেষ হবার পর ২০১৪ সালে দ্বিতীয়বারের মতো মেয়র হিসাবে নির্বাচিত হন লুৎফুর রহমান।
কিন্তু বিধি ছিল বাম। একশ্রেণীর কুচক্রী স্বার্থন্বেষী মহল সেইসময় মেয়রের পিছু লাগে। এই চক্রটি ভোট কারচুপির অভিযোগ তুলে মেয়রের বিরুদ্ধে মামলা করে । ব্রিটিশ নিয়ম অনুযায়ী এসব মামলার জেরে তাঁর মেয়রশিপ হয়ে যায় বাতিল। এরপর টেমস নদী দিয়ে অনেক জল গড়িয়ে যায়। একে একে সবক‘টি মামলার তদন্ত শেষে লুৎফুর ও তাঁর দলবল নির্দোষ প্রমানিত হন। ইতোমধ্যে তিনি ব্যক্তিগত ভাবে আর্থিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হন। তাঁর নিজস্ব ব্যবসা থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে হয়। তিনি গত একযুগে জনতার নেতা হয়েও ছিলেন একজন ‘মজলুম জননেতা‘। দীর্ঘ ত্যাগ-তিতিক্ষার ফল হচ্ছে আজকের এই মহা সাফল্য।
ফলাফল ঘোষণার পর মেয়র লুৎফুর রহমান নির্বাচন কেন্দ্রের বাইরে এসে সমর্থকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে বলেন, আমি শুধু একটি কমিউনিটির জন্য নয়, সবার জন্য কাজ করব। আমি সবার মেয়র, সকলের জন্য আমি কাজ করতে চাই। এই বিজয় জনগনের বিজয় বলেও উল্লেখ করেন তিনি । আগামীতে হাউজিং শিক্ষা ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্যও কাজ করার প্রতিশ্রুতি দেন নব নির্বাচিত মেয়র লুৎফুর রহমান। নব নির্বাচিত লুৎফুর রহমান আরও বলেন, আমাকে যেভাবে বারার মানুষ সমর্থন ও সহযোগিতা করেছেন তা আমি কথায় নয়,কাজ দিয়ে আমি আমার বারার মানুষের ঋণ শোধ করব।