• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

প্রধানমন্ত্রী বরাবরে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের স্মারকলিপি প্রদান

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৬, ২০২২
প্রধানমন্ত্রী বরাবরে হাওর বাঁচাও আন্দোলনের স্মারকলিপি প্রদান

সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি::কার্যাদেশ অনুযায়ী সঠিক সময়ে হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় একের পর এক তলিয়ে যওয়ার প্রতিবাদে এবং কৃষকের ফসল রক্ষার দাবিতে সুনামগঞ্জ জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকলিপি প্রদান করেছে হাওর বাঁচাও আন্দোলন সুনামগঞ্জ জেলা কমিটি।
বুধবার সকাল ১১ টায় জেলা প্রশাসকের অফিসে স্মারকলিপি প্রদান করেন হাওর বাঁচাও আন্দোলন কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আবু সুফিয়ান, সুনামগঞ্জ জেলা কমিটির সহসভাপতি আলী হায়দার, জেলা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক প্রভাষক ফজলুল করিম সাঈদ।
প্রধানমন্ত্রী বরাবরে স্মারকিলিপিতে তারা উল্লেখ করেন, সুনামগঞ্জে এ বছরে বোর ফসলের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১৩ লক্ষ মে:টন। যা দেশের খাদ্যের যোগান দেবে। জেলার ১২ টি উপজেলার ৫২ টি হাওরে ২ লক্ষ ২২ হাজার ৬শ ৯৫ হেক্টর জমিতে বোর চাষ করা হয়েছে। সুনামগঞ্জের কৃষকরা আশায় বুকবেধে আছে এ বছর ১৩ লক্ষ মে:টন ধান উৎপাদনের জন্য।
কাবিটা স্কীম প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কমিটি সুনামগগঞ্জ জেলার ৪১ টির অধিক হাওরে ৭২৭ টি প্রকল্প বাস্থবায়ক কমিটির মাধ্যমে ১শ ২১ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী ২০২১ সালের ১৫ ডিসেম্বর হাওরের ফসল রক্ষা বাঁধের কাজ শুরু হয়ে ২০২২ সালের ২৮ ফেব্রæয়ারি বাঁধের কাজ শেষ হওয়া কথা ছিল। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোন বাঁধেরই শতভাগ শেষ হয়নি। এখনোও হাওরের ধান কাঁচা রয়েছে এ মুহুর্তে গত ২ এপ্রিল তাহিরপুর উপজেলার বাঁধভেঙ্গে টাঙ্গুয়ার হাওর তলিয়ে যায়, ৪ এপ্রিল তলিয়ে যায় শাল্লা, ছাতক ও সুনামগঞ্জ সদর উপজেলার কয়েকটি হাওর, ৫ এপ্রিল বিকেল ৫টার দিকে ডুবে যায় ধর্মটপাশা উপজেলার চন্দ্র সোনার তাল হাওরটি যেটি ২০১৭ সালে প্রথম ডুবেছিল। এমতাবস্তায় সুনামগঞ্জের কৃষকদের সোনালী ফসল রক্ষায় আপনার সহযোগিতা ছাড়া আমাদের আর কোন গন্থব্য নেই।
হাওরে শত কোটি টাকার অধিক প্রকল্পে নেই কোন মনিটরিং, নেই কাজের গুণগতমান বজায়ের চেষ্টা। কাজের শুরু থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে, উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও পানি উন্নয়ন বোর্ডের এসও দের বিরুদ্ধে। তাদের দুর্নীতির কারণেই বাঁধের কাজের মান ভাল হয়নি। তাই সামান্য বৃষ্টিতেই বাঁধভেঙ্গে হাওরে পানি প্রবেশ করছে। জেলা দোয়ারাবাজার দোয়ারাবাজার উপজেলার সুরমা ইউনিয়নে প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটি (পিআইসি) কিংবা হাওরের কৃষকদের মধ্যে ঘুরেফিরেই আসছে এখন এখলাচুর রহমান ফরাজির নাম। সুরমা ইউনিয়নের ১৯টি পিআইসির মধ্যে ১১টিতে সভাপতি-সেক্রেটারি এখলাছ ফরাজী ও তাঁর আত্মীয়-স্বজনেরা। এখলাছুর রহমান ফরাজী উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের বাসিন্দা।
১৯টি পিআইসির বরাদ্দ ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৪ কোটি টাকা। পিআইসির তালিকায় দেখা গেছে, সুরমা ইউনিয়নের ১ নম্বর পিআইসির সভাপতি এখলাছুর রহমান ফরাজি। তাঁর ভাতিজা আতাউর রহমান ও ভাগনে মাসুদ যথাক্রমে ৩ নম্বরের সভাপতি ও সেক্রেটারি। আত্মীয় শহীদুল ইসলাম ৪ নম্বর পিআইসির সদস্য সচিব। ভাতিজা আব্দুল জলিল ৭ নম্বরের সভাপতি। ভগ্নিপতি মো. রমজান আলী ২৪ নম্বরের সদস্যসচিব। ভাতিজা মোশারফ হোসেন ফরাজী ও ছোট ভাই ইলিয়াস ফরাজী যথাক্রমে ২৮ নম্বর পিআইসির সভাপতি ও সদস্যসচিব। ভাতিজা কলিম উদ্দিন ৪০ নম্বরের সদস্যসচিব। আরেক ভগ্নিপতি রহমত উল্লাহ মানিক ৪১ নম্বর পিআইসির সদস্যসচিব।
শুধু এখলাছুর রহমান ফরাজীর আত্মীয়-স্বজন নয়, ৬ নম্বর পিআইসিতে অসুস্থ দৃষ্টিহীন জয়নাল আবেদিনকে সভাপতি করা হয়েছে। ৩৯ নম্বর পিআইসির সভাপতি করা হয়েছে মঈনুল ইসলাম নামের একজনকে। অথচ সঙ্গে যে মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে তা রাজবাড়ী জেলার এক ব্যক্তির। ৪৩ নম্বর পিআইসির সদস্যসচিব করা হয়েছে চান মিয়া নামের একজনকে। অথচ মোবাইল নম্বর দেওয়া হয়েছে আরেক ব্যক্তির। এভাবে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় প্রকল্প বাস্থবায়ন কমিটি গঠনে নয়ছয় করেছে কাবিটা প্রকল্প বাস্থবায়ন ও মনিটরিং কমিটি। এ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনে অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে।
সুনামগঞ্জ জেলার, মাটিয়ান হাওর, শনির হাওর, দেখার হাওর, জামখলা হাওর, কাঁচিভাঙ্গা হাওর, সাংহাই হাওর, খাই হাওর, নাইন্দার হাওর, মাচুখালি হাওর, চাওলির হাওর, খরচার হাওর, আঙ্গুর আলী হাওর, হালির হাওর, পুটিয়ার হাওর, চাপতির হাওর, বরাম হাওর, টাঙ্গুয়ার হাওর, কালিয়াকোটা হাওর, উৎগল হাওর, নলুয়ার হাওর, সুরাইয়া বিবিআনা হাওর, চায়ার হাওর, ভান্ডাবিল হাওর, ভেড়ারডহর হাওর, মহালিয়া হাওর, পাখনার হাওর,  চন্দ্রসোনারথাল হাওর, রুইবিল হাওর, সাপারিয়া পাথারিয়া হাওর, গুরমা হাওর, কানলার হাওরে কৃষকদেরা সোনার ফসল আজ হুমকির সম্মুখিন। বাঁধের কাজ শেষ না হওয়ায় যে কোন সময় হাওরগুলো তলিয়ে গিয়ে কৃষকের সর্বনাশ হতে পারে। এ বিষয়ে আপনি আমাদের সর্বশেষ ভরসা স্থল।
হাওরের ফসল রক্ষার জন্য আপনার সরকার ১২০ কোটি টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। কিন্তু কিছু দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তার কারণে সরকারের বড় একটি অর্জন ¤øান হয়ে যাচ্ছে। ৩ এপ্রিল রাত থেকে সাধারণ কৃষকরা তাদের বাঁধের দায়িত্ব নিয়েছেন। তারা নিজেরা স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে বাঁধ রক্ষায় কাজ করে যাচ্ছেন। অভিযোগ উঠেছে প্রকল্প বাস্তবায়ন কমিটির সদস্যরা বাঁধ এলাকায় না থেকে গাঁডাকা দিয়েছেন। যেহেতু এখন পর্যন্ত কোন পিআইসি স্কীম বাস্থবায়ন ও মনিটরিং কমিটির হাতে বাঁধের কাজ শেষ করে হস্তান্তর করেননি সেহেতু বাঁধের কাজ পিআইসি করার কথা। তাই হাওর রক্ষায় আপনার সহযোগিতা আকান্ত প্রয়োজন।