• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

সুনামগঞ্জে আরো ৩ টি বাধঁ তলিয়ে ফসল হানী,ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কটি

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত এপ্রিল ৫, ২০২২
সুনামগঞ্জে আরো ৩ টি বাধঁ তলিয়ে ফসল হানী,ঝুঁকিপূর্ণ বেশ কটি
লতিফুর রহমান রাজু, সুনামগঞ্জ:  উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে গতকাল বিকালে( ৪  এপ্রিল)
সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার বাঘার হাওরে ও খললির হাওরে বাঁধ ভেঙ্গে পানি প্রবেশ করেছে। এছাড়া মধ্যনগর উপজেলার ঘনিয়াউরি হাওরে ও পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে গেছে। তবে পানি উন্নয়ন বোর্ড এ গুলোর দায় নিচ্ছে না।
কৃষকদের চোখের সামনেই ভেঁসে যাচ্ছে হাজার হাজার একর ফসলী জমি।
সোমবার (৪ এপ্রিল) বিকেলের দিকে নদীর পানি উপচে গিয়ে হাওরে পানি প্রবেশ করেছে। দ্রুত তলিয়ে যাচ্ছে কৃষকদের ফসল। নিজেদের ফসল তলিয়ে যাওয়ার দৃশ্য দেখে স্কুল পড়ুয়া শিক্ষার্থীরাও কাঁচি হাতে নেমেছে ধান কাটতে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের আওতার বাহিরে হওয়ায় এই বাঁধটিতে দেওয়া হয়নি কোনো প্রকল্প। শুরু থেকেই বাঘার হাওরে প্রকল্প দেয়ার দাবি জানালেও পাউবো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

স্হানীয় সূত্রে জানা যায়, বাঘার বাঁধ এলাকায় প্রায় এক হাজার একর জমি রয়েছে। শুরু থেকেই এই এলাকায় হাওর রক্ষা বাঁধ নির্মাণের দাবী জানানো হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এমন গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় প্রকল্প না দিয়ে অপ্রয়োজনীয় জায়গায় প্রকল্প দিয়ে সরকারের টাকা লোপাট করছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।

এদিকে পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো)’র দাবী করছে সার্ভে টিমের ম্যাজারমেন্ট অনুযায়ী প্রকল্প দেয়া হয়েছে। যার ফলেই এই হাওরের বাঁধটি আওতার বাহিরে।
শাল্লার দামপুর গ্রামের কৃষক আব্দুল আওয়াল বলেন, ১০ কেয়ার (কেদার) জমি করেছি। আর এই হাওরেই সকল জমি। আমার চোখের সামনেই সবকিছু ভেঁসে যাচ্ছে। এখন ছেলে মেয়ে নিয়ে কিভাবে চলবো এই চিন্তাই করছি।
পঞ্চম শ্রেনী পড়ুয়া ছাত্র জনি সরকার জানায়, ফসল তলিয়ে যাওয়ার পর বাবার কান্না দেখে নিজেই কাঁচি হাতে ধান কাটতে আসছি। কিন্ত ধান এখনো পাকেনি। এরপরও তলিয়ে যাওয়ার চেয়ে কিছু ধান ঘরে নিতে পারলে কিছু দিনের খাবার হবে।

শাল্লা পানি উন্নয়ন বোর্ডের সহকারি প্রকৌশলী (এসও) আব্দুল কাইয়ুৃম বলেন, আমাদের হাওর রক্ষা বাঁধ এখনো ভাঙ্গেনি। যেদিকে বাঘার হাওরে পানি প্রবেশ করেছে এটা আমাদের তালিকার বাহিরে।
আর আমাদের আওতায় যে বাঁধগুলো রয়েছে সর্বাক্ষনিক মনিটরিং করছি। তবে ঝুঁকিপূর্ণ কোনো বাঁধ শাল্লায় নেই।

শাল্লা উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো.আবু তালেব জানান, এখানে সরকারি কোন বাঁধ দেয়া হয়নি, এটি পরিকল্পনার বাহিরে ছিল। কৃষকরা প্রতিবছর ঝুকি নিয়েই এখানে ধান চাষ করেন তাই এবার পানি অভার ফ্লো হয়ে এই হাওরে ডুকে পড়েছে।

তিনি আরও জানান, আমরা খোঁজ নিয়ে শুনেছি ৭-৮ হেক্টর জমির ফসল তলিয়ে গেছে। আমরা তাদের বলেছি দ্রুত ধান কাটতে আর যারা বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তাদের আমরা সহায়তার আওতায় নিয়ে আসবো।

মধ্যনগর উপজেলার মেঘনা, মরিচা করি,শোল ডুয়ারী, গজতলা, ও শালদিগা জাঙ্গাল ঝুঁকিপূর্ণ রয়েছে। গনিয়া কুরি হাওর গতকাল বিকেলে পানি প্রবেশ করে ফসল তলিয়ে কৃষকদের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
জামালগঞ্জ উপজেলার নির্বহী অফিসার বিশ্বজিত দেব জানান  মোট ৩৬ টি পিআইসির মধ্যে ঝুঁকিপূর্ণ আছে হালির হাওরের গইননার ভাঙ্গা  বাঁধ, শনির হাওরের নান্টুখালী ক্লোজার, ও মহালিয়া হাওরের বেড়িবাঁধ। বাকী গুলো এখন পর্যন্ত ভাল আছে। তিনি আরও বলেন কাকঁড়ার গর্ত দিয়ে পানি প্রবেশ করে সুড়ঙগ বা বুরুংগা তৈরি করে বাঁধের চরম সর্বনাশ করে। বৌলাই নদীর পূর্ব পাড়ে হালির হাওর আর পশ্চিম পাড়ে শনির হাওর। এই বৌলাই নদীতে ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল যাদুকাটা নদী হয়ে প্রবেশ করে। নদীর আকৃতি ছোট হওয়ার কারণে ধারণ ক্ষমতা কম থাকায় পানির চাপে বাঁধ ভাঙ্গার আশংকা থাকে। জামালগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ ইউএনও বিশ্বজিত দেব  ও তাহিরপুর উপজেলার চেয়ারম্যান করুনা সিন্ধু চৌধুরী বাবুল সার্বক্ষণিক লোকজন নিয়ে বাঁধের কাজ করছেন।
তাহিরপুর উপজেলার ইউএনও রায়হান কবির ফসল রক্ষার জন্য যাদুকাটা পাটলাই ও বৌলাই নদীতে মালবাহী নৌযান চলাচল নিষিদ্ধ করেছেন। যাদুকাটা বালু পাথর মহালের ইজারাদার সেলিম আহমদ বালু-পাথর উত্তোলন বন্ধ রেখে স্বেচ্ছা শ্রমে হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধের কাজ করার অনুরোধ করেছেন। জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর হোসেন সবাই কে বাঁধের কাজে অংশ গ্রহন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জগন্নাথপুর উপজেলার ২৮  টি পিআইসির মধ্যে ১৩  টি ঝুঁকিপূর্ণ। এদিকে হাওর বাঁচাও আন্দোলন আগামীকাল হাওরের ফসল রক্ষাবাঁধের কাজে অনিয়ম দুর্নীতির প্রতিবাদ জানিয়ে বিক্ষভ
 মিছিল ও প্রধান মন্ত্রী বরাবর স্মারক লিপি দেয়ার ঘোষনা দিয়েছে।