সেই মামলাকে প্রভাবিত করতে ওসিকে প্রচ্ছন্নভাবে চাপ প্রয়োগের ইঙ্গিত বুঝা যায় এমপি শম্ভুর কথায়। এছাড়া সদ্য অনুষ্ঠিত হওয়া জেলা যুবলীগের সম্মেলনে কমিটির সভাপতি পদ চাওয়া এক প্রার্থীকে নিয়েও কথোপকথন হয় তাদের। শুক্রবার কল রেকর্ডটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে জেলাজুড়ে আলোচনার সৃষ্টি হয়।
ফোনালাপের বিষয়টি ওসি তারিকুল ইসলাম নিশ্চিত করলেও কীভাবে এটা ফাঁস হয়েছে, তা জানেন না বলে দাবি করেন তিনি। অন্যদিকে ফাঁস হওয়া কথোপকথনের বিষয়ে কথা বলার জন্য সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুকে একাধিকবার তার মোবাইলে কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।
এ বিষয়ে ওসি তারিকুল ইসলাম বলেন, রেকর্ডটি আমিও শুনেছি। আমার কাছে অনেকেই জানতে চেয়েছেন। এটা আমারই কণ্ঠ। গত ২রা ডিসেম্বর এমপি স্যারের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। এমন কথা তিনি আমাকে অনেকবারই বলেছেন। তবে এটা কিভাবে ফাঁস হয়েছে সেটা বুঝতে পারছি না।
বরগুনা জেলা যুবলীগের সদ্য বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক ও সম্মেলনে সভাপতি পদপ্রার্থী সাহাবুদ্দিন সাবু বলেন, কথোপকথন আমি শুনেছি। এমপি মহোদয় মুরব্বি মানুষ, কি কারণে ওসিকে তিনি আমার কথা বলেছেন আমি বুঝতে পারছি না। আমি এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চাইছিনা।
ফোনালাপ ফাঁসের পর এ বিষয়ে ৬নং বুড়িরচর ইউনিয়নের চেলারম্যান হুমায়ুন কবির বলেন, গত বছরের ২১শে জুন বরগুনা সদর উপজেলার বুড়িরচর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীক নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন সংসদ সদস্য ধীরেন্দ্র দেবনাথ শম্ভুর ভায়রা সিদ্দিকুর রহমান। তিনি ওই নির্বাচনে তার কাছে হেরে যান। ওই নির্বাচনের আগে ও পরে এই দুই পক্ষের মধ্যে একাধিক সংঘর্ষ ও সহিংসতার ঘটনা ঘটে। উভয় পক্ষ থানায় অন্তত ১০টি মামলা করে। এর মধ্যে এমপির ভায়রা সিদ্দিকুর রহমানের লোকজন ছয়টি এবং তার লোকজন চারটি মামলা করেন। নির্বাচনে সাংসদের ভায়রা সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমানের অনুসারীদের হামলার ঘটনায় আমার নেতাকর্মীরা চারটি মামলা করেছিল। সেই মামলার চূড়ান্ত প্রতিবেদন পুলিশ যাতে আদালতে দাখিল করে, সিদ্দিকুর রহমান সেই চেষ্টা করছিলেন। তাতে কাজ না হওয়ায় সাংসদকে দিয়ে ওসিকে বদলির হুমকি দিয়ে এই কাজ করাতে চাইছেন তিনি।
অন্যদিকে বরগুনা সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বুড়িরচর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তিনি এক পক্ষের মামলা নিষ্পত্তি করতে বলেননি। এটা ভুয়া কথা। এ বিষয়ে আমি বেশি কিছু জানি না। আমি জেনে তারপর জানাবো।
সাংসদ সদস্য শম্ভু ও ওসি তারিকুলের কথোপকপন এখানে তুলে ধরা হলো :
সংসদ সদস্য: ওসি সাহেব।
ওসি: জি স্যার আসসালামু আলাইকুম।
সংসদ সদস্য: আপনার পরবর্তীতে দারোগা কি (ওসি পদটি দারোগা নয়, পরিদর্শক) বরগুনায় আসছে?
ওসি: পরবর্তী?
সংসদ সদস্য: আপনি জানেন না, আপনি যখন চলে যাবেন, তখন যে আসবে সে কি আসছে বরগুনায়?
ওসি: স্যার
সংসদ সদস্য: প্রশ্নটা অনেক কড়া, না?
ওসি: অনেক কঠিন, কড়া স্যার। স্যার, আমি তো আপনাদের রেখে যেতে চাই না।
সংসদ সদস্য: ঠিক আছে। আচ্ছা আপনি কোথাও বলেছেন সাবু (সাহাবুদ্দিন সাবু, জেলা যুবলীগের সভাপতি প্রার্থী) যুবলীগে আপনার প্রার্থী?
ওসি: না স্যার।
সংসদ সদস্য: এই কথা আপনি কারও সাথে বলছেন?
ওসি: আমার প্রার্থী হয় কীভাবে, আমি কি রাজনীতি করি?
সংসদ সদস্য: আমি কিন্তু বিশ্বাস করি না বলছেন। বলছেন কি না, চিন্তা করেন।
ওসি: না স্যার।
সংসদ সদস্য: মেশেন তো সবার সাথে, কোন গু-ার ধারে বসে কী কইছেন কে জানে।
ওসি: স্যার এটা ফালতু কথা, ফালতু কথা আমি বলতে পারি না।
সংসদ সদস্য: এটা আপনি পারেন না, এসপি সাহেব কইতে পারে?
ওসি: না স্যার সে ও বলতে পারে না, আপনারা বলতে পারেন।
সংসদ সদস্য: বোঝেন না এলাকায় কত কথাই না হয়।
ওসি: এটা কোনো কথা স্যার? আমরা বলব কেন, এক সময় আমরা ছাত্রলীগ করেছি ঠিক আছে। এখন তো বলার কোনো স্কোপ নাই। আজ তো স্যার বিএনপিকেও প্রোগ্রাম করতে দিলাম।
সংসদ সদস্য: তারপর, করবে না কেন? ভদ্র আচরণ করলেই হয়, অভদ্র আচরণ করলেই পিটান। অভদ্র, মারমুখী হইলে তখন আমরা পুলিশকেও জিজ্ঞেস করব না, তখন আমাদের পোলাপান পিটাইবে। বইলা দিয়েন আপনারা (বিএনপি) করলে ভদ্রভাবে কইরেন।
ওসি: জি স্যার, তারা ভদ্রভাবেই করছে।
সংসদ সদস্য: ৬ নম্বরে (বুড়িরচর ইউনিয়ন) ইউনিয়ন ইলেকশনের সময় যে মামলাগুলা হইছিল, সেগুলা কী অবস্থায় আছে?
ওসি: স্যার ওগুলা কি পেন্ডিং আছে।
সংসদ সদস্য: হ্যাঁ পেন্ডিং আছে না। রিপোর্ট তো দেন নাই এখনো। যাওয়ার আগে ওগুলা গুছাইয়্যা দিয়া যাইয়েন।
ওসি: দিমু স্যার।
সংসদ সদস্য: আবার তাইলে আমরা অ্যাডিশনাল, এএসপি কইর্যা নিয়া আসমু।
ওসি: না স্যার দরকার নাই, এই র্যাঙ্কেই যেন বাড়ি যাইতে পারি।
এ সময় সংসদ সদস্যকে বলতে শোনা যায়, অনেকে এএসপি হইতে চায় না, ওসিই থাকতে চায়।