বিবিএন ডেস্ক: ইংল্যান্ডে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে কোনও নোটিশ ছাড়াই ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারাতে পারে ব্রিটিশ বাংলাদেশিসহ ৬০ লাখ নাগরিক। আইনটি পাস হলে, ব্রিটেনে এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটি থেকে আসা প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন নাগরিকত্ব মর্যাদা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবিত নতুন বিল পাশ হলে কোনো পূর্ব নোটিশ ছাড়াই তারা ব্রিটিশ নাগরিকত্ব হারাতে পারেন বলে ব্রিটিশ গণমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে। গার্ডিয়ান জানায়, ওই বিল পাশ হলে ব্রিটেনে এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিটি থেকে আসা প্রতি পাঁচ জনের মধ্যে দুই জন নাগরিকত্ব মর্যাদা হারানোর ঝুঁকিতে পড়বেন।
চলতি বছরের নভেম্বরের শুরুতে হালনাগাদ করা কোনো ব্যক্তিকে নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত করার সিদ্ধান্তের নোটিশ শিরোনামের ওই বিলে যৌক্তিকভাবে বাস্তবসম্মত না হলে কিংবা জাতীয় নিরাপত্তা বা কূটনৈতিক সম্পর্কের স্বার্থে অথবা জনস্বার্থে সরকারকে আগে থেকে কোনো নোটিশ দেওয়া ছাড়াই এথনিক মাইনোরিটি কমিউনিাটি আসা নাগরিকের নাগরিকত্ব কেড়ে দেওয়ার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।
সমালোচকরা বলছেন, সিরিয়ায় ইসলামিক স্টেটে যোগ দিতে স্কুল ছাত্রী হিসেবে ব্রিটেন থেকে পালিয়ে যাওয়া শামীমা বেগমের নাগরিকত্ব বাতিল নিয়ে ইতোমধ্যেই বিতর্ক উঠেছে। তাই নোটিশের ছাড়াই নাগরিকত্ব বাতিলের বিল পাশ হলে দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ক্ষমতাকে আরও কঠোর করে তুলবে।
এ ব্যাপারে ইনস্টিটিউট অফ রেস রিলেশনসের সহ সভাপতি ফ্রান্সিস ওয়েবার জানান, নতুন এই অধ্যাদেশ কার্যকর হলে ব্রিটেনে জন্ম ও বেড়ে ওঠার পরও নির্দিষ্ট শ্রেণির নাগরিক দেশটিতে অভিবাসী হয়ে পড়তে পারেন। তাদের নাগরিকত্ব, এবং তাদের সব ধরনের অধিকারও অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
অফিস ফর ন্যাশনাল স্ট্যাটিসটিকসের সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানে দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ৪১ শতাংশ নাগরিক কোনও নোটিশ ছাড়াই নাগরিকত্ব হারাতে পারেন। জানা গেছে, ২০০৬ সাল থেকেই ব্রিটেনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে ব্রিটিশ জনগণের স্বার্থে দ্বৈত নাগরিকদের নাগরিকত্ব বাতিলের ক্ষমতা বিদ্যমান রয়েছে। ২০১৪ সালে রাষ্ট্রের হাতে নাগরিকত্ব বাতিলের এই ক্ষমতা বাড়ানো হয়। তখন নিয়ম করা হয়, বিদেশে জন্ম নেওয়া ব্রিটিশ নাগরিকদের ক্ষেত্রে দ্বৈত নাগরিকত্ব নেই, এমন নাগরিকদেরও সরকার ব্রিটেনের স্বার্থে চাইলে রাষ্ট্রহীন করতে পারবে।
এমন বাস্তবতার মধ্যে সরকারের এ নতুন বিলটি পাস হলে ব্রিটেনের নাগরিকদের রাষ্ট্রহীন করার ক্ষমতা আরও বড় পরিসরে সরকারের হাতে চলে যাবে। খসড়া বিলের ৯টি ধারায় বলা আছে, সরকার জনস্বার্থে প্রয়োজনে ঝুঁকিপূর্ণ মনে করলে কোনও নোটিশ ছাড়াই নাগরিকত্ব বাতিল করতে পারবে।
উল্লেখ্য, ২০১১ সালে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পরিসংখ্যান অনুসারে ব্রিটেনে বাংলাদেশে জন্ম নেওয়া ২ লাখ ১২ হাজারের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক রয়েছেন। এ বিতর্কিত বিলটি যাতে না পাস হয় সেজন্য ব্রিটেনে বিভিন্ন সংগঠন সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাচ্ছে।