বিবিএন ডেস্ক: কে হচ্ছেন ২৩তম প্রধান বিচারপতি। এ নিয়ে আইনাঙ্গনে চলছে চুলচেরা বিশ্লেষণ। ৩০ ডিসেম্বর প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের শেষ কার্যদিবস। তিনি অবসরে যাবার পর আপীল বিভাগে চার বিচারপতি থাকবেন। তাদের মধ্যে থেকেই একজনকে পরবর্তী প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয়া হবে।
এদিকে একটি সূত্র জানিয়েছে, প্রধান বিচারপতি নিয়োগের আগেই আপীল বিভাগে নতুন বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। পাশাপাশি ষোড়শ সংশোধনীর রিভিউ শুনানি শীঘ্রই শুরু হবে।
প্রধান বিচারপতি ছাড়াও আপীল বিভাগে রয়েছেন বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ননী ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। শেষের চারজনের মধ্যে একজন হবেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংবিধান অনুযায়ী পরবর্তী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দিবেন।
প্রধান বিচারপতির নিয়োগের আগে আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ হবে কিনা
এ প্রসঙ্গে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, দেখা যাক। আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে। এটা চলমান প্রক্রিয়া। প্রধান বিচারপতি যদি বলেন, তা হলে দেয়া হবে। আর না বললে থাকবে। তিনি আরও বলেন, এর আগেই ষোড়শ সংশোধনীর মামলার রিভিউ শুনানির উদ্যোগ নেয়া হবে। সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের মামলাটি বর্তমানে আপীল বিভাগে রিভিউয়ের জন্য আছে। আমরা সুপ্রীমকোর্টের রুলসের ‘এরর এ্যাপারেন্ট অন দ্য ফেস অব দ্য রেকর্ড’ গ্রাউন্ডে এ রিভিউ চেয়েছি। মামলাটি শুনানির জন্য আমরা ইতোমধ্যে আপীল বিভাগের কাছে অনুরোধ জানিয়েছি। আপীল বিভাগ শীঘ্রই এ মামলাটি শুনে দেবেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।
এ্যাটর্নি জেনারেল এএম আমিন উদ্দিন বলেন, প্রধান বিচারপতি নিয়োগ প্রদান করেন রাষ্ট্রপতি। কে হবেন তা তিনিই নির্ধারণ করবেন। বর্তমানে আপীল বিভাগে বিচারপতি মোহাম্মদ ইমান আলী, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি মো. নুরুজ্জামান ও বিচারপতি ওবায়দুল হাসান রয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন হবেন দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি।
রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৫ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেন। সংবিধানের ৯৫ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি রাষ্ট্রপতি কর্তৃক নিযুক্ত হইবেন এবং প্রধান বিচারপতির সহিত পরামর্শ করিয়া রাষ্ট্রপতি অন্যান্য বিচারককে নিয়োগ করিবেন।’ সংবিধানে এ বিষয়ে বিস্তারিত আর কিছু বলা হয়নি। তবে দীর্ঘদিনের রীতি অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি আপীল বিভাগের যে বিচারপতিকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেবেন, তার বিষয়ে সম্মতি দিয়ে প্রথমে আইন মন্ত্রণালয়কে জানাবেন।
এদিকে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহম্মেদ বলেন, সংবিধান অনুযায়ী নিয়োগ হবে। সংবিধানে যে বিষয়গুলো আছে সেটাই মেনে চলা উচিত। বর্তমানে আপীল বিভাগে ২৩ হাজার ৬১৭টি মামলা রয়েছে। সেই পরিসংখ্যানে আপীল বিভাগে একজন বিচারপতির গড়ে মামলা ৪ হাজার ৭২৩টি। আইনজীবীগণের অভিমত এত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে হলে দ্রুত আপীল বিভাগে আরও বিচারপতি নিয়োগ করা প্রয়োজন। আইন মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে , শীঘ্রই আপীল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগ দেয়া হবে।
আপীল বিভাগে যেখানে ১১ বিচারপতি ছিলেন সেখানে বর্তমানে আছেন প্রধান বিচারপতিসহ ৫ জন। অন্যদিকে হাইকোর্টে আছেন ৯১ জন বিচারপতি। সর্বশেষ আপীল বিভাগে ২০২০ সালের ২ সেপ্টেম্বর সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে দুই বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়। তার আগে ২০১৮ সালের ৮ অক্টোবর তিনজন বিচারপতিকে নিয়োগ দেয়া হয়। বর্তমানে আপীল বিভাগে মামলার চেয়ে বিচারপতির সংখ্যা কম।
সংবিধানের ৯৪ (২) অনুচ্ছেদ অনুযায়ী রাষ্ট্রপতি সুপ্রীমকোর্টের আপীল বিভাগ ও হাইকোর্ট বিভাগে বিচারকের সংখ্যা নির্ধারণ ও নিয়োগ করে থাকেন। ওই অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, ‘প্রধান বিচারপতি (যিনি ‘বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি’ নামে অভিহিত হইবেন) এবং প্রত্যেক বিভাগে আসন গ্রহণের জন্য রাষ্ট্রপতি যে সংখ্যক বিচারক নিয়োগের প্রয়োজনবোধ করবেন, সেই সংখ্যক অন্যান্য বিচারক লইয়া সুপ্রীমকোর্ট গঠিত হইবে।’ সংবিধান অনুযায়ী ৬৭ বছর বয়স পর্যন্ত বিচারপতি পদে থাকা যায়।’