বিবিএন ডেস্ক: শায়েখ আদেল কালবানী। তার পুরো নাম শায়েখ আদিল বিন সেলিম বিন সাইদ আল কালবানি আবু আবদুল্লাহ। রিয়াদের বাদশাহ খালিদ মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ মাসজিদুল হারামের খণ্ডকালীন সাবেক ইমাম। তিনি রমজান মাসে ১৪২৯ হিজরিতে তারাবীহ নামাজে ইবাদতকারীদের নেতৃত্বের দায়িত্ব পান।
ইতোমধ্যে তার প্রাণ জুড়ানো তেলাওয়াত ইউটিউবে মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয়েছে। ইসলামের দাঈ হিসেবেও তিনি বেশ সমাদৃত। তবে নতুন করে তিনি বিশ্বজুড়ে সমালোচনায় এসেছেন ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে।
‘Combat Field’ zone of Riyadh Season 2021 এর একটি টিভি বিজ্ঞাপনে প্রাক্তন কাবার ইমাম শায়েখ আদিল বিন সালেম বিন সাঈদ আল-কালবানি অভিনয় করেছেন। তার সঙ্গে অভিনয়ে আরো আছেন ফুটবল তারকারা।
‘Combat Field’ zone of Riyadh Season 2021 এর টিভি বিজ্ঞাপন সোশ্যাল মিডিয়ায় তোলপাড় সৃষ্টির পাশাপাশি সমালোচিত হচ্ছেন কাবার সাবেক ইমামও।
তিনি যে টিভি বিজ্ঞাপনটিতে অংশ নিয়েছিলেন তাতে দেখা যায় ‘সৈন্যরা যুদ্ধে নিযুক্ত এবং যুদ্ধের অস্ত্র ব্যবহার করছে।’ ২ মিনিট ৪১ সেকেন্ডের ভিডিও ক্লিপটিতে তাকে একটি সংক্ষিপ্ত এন্ট্রি করতে দেখা যায়।
জানা যায়, সৌদি আরবের ‘জেনারেল অথরিটি ফর এন্টারটেইনমেন্ট’ টুইটারে ভিডিওটি শেয়ার করেছেন জনপ্রিয় তারকা তুর্কি আল-শেখের একাউন্টের মাধ্যমে। সেই ভিডিওটি নিজের টুইটারে শেয়ার করে শায়েখ আদিল আল-কালবানি টুইটের নীচে রসিকতা করে লিখেন, ‘আপনি কি মনে করেন আমি হলিউডে যেতে পারি?”?’
রিয়াদের বাদশাহ খালিদ মসজিদের ইমাম ও খতিব এবং মক্কার গ্র্যান্ড মসজিদ মাসজিদুল হারামের খণ্ডকালীন সাবেক ইমামের এমন দায়িত্ব জ্ঞানহীন কাজে ইতোমধ্যে শোস্যাল মিডিয়াসহ অনলাইন-অফলাইনে সমালোচনার ঝড় বইছে।
আরো পড়ুন- মায়ের দু‘আ আমাকে কাবা শরীফের ইমাম বানিয়েছে: শায়েখ আদেল কালবানী
উল্লেখ্য, তিনি এর আগেও মিউজিককে জায়েজ বলে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন।
প্রসঙ্গত, তিনি দরিদ্র ঘরের সন্তান। কিন্তু তার পেছনে ছিল তার মায়ের দু‘আ। সে কথাই ২০১৭ সালে জানিয়েছিলেন ইমাম শাইখ আদিল আল কালবানি।
লন্ডনের এক কনফারেন্সে পবিত্র কাবা শরীফের এক ইমাম আল কালবানি এই কাহিনী বর্ণনা করেন। এতে তিনি তার জীবনের একটি বাস্তবতা তুলে ধরেন। তিনি জানান, তার উপর কোনো কারণে রেগে গিয়ে তার মা আল্লাহর কাছে যে দু‘আ করেছিলেন তাই তার জীবনে সত্যে পরিণত হয়েছে।
ছোটবেলায় ইমাম কালবানি খুব দুষ্ট প্রকৃতির ছিলেন বলে জানালেন। দুষ্টুমি করে প্রায়শই তিনি মাকে রাগাতেন। কিন্তু তার মা ছিলেন খুবই দ্বীনদার একজন মহিলা, তিনি জানতেন আল্লাহর কাছে দু‘আর কী শক্তি।
তিনি দু‘আ করাটা তার অভ্যাসে পরিণত করেছিলেন। ছেলের উপর যখনি রেগে যেতেন তখনি তিনি বলতেন, ‘আল্লাহ যেন তোমাকে পথ দেখান! আর তিনি যেন তোমাকে কাবার ইমাম বানান!’
ইমাম আল কালবানি বললেন, ‘আল্লাহ তার দু‘আ কবুল করেছেন এবং আমি আজ কাবার ইমাম।’
কালো মানুষ শাইখ আদিল আল কালবানি পারস্য উপসাগরীয় এক দরিদ্র পরিবারের সন্তান। নিউইয়র্ক টাইমস-এর সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে শাইখ কালবানি বলেছেন, ‘মসজিদুল হারামের নামাজের ইমামতি করা অসাধারণ সম্মানের, আর এই কাজ শুধুমাত্র আরব ভূখণ্ডের আরবদের জন্যই নির্ধারিত।’
নিজের জীবনের কথা বলতে গিয়ে ইমাম এবার ফিরে গেলেন সেই সময়টিতে, যখন তিনি জানতে পারেন যে, বাদশাহ আবদুল্লাহ তাকে প্রথম কালো মানুষ হিসেবে মসজিদ আল হারামের ইমাম নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি বললেন, মাশাআল্লাহ!
ইমাম বলেন, যখন আপনার সন্তান খারাপ আচরণ করবে তখন তাকে গালমন্দ করবেন না। এতে বিপর্যয় ঘটতে পারে। আমি একজনকে জানি যিনি তার ছেলেকে বলেছিলেন— ‘যাও মর’, অতঃপর তিনি সেটার জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন, যখন সেই দিনই তার ছেলে মারা যায়। সুবহানআল্লাহ!
প্রিয় সন্তানের পিতা ও মাতাগণ! আপনাদের ভাষা সংবরণ করুন। আপনার ছেলে-মেয়েদের জন্য ভাল দু‘আ করার অভ্যাস তৈরি করুন, এমনকি যখন আপনি অনেক রেগে যান তখনও তার জন্য দু‘আ করুন।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তিনটি দু‘আ আল্লাহ কখনও প্রত্যাখ্যান করেন না, ছেলেমেয়েদের জন্য তার পিতামাতার দু‘আ, রোজাদারের দু‘আ এবং মুসাফিরের দু‘আ’। [বায়হাকী, তিরমিযী, হাদীসটি সহীহ সূত্রে বর্ণিত]
যারা এই ম্যাসেজ অন্যদেরকে জানাবেন তাদের জন্য আমি আল্লাহর কাছে দু‘আ করি, বিচার দিবসে এটা দিয়ে তিনি যেন উপকৃত হন অথবা এটা তার মুক্তির কারণ হয়।