নিজস্ব প্রতিবেদক:সুনামগঞ্জের ছাতকে স্টিলের স্কেল দিয়ে তিন এতিম ছাত্রদের ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার হওয়ায় অবশেষে গ্রেফতার হলেন সেই সুপার। বুধবার (১৭ নভেম্বর) সকালে উপজেলার গোবিন্দগঞ্জ এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করে থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃত মাওলানা আবদুল মুকিত উপজেলার ইসলামপুর ইউনিয়নের রহমতপুর গ্রামের আবদুল গণির পুত্র। তিনি কালারুকা ইউনিয়নের রামপুর গ্রামে অবস্থিত হাজী ইউসুফ আলী এতিমখানা হাফিজিয়া দাখিল মাদরাসার সুপার।
থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ২০ ডিসেম্বর রাতে ঘুমন্ত অবস্থায় মাদরাসা কক্ষে প্রশ্রাব করে হিফজ শাখার ছাত্র আবু তাহের (৯), রবিউল ইসলাম নিলয় (১০) ও কাজী শফিউর রহমান সাফি (১১) নামের এ তিন এতিম শিশু। পরদিন সকালে বিছানায় প্রশ্রাব করার অভিযোগে অফিস কক্ষে ডেকে নিয়ে তাদেরকে স্টিলের স্কেল দিয়ে বেধড়ক ভাবে পেটান মাদরাসার সুপার মাওলানা আবদুল মুকিত। এসময় সহকারী শিক্ষক জুবায়ের আহমদ সানি, মোহাম্মদ আবু বক্কর, হাফেজ মিছবাহ উদ্দিন উপস্থিত ছিলেন।
নির্যাতনের ভিডিও মোবাইলে ধারণ করেন হাফেজ বিভাগের শিক্ষক হাফেজ মিছবাহ উদ্দিন। উপস্থিত শিক্ষকরা শিশুদের মারধরে কোন বাঁধা প্রদান করেননি সুপারকে। ঘটনাটি এখানেই থেমে যায়। কিন্তু ঘটনার ভিডিও রেকর্ড যত্ন করে রাখেন মিছবাহ। বিভিন্ন বিষয় নিয়ে সুপারের সাথে হাফেজ মিছবাহর বিরোধ দেখা দেয়। এ সুযোগটা তিনি হাত-ছাড়া করেন নি। তাকে ঘায়েল করতে দীর্ঘ ১০ মাস পর তার মোবাইলে ধারণকৃত ভিডিওটি গত ৫ নভেম্বর সায়মন আনোয়ার নামের এক ফেসবুক আইডিতে দুই মিনিট ৬ সেকেন্ডের ভিডিওটি আপলোড করা হয়। ভিডিওটি আপলোডের সাথে সাথেই ভাইরাল হয়ে যায়। দেশ-বিদেশে আলোচনা-সমালোচনাসহ নিন্দার ঝড় উঠে। বিডিওটি দেখে রামপুর গ্রামের মানুষ ক্ষিপ্ত হয়ে উঠে। এ বিষয়টি নিয়ে প্রিন্টি ও ইলেক্টনিক্স মিডিয়ায় ব্যাপক প্রচার হয়। তৎপর হয়ে উঠে পুলিশ প্রশাসন। এদিকে অভিযোগ উঠেছে, অভিযুক্ত শিক্ষককে বাঁচাতে কৌশল গ্রহণ করে তাকে পালিয়ে যেতে সহযোগিতা করেছেন মাদরাসা পরিচালনা কমিটি কতিপয় ব্যক্তি। বিষয়টি ধামাচাঁপা দেয়ার চেষ্টা করলেও সফল হয়নি তারা। প্রচারিত ভিডিওতে দেখা যায়, সুপার মুকিত তার অফিস কক্ষে তিন এতিম শিশুকে লাইনে দাড় করে রাখেন। এক এক করে পর্যাক্রমে স্টিলের স্কেল দিয়ে তাদেরকে বেধড়ক পেটান। মারপিট সহ্য করতে না পেরে শিশুরা চিৎকার দিয়ে কান্না-কাটি করে বলতে থাকে ‘আর জীবনে ইতা করতামনায় হুজুর, আপনার পায়ে ধরি’। কিন্তু শিক্ষকের পায়ে ধরেও তারা পায়নি রক্ষা।
জানা গেছে, ওই শিক্ষক মাদরাসা পরিচালনাকারীর আত্মীয়। আত্মীয়তার কারণে তিনি মাদরাসায় সর্বকাজে প্রভাব কাটিয়ে থাকেন। অন্য শিক্ষকরা তার কাছে ছিলেন জিম্মি। এতিম শিশুদের খাবার-দাবারেও তার ছিল চরম দূর্নীতি। ঠিক মতো না খেয়ে অনেক শিশুরা এখান থেকে পালিয়ে গেছে। প্রায় দুই বছর আগে এভাবে শিশুদের নির্যাতনসহ বিভিন্ন অভিযোগে মাদরাসা থেকে থাকে অব্যাহতি দেন পরিচালনা কমিটি। কিন্তু আত্মীয়তার সুবাদে অব্যাহতির ৬মাস পর পূনরায় তিনি সুপারের দায়িত্ব পান। জানতে চাইলে মাদরাসা পরিচালনা কমিটির সভাপতি কমর উদ্দিন বলেন, ৫ নভেম্বর ডিভিও ফেসবুকে আপলোড হওয়ার পরদিন সুপারের দায়িত্ব থেকে মুকিতকে অব্যাহতি দেয়া হয়েছে। পুলিশকে সহযোগিতা করে তাকে ধরিয়েও দেয়া হয়। মাদরাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার গোলাম রসুল রেজা বলেন, তিন শিশুর মধ্যে একজন ছুটিতে ও দুইজন মাদরাসায় অধ্যায়নরত আছেন। এ ব্যাপারে ছাতক থানার ওসি (ভারপ্রাপ্ত) মিজানুর রহমান ঘটনার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, থানার উপ-পরিদর্শক হাবিবুর রহমান পিপিএম বাদী হয়ে শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে তাকে সুনামগঞ্জ আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে। অন্য আসামীকে গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত আছে।