দুই সন্তানের বিরুদ্ধে বৃদ্ধা মায়ের মামলার অভিযোগ আমলে নিয়েছেন আদালত। ওই বৃদ্ধা মা গুরুত্বর অসুস্থ হওয়ায় আদালতে হাজির হয়ে মামলা দায়ের করতে না পারায় আদালতের বিচারক তার বাসায় গিয়ে জবানবন্দি শুনে অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন। বরিশাল অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বেঞ্চসহকারী মো. চার্চিল এই তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, মামলার আবেদন করলে বাদীকে ২০০ ধারায় জবানবন্দি দিতে হয়। কিন্তু বাদী আদালতে আসতে অক্ষম হওয়ায় বিজ্ঞ আদালত তার বাসায় ছুটে যান। বৃহস্পতিবার (২৮ অক্টোবর) বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক মো. মাসুম বিল্লাহ অসুস্থ বাদীর বাসায় যান বলে তিনি জানান। চার্চিল মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে বলেন, মামলার বাদী জাহানুর বেগম (৭৫)। তার স্বামী সিরাজুল ইসলাম ২০১৪ সালের ১৪ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত জাহানুর ব্রেইন স্ট্রোক, মেরুদণ্ড অচল এবং পিঠে ক্ষত ও প্যারালাইসিস আক্রান্ত। বর্তমানে বরিশাল নগরীর ২০নম্বর ওয়ার্ডের বৈদ্যপাড়া জোড়াপুকুর এলাকায় ছোট মেয়ে সাহিদার সঙ্গে থাকছেন। তার আরো কয়েকজন ছেলেমেয়ে আছে। এরমধ্যে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা আক্তারের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। মামলায় বাদী উল্লেখ করেন, তিনি খুলনায় স্বামীর বাড়িতে থাকতেন। তার চিকিৎসার খরচের জন্য খুলনার সম্পত্তি বিক্রির সিদ্ধান্ত নেন। সেই অনুসারে ক্রেতা খুলনার জমি ক্রয়ের জন্য বরিশালে এলে তাদের সঙ্গে কথা বলেন। শুক্রবার (২২ অক্টোবর) তার ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান ও মেয়ে সাবিনা ইয়াসমিন বরিশালে এসে সম্পত্তি বিক্রি করতে দেবেন না বলে জানায়। তখন জাহানুর বেগম তার সন্তানদের কাছে ভরণপোষণ দাবী করলে তা দিতে অস্বীকার করেন। জাহানূর বেগমের জবানবন্দি গ্রহণের পর বিচারক মাসুম বিল্লাহ ঘটনার সত্যতা পেয়ে বিকেল ৪টায় মামলাটি গ্রহণ করে মেজ ছেলে ও ছোট মেয়ের বিরুদ্ধে সমন জারি করছেন। আগামী ১ ডিসেম্বর তাঁদের আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের প্রবেশন কর্মকর্তা সাজ্জাদ পারভেজ বলেন, বিচারক নিজেই এই অভিযোগ তদন্ত করতে বাদীর বাড়িতে ছুটে গেছেন। এটা অভূতপূর্ব ঘটনা। আমরা গিয়ে যা দেখেছি, তা খুবই মর্মান্তিক। কোনো মা যেন জীবিত অবস্থায় অবহেলা-বঞ্চনার শিকার না হন। তিনি আরো বলেন, জাহানূর বেগম অনেক অসুস্থ। ভেঙে ভেঙে কথা বলেন। বলছিলেন, ‘বাবা, কতটা নিরুপায় হলে একজন মা সন্তানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ দেয়।’