নিজস্ব প্রতিবেদক: কানাইঘাট উপজেলায় পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের গাফিলতির কারণে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে প্রাণ গেছে নানা ও নাতির। সোমবার (৪ অক্টোবর) দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা উত্তর গ্রামে এ মর্মান্তিক ঘটনাটি ঘটেছে।
নিহতরা হলেন- উপজেলার সদর ইউনিয়নের নিজ চাউরা উত্তর গ্রামের মৃত ছইদ আলীর পুত্র ফখর উদ্দিন (৫৫) ও তার নাতি কুয়েত প্রবাসী রুহুল আমিনের পুত্র আরিফুল ইসলাম (১০)। আরিফুল নিজ চাউরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্র ছিল।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গতকাল রোববার রাতে ঝড়-বৃষ্টির কারণে বৈদ্যুতিক সংযোগের তার ছিঁড়ে ফখর উদ্দিনের বাড়ির পাশের রাস্তায় পড়ে যায়। সোমবার সকাল ৮টার দিকে ফখর উদ্দিন তার মুঠোফোন থেকে কল দিয়ে বৈদ্যুতিক তার মাটিতে পড়ার বিষয়টি পল্লী বিদ্যুতের কার্যালয়ে জানালেও পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের কেউ সাড়া দেননি। এমনকি এলাকার আরও লোকজন পল্লী বিদ্যুৎ অফিসে সংবাদ দিলেও কাজ হয়নি। একপর্যায়ে দুপুর সাড়ে ১২টায় ফখর উদ্দিনের নাতি আরিফুল ইসলাম (১০) স্কুল থেকে ফেরার পথে নিজ বাড়ির পাশের রাস্তায় পড়ে থাকা বৈদ্যুতিক তারে স্পৃষ্ট হয়। ঘটনা দেখতে পেয়ে ফখর উদ্দিন নাতিকে রক্ষা করতে গেলে তিনিও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হন। আশপাশের লোকজন এগিয়ে এসে তাদেরকে উদ্ধার করার চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। পরে স্থানীয়রা উদ্ধার করে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের দুজনকেই মৃত ঘোষণা করেন।
এদিকে নিহতদের উদ্ধার করার সময় একই গ্রামের ইন্তাজ আলীর পুত্র ফয়সল আহমদ (৩২) আহত হয়েছেন। তিনি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন বলে জানা গেছে।
এ ঘটনার সংবাদ ছড়িয়ে পড়লে কানাইঘাট পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিস ঘেরাও ও পল্লী বিদ্যুৎ মোড় এলাকায় রাস্তা অবরোধ করে উত্তেজিত জনতা। এ সময় স্থানীয় লোকজন ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ কানাইঘাট জোনাল অফিসের ডিজিএম ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের গাফিলতির কারনে দুইজনের মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়ার বিষয়টি সকাল থেকেই জানানো হলেও টনক নড়েনি বিদ্যুৎ অফিসের কারও। জোনাল অফিসের ডিজিএম’র অপসারণ দাবিসহ এ ঘটনার তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানান তারা।
ঘটনার সংবাদ পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সুমন্ত ব্যানার্জি ও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম একদল পুলিশ নিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ মোড়ে গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিলে জনতা অবরোধ প্রত্যাহার করে।
এদিকে, ঘটনার পর পরই পল্লী বিদ্যুতের জোনাল অফিসের ডিজিএম আখতার হোসেন অফিস থেকে পালিয়ে যান। মুঠোফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তাকে পাওয়া যায়নি।
কানাইঘাট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম জানান, নিহতদের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে। ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছে পুলিশ। এ ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ ঘটনায় নিহত ফখর উদ্দিনের ভাতিজা নুর ইসলাম বাদী হয়ে থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিচ্ছেন বলে জানা গেছে।