• ২১শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আলহাজ্ব ডা.গোলাম মন্তকা:একজন নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালা মানুষ

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১২, ২০২১
আলহাজ্ব ডা.গোলাম মন্তকা:একজন নিভৃতচারী আল্লাহওয়ালা মানুষ

 

মোঃ আব্দুল গফফার আল হাসান:আমরা পরম সৌভাগ্যশালী যে, জামানার মোজাদ্দিদ, শামসুল উলামা আল্লামা ছাহেব কিবলা ফুলতলী রাহিমাহুল্লাহ এর পরম সান্নিধ্য পেয়েছি। যার কোমল পরশে মাটির মানুষ পরিণত হয়েছে খাঁটি সোনার মানুষে। খুঁজে পেয়েছে বিশুদ্ধ আক্বীদা ও সত্য ন্যায়ের আলোকিত পথ। যে পথ চলা রাহে মদিনার অলিতে-গলিতে। যার আবির্ভাব ছাড়া হুব্বে রাসূল বা নবী প্রেম কাকে বলে, কেউ জানতোনা ও পরিচয় পেতনা। আর প্রিয় নবীজি হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর প্রতি প্রেম ভালবাসায়-ই একজন মুসলমান প্রকৃত মুমিন বা ইনসানে কামিল হওয়ার প্রথম শর্ত। পৃথিবীর সকল ভালোবাসা, সকল শ্রদ্ধা নিবেদন করে বিগলিত অন্তরে মানুষ যাকে স্মরণ করবে যুগ যুগ ধরে। এ মহান অলির সান্নিধ্য লাভে যারা জীবনকে আলোকিত ও ধন্য করেছেন, তাদের মধ্যে অন্যতম একজন হলেন, আমার পরম শ্রদ্ধাভাজন সর্বজন স্বীকৃত, সর্বমহলে নন্দিত ও সমাদৃত, শ্রদ্ধেয় ও বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, বৃহত্তর ছাতকের কৃতি সন্তান আলহাজ্ব ডাক্তার গোলাম মন্তকা সাহেব। যার জীবনের প্রতিটি পরতে পরতে রয়েছে আল্লামা ছাহেব কিবলা ফুলতলী রাহ. এর জীবনাদর্শ ও রুহানী ফয়েজের ছোঁয়া।

🔘মূলত তিনি একজন জেনারেল শিক্ষিত ও এমবিবিএস পাশ চিকিৎসক ব্যক্তি। যার সাধনা ও কর্মযজ্ঞ মানুষের দেহের রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা দেওয়া। কিন্তু তাঁর ইসলামী ভাবধারার লাইফ স্টাইল অত্যন্ত চমৎকার, যেকোনো মানুষের জন্য অনুকরণীয়। তাঁর জীবনের প্রতিটি কার্যসম্পাদনে, পারিবারিক ও সামাজিক পরিমণ্ডলে কোরআন সুন্নাহর পরিপূর্ণ অনুসরণ ও অনুকরণ।

তাঁর ইবাদত-বন্দেগীতে রয়েছে অলি-আওলিয়া ও সালেহীনদের সাদৃশ্য। স্বীয় মুর্শিদের বাতলে দেওয়া দালাইলুল খায়রাত, হিজবুল বাহার সহ অন্যান্য অজিফা আশিউর্দ্ধ বয়সে এখনো পাঠ করেন নিয়মিত। সদা হাস্যোজ্জ্বল চেহারা সদালাপী আচার-আচরণ ও ব্যবহারে, বিনম্রতা, শালীনতা, মাধুর্যময় এক স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের অধিকারী। তাক্বওয়া ও পরহেজগারীতেও এক অনন্য ব্যক্তিত্ব। একটি নিয়মানুবর্তীতার মধ্যে অত্যন্ত গোছালো ও সাদাসিধে জীবন যাপনকারী এ মনীষী। তাঁর প্রতিটি কথা ও কাজে সুরুচির পরিচয় বহন করে। তাঁর আত্মীয়তা, মেহমানদারী ও আভিজাত্যবোধ অত্যন্ত প্রশংসনীয় ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য দিকনির্দেশক ও শিক্ষণীয় বলে মনে করি।

সৎকর্ম ও মহৎ গুণাবলীসম্পন্ন বর্ণাঢ্য জীবনের অধিকারী এ মনীষীর মধ্যে নেই কোন আমিত্ব বা অহংকারবোধ। অগ্রজ ও সম্মানিত ব্যক্তিদের যেমন শ্রদ্ধা করেন, তেমনি অনুজদের প্রতিও ভালবাসার কোন কমতি নেই। তাইতো সকল স্তরের সকল পেশার মানুষের পরম শ্রদ্ধা ও ভালবাসায় সিক্ত এ মনীষীর জীবনের প্রতিটি মুহূর্ত। আল্লাহ তাআলার অফুরন্ত রহমত ছাড়া এ অর্জন কারো দ্বারা সম্ভবপর নয়। এই মহান ব্যক্তির নূরানী অবয়ব প্রত্যক্ষ করলে হৃদয় মানস পটে ভেসে ওঠে সত্যিকারের একজন আল্লাহওয়ালা মানুষের প্রতিচ্ছবি।

🔘প্রায় আট বছর আগে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে একটি ব্যাংকে, কিছু সমস্যায় পড়ে সেকেন্ড অফিসারের সাথে সাক্ষাত করি। তিনি তাৎক্ষণিক একজন অফিসার কে সমস্যাটি সমাধানের নির্দেশ দিয়ে আমার সাথে আলাপ জোড়ে দিলেন। বোধ হল খুব আলাপ রসিক মানুষ। তিনি জানতে চাইলেন আমার ঠিকানা, বললাম আমার বাড়ি ছাতক শহরের অনতিদূরে। তখন ছাতক শহর ও পার্শ্ববর্তী এলাকার অনেক মানুষের কথা জিজ্ঞাসা করলেন, খোঁজ খবর নিলেন। আল্লামা বিষ্কুটি ছাহেব রাহ. এর কিছু মুরিদ ছাতকে আছেন, এদিন ওনার কাছ থেকে প্রথম জানলাম। সামনে থাকা বিভিন্ন কাগজে স্বাক্ষর করছেন আর সমান তালে আমার সাথে আলাপ করে যাচ্ছেন। হঠাৎ আমাকে প্রশ্ন করলেন, বলেন তো ছাতকের শহর কুতুব কে? একজন ব্যাংক অফিসারের কাছ থেকে এমন প্রশ্ন শুনে আমিতো প্রায় হতবাক।

আমাকে ভাবার সময় দিলেন। আমি অনেক ভেবে চিন্তে জবাব দিলাম, জনাব শহর কুতুব কে সেটা আমার জানা নেই। তিনি গভীরতম শ্রদ্ধার সাথে একটি নাম উচ্চারণ করলেন। বললেন, আমার ধারণা মতো তিনি হচ্ছেন জনাব ডাক্তার গোলাম মন্তকা। আমি বললাম আপনি একজন ব্যাংকার হয়ে এ উপলব্ধিটা কি করে হলো। তিনি বললেন আমি ছাতক পূবালী ব্যাংকে দীর্ঘ আট বছর কর্মরত ছিলাম। ডাক্তার সাহেবকে আমি খুব কাছ থেকে দেখেছি ও তার সান্নিধ্য লাভে ধন্য হয়েছি। তিনি উচ্চবংশের নামিদামি শরীফ খান্দানের একজন মানুষ। ফুলতলীর পীর সাহেব রাহ. এর একজন খাছ মুরিদ। তাঁর ছাতকস্থ“দারুসসালাম` বাসায় সর্বদায় আলেম-ওলামা পীর-মাশায়েখদের আগমন। আমার জানামতে ফুলতলীর পীর সাহেব রাহ. বৃহত্তর ছাতকে কোন প্রোগ্রামে আসলে তাঁর বাসায় থাকতেন ও খাওয়া দাওয়া করতেন। এত আলিম-ওলামার সোহবত সর্বোপরি তাঁর কাজকর্ম আচার-ব্যবহার চলাফেরা আমল-আখলাকে অলি আউলিয়াদের জীবনাদর্শ-ই প্রতিফলিত। এমন গুণী মানুষ আপনাদের ছাতকে আর কয়জন আছে।

🔘ডাক্তার সাহেবের পারিবারিক ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে আমি দীর্ঘদিন দায়িত্ব পালন করেছি। ইব্রাহিম নামে একটি ছেলে অফিসে কর্মরত ছিল। সে একদিন আমাকে বলল আজ প্রায় ছয় মাস হলো আমি এসেছি, প্রতিদিন সকালে ডাক্তার সাহেবের সাথে বাজারে যাই তিনি বাসা থেকে রওয়ানা হয়ে, যে দোকানে খরচ করবেন, সোজা ওখানে যান একটি দিনও ডানে-বামে তাকাতে দেখিনি। আমার কাছে ব্যাপারটা বড় আশ্চর্য লাগল। তাঁর কথা শুনে আমিও বেশ কিছুদিন প্রত্যক্ষ করলাম। দেখলাম তা সত্যিই। আফসোস হয়! একজন জেনারেল শিক্ষিত মানুষের মতো হাঁটাও শিখতে পারলাম না।

🔘ছাতকে স্বনামধন্য একজন চিকিৎসক হিসেবে মানুষের সেবা দিয়েছেন অবিরত। একদিকে যেমন চেম্বারে রোগী দেখছেন, অন্যদিকে রোগীদের বাড়িতে গিয়েও সেবা দিয়েছেন। দু-দশক আগেও ছাতকের প্রত্যন্ত অঞ্চলের যোগাযোগ ব্যবস্থা ভাল ছিলনা। ১০/১৫ মাইল দূরবর্তী গ্রামে পানি, কাঁদা,জমির আইল ও কাঁচা রাস্তা দিয়ে পায়ে হেঁটে মানুষকে চিকিৎসা দিয়েছেন। গণমানুষের ভালোবাসা ও দোয়া পেয়েছেন।

🔘 কয়েক বছর পূর্বে সরকার সকলের জন্ম নিবন্ধন করার আইন করলে, ফরমে একজন এমবিবিএস পাস ডাক্তারের স্বাক্ষরের প্রয়োজন হল। ছাতকের সরকারি-বেসরকারি কোন ডাক্তারই ঢালাও ভাবে সাক্ষর দিতে রাজি হয়নি। সকলেরই একমাত্র ভরসা ডাক্তার গোলাম মন্তকা সাহেবের উপর। ছাতক উপজেলার হাজার হাজার মানুষের জন্ম নিবন্ধন ফরমে দিনরাত সাক্ষর দিয়েছেন, এমনকি নামাযের জামাতের সময় মসজিদের আঙিনায়ও স্বাক্ষরের জন্য অপেক্ষা করতে দেখেছি অনেককে। এ সেবাটুকু করার জন্য বহু মানুষের কাছে কিংবদন্তী হয়ে আছেন।

🔘দারুল কিরাত মজিদিয়া ফুলতলী ট্রাস্ট এর রাবে ফাইনাল পরীক্ষা কেন্দ্র, ছাতক সরকারি বহুমুখী মডেল উচ্চ বিদ্যালয় এর যাবতীয় ব্যবস্থাপনা নিজ খরচে বহু বছর করেছেন। প্রথম থেকে আজ পর্যন্ত প্রশ্নপত্রের মুহাফিজ এর দায়িত্বরত আছেন। তাঁর সুশিক্ষিত ও সুযোগ্য সন্তানগন তাঁর নামে মল্লিকপুর ডাক্তার গোলাম মন্তকা হাফিজিয়া মাদ্রাসা ও ডাক্তার গোলাম মন্তকা কল্যাণ ট্রাস্ট প্রতিষ্ঠা করেছেন। যা দ্বীনি খেদমত ও সমাজ উন্নয়নমূলক কার্য্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে।

পরিশেষে আকাশের নীল শামীয়ানা ভেদ করে মহান আল্লাহর রহমত ও মহানবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের দুয়া অবিরলধারায় বর্ষিত হোক তাঁর শীরে। সুস্থাস্থ্য ও দীর্ঘজীবী লাভ করুন। এটাই আমাদের সনির্বন্ধ প্রার্থনা। আমিন।

✍️ লেখক: সহকারি শিক্ষক
লতিফিয়া ইসলামিক ক্যাডেট একাডেমি খারগাঁও।