• ২৩শে নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

সিলেটের বিশ্বনাথে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য: দুই বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত আগস্ট ২২, ২০২১
সিলেটের বিশ্বনাথে অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু ঘিরে রহস্য: দুই বৃদ্ধ গ্রেপ্তার

সিলেট প্রতিনিধি ::সিলেটের বিশ্বনাথে এক অন্তঃসত্ত্বা নারীর মৃত্যু নিয়ে এলাকায় রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। তিনি লামাকাজী ইউনিয়নের মির্জারগাঁও গ্রামের আবদুস সালাম দিলদার মিয়ার মেয়ে মখলিছুন বেগম (৩২)। শনিবার দিবাগত রাতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেলে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

নিহতের পিতা আবদুস সালাম দিলদার মিয়া বাদি হয়ে বিশ্বনাথ থানায় মামলা (নং-১৩) দায়ের করেছেন। জড়িত সন্দেহে পুলিশ লামাকাজী বাজারের নৈশপ্রহরী লামাকাজী মির্জারগাঁও গ্রামের কমলা মিয়া ও দৌলতপুর সত্তিশ গ্রামের রইছ আলীকে গ্রেপ্তার করেছে।

স্থানীয়সূত্রে জানা গেছে, নিহত অন্তঃসত্ত্বা মখলিছুন বেগম স্বামী পরিত্যক্তা হয়ে দুই সন্তান নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে বাবার বাড়িতে বসবাস করে আসছিলেন। বাবা দরিদ্র হওয়ায় তিনি লামাকাজী বাজারের নৈশপ্রহরী মির্জারগাঁও গ্রামের বাসিন্দা কমলা মিয়ার বাসায় বেশ কিছু দিন ঝিয়ের কাজ করেন। এর সুবাদে মখলিছুন বেগমকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে কমলা মিয়া তার সত্তোর্ধ্ব বিয়াই উপজেলার সত্তিশ গ্রামের রইছ আলীর সাথে বিয়ে দেন।

কয়েকদিনের মধ্যে রইছ আলী জানতে পারেন, মখলিছুন বেগম অন্তঃসত্ত্বা। পরে দুই বিয়াই মিলে ওসমানী হাসপাতালে নিয়ে গর্ভপাত করান তার। হাসপাতাল থেকে ফেরার পর রইছ আলী মখলিছুনকে নিজের ঘরে নিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর তাকে তার পিতার বাড়িতে রেখে যান দুই বিয়াই (কমলা-রইছ)।

মখলিছুনের শারীরিক অবস্থা আরও নাজুক হলে পুলিশের সহায়তায় গত শুক্রবার তাকে ফের হাসপাতালে পাঠান তার বাবা। ওইরাতেই কমলা মিয়া ও তার বিয়াই রইছ আলীকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। শনিবার রাতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন মখলিছুন বেগম।

স্থানীয়সূত্রে আরো জানিয়েছে, মখলিছুনের পিতা আব্দুস সালাম দিলদার মিয়া তাদের স্থানীয় মেম্বার আবুল কালামকে সঙ্গে নিয়ে মামলা দায়ের করতে বিশ্বনাথ থানায় অবস্থান করার সুযোগকে কাজে লাগিয়ে একজন অজ্ঞাতনামা নারী নিহতের অভিভাবক পরিচয় দিয়ে হাসপাতাল থেকে একটি অ্যাম্বুলেন্স করে লাশ নিয়ে লামাকাজীর উদ্দেশ্যে যাত্রা করেন এবং পথিমধ্যে মদিনা মার্কেট এলাকায় ওই অজ্ঞাতনামা নারী অ্যাম্বুলেন্স থেকে মেনে যান।

এরপর রাত ১২টার দিকে মখলিছুনের বাবা আব্দুস সালাম ও স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালাম থানায় অবস্থানকালে হঠাৎ খবর পান লামাকাজীতে একজন নারীর লাশ নিয়ে একটি অ্যাম্বুলেন্স অনেকক্ষণ ধরে ঘুরাঘুরি করছে। পরে সেটি স্থানীয় জনগণ আটক করেন।

মখলিছুনের বাবা আব্দুস সালাম দিলদার মিয়া ও মেম্বার আবুল কালাম লামাকাজীতে গিয়ে মখলিছুনের লাশ শনাক্ত করেন।

রোববার সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে সুরতহাল রিপোর্ট তৈরি করে লাশ মর্গে প্রেরণ করে থানা পুলিশ।

আব্দুস সালাম দিলদার মিয়া জানান, মেয়েকে বাড়িতে রেখে চাকরিসূত্রে তিনি সিলেট শহরের শাহপরাণে থাকেন। আর এই সুযোগে মখলিছুন বেগমকে তার অজান্তেই রইছ আলী সাথে অবৈধভাবে বিয়ে দেন কমলা মিয়া। বাড়ির একজন মহিলা কাছ থেকে গত শুক্রবার সন্ধ্যায় তিনি খবর পান তার মেয়ে গুরুতর অসুস্থ।

বাড়িতে গিয়ে দেখেন মখলিছুন বেগম বিবস্ত্র ও রক্তাক্ত অবস্থায় ঘরে পড়ে আছেন। আব্দুস সালাম তাৎক্ষণিক স্থানীয় ইউপি মেম্বার আবুল কালামকে খবর দিলে রাত ১০টায় তিনি পুলিশ নিয়ে ঘটনাস্থলে যান।

মেয়েকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করেন। ধর্ষণ করে মেয়ে মখলেছুন বেগমকে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন আব্দুস সালাম দিলদার মিয়া।

মখলিছুনের চাচা আপ্তাব উদ্দিন বলেন, সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার কৈতক হাসপাতালে ১০/১৫ দিন পূর্বে নিয়ে আমার ভাতিজির গর্ভের সন্তান নষ্ট করেছে গ্রেপ্তারকৃত কমলা মিয়ার স্ত্রী ও কন্যা। আর অবৈধ গর্ভপাতের পর থেকে অতিরিক্ত রক্তকরণের ফলেই মখলিছুনের মৃত্যু হয়েছে। কমলা-রইছ দুজনই মখলিছুন বেগমকে ধর্ষণ করেছে বলে অভিযোগ তার।

বিশ্বনাথ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) গাজী আতাউর রহমান বলেন, এঘটনায় কমলা মিয়া ও রইছ আলীকে গ্রেপ্তার এবং মামলা দায়ের করা হয়েছে। তদন্ত সাপেক্ষে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।