• ৪ঠা ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২১শে মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই শাবান, ১৪৪৬ হিজরি

পেগাসাস স্পাইওয়্যার’র তালিকায় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পলা মঞ্জিলা উদ্দিনের নম্বর

bilatbanglanews.com
প্রকাশিত জুলাই ২৩, ২০২১
পেগাসাস স্পাইওয়্যার’র তালিকায় ব্রিটিশ-বাংলাদেশি পলা মঞ্জিলা উদ্দিনের নম্বর

বিবিএন ডেস্ক : সেই ১৯৯৮ সালে প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে  যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের সদস্য হন মঞ্জিলা পলা উদ্দিন। পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহার করে যাঁদের স্মার্টফোনে আড়ি পাতা হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে, সেই তালিকায় ব্রিটিশ–বাংলাদেশি ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিনও রয়েছেন।

বৃহস্পতিবার ব্রিটিশ দৈনিক গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হাউস অব লর্ডসের সদস্য লেডি উদ্দিনসহ (ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন) ৪০০–এর বেশি ব্যক্তির যুক্তরাজ্যের ফোন নম্বর এই তালিকায় রয়েছে।

পেগাসাস স্পাইওয়্যারের নির্মাতা ইসরায়েলি প্রতিষ্ঠান এনএসও গ্রুপ। কোনো ব্যক্তির স্মার্টফোনে একবার এই স্পাইওয়্যার ঢুকলে ছবি, ই–মেইল, কল রেকর্ড, ফোনে সংরক্ষিত যাবতীয় নম্বর হাতিয়ে নেওয়া যায়। এমনকি হোয়াটসঅ্যাপ, সিগন্যালের মতো এনক্রিপটেড অ্যাপে আদান–প্রদান করা বার্তাও নজরদারির আওতায় চলে যায়। বিভিন্ন দেশের সরকারি সংস্থা পেগাসাস স্পাইওয়্যারের গ্রাহক। নজরদারির জন্য এনএসও গ্রুপের গ্রাহকদের বাছাই করা ৫০ হাজার ফোন নম্বরের তালিকা সম্প্রতি ফাঁস হয়েছে।

তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, এই তালিকায় যুক্তরাজ্যের নম্বরগুলো আসার পেছনে প্রধানত সংযুক্ত আরব আমিরাতের ভূমিকা রয়েছে। এনএসও–এর পেগাসাস স্পাইওয়্যার ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে যে ৪০টি দেশের, তার একটি সংযুক্ত আরব আমিরাত। এই আরব দেশের রাজধানী দুবাইয়ের শাসক শেখ মোহাম্মদ বিন রশীদ আল–মাকতুম এনএসও গ্রাহক বলে ধারণা করা হচ্ছে।গার্ডিয়ান বলছে, ২০১৭ ও ২০১৮ সালের তালিকায় ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিনের নম্বর রয়েছে। এই খবরের প্রতিক্রিয়ায় পলা উদ্দিন বলেছেন, যদি পার্লামেন্ট সদস্যদের ওপর গোয়েন্দাগিরি করা হয়, তাহলে তা ‘আস্থার বড় লঙ্ঘন’ এবং যুক্তরাজ্যের ‘সার্বভৌমত্বেরও লঙ্ঘন’।

ব্রিটেনের বাঙালি কমিউনিটিতে ব্যারোনেস পলা উদ্দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ নাম। তাঁর জন্ম ১৯৫৯ সালে, রাজশাহী জেলায়। প্রথম ব্রিটিশ বাংলাদেশি হিসেবে ১৯৯৮ সালে তিনি যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের হাউস অব লর্ডসের সদস্য হওয়ার গৌরব অর্জন করেন।

১৯৭৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে পরিবারের সঙ্গে লন্ডনে যান ব্যারোনেস পলা উদ্দিন। নর্থ লন্ডন বিশ্ববিদ্যালয়ের সামাজিক উন্নয়ন বিভাগ থেকে ডিপ্লোমা করেন। সত্তরের দশকের শেষের দিক থেকেই তিনি ব্রিটেনের সামাজিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন ক্ষেত্রে সম্পৃক্ত হতে থাকেন। এরই ধারাবাহিকতায় আশির দশকে ইয়ুথ অ্যান্ড কমিউনিটি ওয়ার্কারের সঙ্গে যুক্ত হন। বাঙালি–অধ্যুষিত পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটস সোশ্যাল সার্ভিসের একজন কর্মী হিসেবে বেশ সুনাম অর্জন করেন তিনি।

আশির দশকেরই শেষ দিকে মঞ্জিলা পলা উদ্দিন টাওয়ার হ্যামলেটস উইমেন্স হেলথ প্রজেক্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৮৮ সালে তিনি নিউহাম সামাজিক উন্নয়ন সংস্থার সঙ্গে যুক্ত হন। প্রথম কোনো বাঙালি হিসেবে লেবার পার্টি থেকে ১৯৯০ সালে তিনি দ্য লন্ডন বারা অব টাওয়ার হ্যামলেটস অঞ্চলের কাউন্সিলর নির্বাচিত হওয়ার পর সফলতার সঙ্গে দুই বছর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯৪ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের নির্বাহী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালনকালেও কৃতিত্বের স্বাক্ষর রাখেন মঞ্জিলা পলা উদ্দিন।

ব্যারোনেস মঞ্জিলা পলা উদ্দিন ১৯৯৯ সালে যুক্তরাজ্যে এশিয়ান নারীদের উন্নয়নের লক্ষ্যে জাগোনারী নামে একটি সংস্থা তৈরি করেন, যা তাঁকে স্থানীয়ভাবে আরও বেশি পরিচিত করে তোলে। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এই ব্রিটিশ লর্ডসকে বিবেচনা করা হয়ে থাকে পশ্চিম ইউরোপের অন্যতম প্রভাবশালী মুসলিম নারী হিসেবে। বাংলাদেশের সঙ্গে যুক্তরাজ্যের পরীক্ষিত বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের ভিত মজবুত করতে ব্যারোনেস পলা মঞ্জিলা  উদ্দিনের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।(জনমত)