- ১০ মিলিয়ন ডলারের অগ্রীম অর্ডার লাভ, ব্যবহার হচ্ছে এনএইচএস ও নাসায়, একবার ব্যবহারে ১৫দিন কোভিডমুক্ত
তাইসির মাহমুদ:যুক্তরাজ্যের চেস্টারের বাসিন্দা সাদিয়া খানম নামক ২৫ বছর বয়সী এক বৃটিশ-বাংলাদেশি বিজ্ঞানী কোভিড নিরোধক স্প্রে আবিষ্কার করে বিশ্বব্যাপী আলোড়ন সৃষ্টি করেছেন। আবিষ্কারের সাথে সাথে ইতোমধ্যে তিনি ১০ মিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের অর্ডার পেয়েছেন। এনএইচএস যুক্তরাজ্যের বিভিন্ন হাসপাতাল ও কেয়ার হোমে পরীক্ষামূলকভাবে এই স্প্রে ব্যবহার করে সফল হয়েছে। নাসার ল্যাবে ব্যবহার হচ্ছে। বিশ্বের ১৩টি দেশ ইতোমধ্যে স্প্রে অর্ডার করেছে। মেডিকেল যন্ত্রপাতি, হোটেল, মোটেল, রেস্টুরেন্ট, এয়ারলাইন্স ইন্ডাষ্ট্রি, আর্ম ফোর্সেস, নিউক্লিয়ার স্টেশনে ব্যবহার করা যায়। ভলটিক নামক এই স্প্রে যেকোনো স্থানে ব্যবহারের সাথে সাথে সবধরনের প্যাথোজন (ভাইরাস, ভ্যাক্টেরিয়া, ফাঙ্গি ইত্যাদি) টেনে এনে মেরে ফেলতে সক্ষম। কোনো স্থানে একবার ব্যবহার করলে ১৫দিন পর্যন্ত ওই জায়গা সম্পুর্ণরূপে কোভিডমুক্ত থাকে।
যুক্তরাজ্যের হাসপাতালগুলো বলেছে, ভাইরাস নিরোধে এই স্প্রে শতভাগ কার্যকর। তাছাড়া এই স্প্রে ব্যবহার করে হাসপাতালগুলোর প্রায় ৭০ ভাগ পরিচ্ছন্নতা খরচ কমিয়ে আনা সম্ভব। খবর: মানচেস্টার ইভনিং নিউজ।
কে এই সাদিয়া: সাদিয়া খানমের পরিবার যুক্তরাজ্যের চেস্টারে বসবাস করেন। তিন ভাই-বোনের মধ্যে তিনি সবার বড়। বাবা কবির আহমদ রেস্টুরেন্ট ব্যবসায়ী। মা ফরিদা আহমদ গৃহিনী। তার দাদা আজমত আলী যুক্তরাজ্যে আসেন ১৯৬৪ সালে। সাদিয়ার বয়স যখন ১৪ বছর তখন তার দাদা আলজাইমার রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়েন। তখন তিনি সংকল্প করেন, বড় হয়ে বিজ্ঞানী হবেন এবং আলজাইমার রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার করবেন।
ছোটকাল থেকেই তিনি বিজ্ঞানের প্রতি ঝুঁকে পড়েন। কিন্তু তার বাবা প্রথমে তাকে স্থানীয় ব্লাকবার্ণ মাদ্রাসায় ভর্তি করে দেন। তিনি চেয়েছিলেন মেয়ের শিক্ষাজীবন ধর্মীয় শিক্ষার মধ্য দিয়ে শুরু হোক। তাহলে পরবর্তীতে বড় হয়ে উচ্চ শিক্ষা লাভের পর ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়েই সে জীবনযাপন করতে পারবে।
ব্লাকবার্ণ মাদ্রাসা থেকে তিনি কৃতিত্বের সাথে আলিমা কোর্সসহ জিসিএসই পাশ করেন। এরপর মানচেষ্টারের হলিক্রস সিক্সথ ফর্ম কলেজ থেকে জিসিএসই, মানচেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে বায়ো-মেডিকেলে গ্রাজুয়েশন শেষ করে চেস্টার ইউনিভার্সিটি থেকে জেনেটিক্সে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। এরপর তিনি আলজাইমার ও নিউরোডিজেনারেশন নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। কিন্তু করোনা মহামারির কারণে যুক্তরাজ্যে লকডাউন (২০২০ সালের ২৩ মার্চ) শুরু হলে আপাতত গবেষণা স্থগিত রেখে চেশিয়ারে তার বাবার রেস্টুরেন্ট ‘ক্যাফে ইন্ডিয়াতে’ কাজ শুরু করেন।
যেহেতু সারাবিশ্ব কোভিডে জর্জরিত তাই তিনি রেস্টুরেন্টে কাজের পাশাপাশি কোভিড নিরোধক কিছু আবিষ্কার করতে গবেষণা শুরু করেন। রেস্টুরেন্টকে তিনি কেস স্টাডি হিসেবে ব্যবহার করেন। প্রায় ১৪ মাসের গবেষণার পর একসময় সাফল্য ধরা দেয়। তিনি আবিষ্কার করে ফেলেন বিশেষ স্প্রে ‘ভলটিক’।
এরপর কলিন হেইগান নামক একজন সিনিয়র বিজ্ঞানীকে সঙ্গে নিয়ে এই স্প্রেকে আরো ডেভোলপ করেন। কলিন হেইগান সাদিয়ার এই আবিষ্কার যুগান্তকারী বলে উল্লেখ করেন। এক প্রতিক্রিয়ায় সাদিয়া খানম বলেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে তার এই স্প্রে বিশ্বজুড়ে ব্যবহার হবে। শুধু অর্থ উপার্জনই বড় কথা নয়; এটা মানুষকে কোভিডমুক্ত জীবনযাপনে সাহায্য করবে। স্প্রে থেকে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি আলজাইমার রোগের ওপর অধিকতর গবেষণা করবেন এবং বিশ্বকে এই রোগের প্রতিষেধক দিতে পারবেন বলে আশাবাদী।
বাংলাদেশে সাদিয়ার পূর্ব পুরুষদের নিবাস সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার নাজির বাজার এলাকার মোহাম্মদপুর গ্রামে। সাদিয়া খানমের ছোট বোন জামিলা আহমদ কমার্শিয়াল ল’ নিয়ে পড়ছেন। ছোট ভাই হামজা আহমদের বয়স ৩। সাদিয়ার বাবা কবির আহমদ বৃহস্পতিবার এই প্রতিবেদককে বলেন, আমরা আল্লাহ তায়ালার প্রতি অশেষ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। তিনিই সবাইকে সব জিনিস দেন না। আমার মেয়েকে এই স্প্রে আবিস্কারের জ্ঞান দিয়েছেন নিশ্চয় একটি কারণে। মেয়ের এই আবিষ্কারের মাধ্যমে আমরা বিশ্বের মানুষকে সাহায্য করতে পারবো-এর চেয়ে আনন্দের আর কিছু নেই। তিনি বলেন, তার মেয়ে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়েন। ধর্মীয় অনুশাসনের মধ্য দিয়ে জীবনযাপন করেন। তিনিও ১৩ বছর যাবত অ্যালকোহলমুক্ত রেস্টুরেন্ট ব্যবসা পরিচালনা করেন। (মানবজমিন)