বিবিএন ডেস্ক: যুক্তরাজ্যের ব্রিস্টল শহরের ৭২ বছর বয়সের এক ব্যক্তি টানা ১০ মাস (৩০৫ দিন) ধরে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত। এত দীর্ঘ সময় করোনায় আক্রান্ত থাকার ঘটনা আর দেখা যায়নি বলে বলে মনে করছেন গবেষকরা। ডেভ স্মিথ নামের এই ব্যক্তি পেশায় একজন ড্রাইভিং প্রশিক্ষক। দশ মাসে করোনা টেস্টে ৪৩ বার পজিটিভ হওয়ায় সাতবার তিনি হাসপাতালে ভর্তি হন। এ অবস্থায় নিজের অন্ত্যেষ্টিক্রিয়ার পরিকল্পনাও করে রেখেছিলেন বলে জানান তিনি। তবে সবকিছুকে জয় করে এখন সুস্থ আছেন স্মিথ। জার্মান সংবাদমাধ্যম ডয়চে ভেলে এখবর জানিয়েছে।
এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘আমি অবসর নিয়েছি। পরিবারের সবার কাছ থেকে আমি বিদায় নিয়ে নিয়েছিলাম। যখনই আমাকে হাসপাতালের বেডে নেওয়া হত, আমরা অবস্থা খুবই খারাপ থাকত। একেবারে মৃত্যুর কাছাকাছি। আমার স্ত্রী পাঁচবার অন্ত্যোষ্টিক্রিয়ার পরিকল্পনা করেছিলেন।
অসুস্থতার এ পুরো সময়ে স্ত্রী লিন্ডাও তার সঙ্গে কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। লিন্ডা বলেন, ‘এমন অনেক সময় গেছে যখন আমরা ধরে নিয়েছি সে আর বাঁচবে না। নরকের যন্ত্রণা নিয়ে একটি বছর পার করেছি আমরা।’
ব্রিস্টল বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্রামক রোগ বিষয়ক গবেষক এড মোরান বলেন, পুরো সময় জুড়েই স্মিথের শরীরে ভাইরাসটি সক্রিয় ছিল।
চিকিৎসকরা জানান, বিশেষ এক পদ্ধতির চিকিৎসায় স্মিথ সুস্থ হয়ে উঠেছেন। সিনথেটিক অ্যান্টিবডি দিয়ে চিকিৎসা করার পর সুস্থ হন তিনি। এ চিকিৎসা পদ্ধতি যুক্তরাজ্যে ক্লিনিক্যালি অনুমোদিত নয়। সহানুভূতির জায়গা থেকে তাকে এমন চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে বলে জানা গেছে। এই চিকিৎসা পদ্ধতি সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
সিনথেটিক অ্যান্টিবডি দিয়ে চিকিৎসার ৪৫ দিনের মাথায় সুস্থ হয়ে ওঠেন তিনি। অর্থাৎ, অবশেষে করোনা টেস্টের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে তার। সে হিসেবে প্রথমবার আক্রান্ত হওয়ার ৩০৫ দিন পর সুস্থ হন এ ব্রিটিশ নাগরিক।
দীর্ঘদিন যুদ্ধ করে করোনাকে জয়ের মুহূর্ত স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে শ্যাম্পেন পানের মাধ্যমে উদযাপন করেন স্মিথ।
এক সাক্ষাৎকারে স্মিথ জানান, তার এখনও শ্বাসকষ্টের সমস্যা রয়ে গেছে। তবে তিনি দেশজুড়ে ভ্রমণ করছেন। এমনকি নাতনীকে গাড়ি চালানোও শেখাচ্ছেন। তিনি বলেন, আমি কখনও শতভাগ সুস্থ হতে পারব না। কারণ করোনা আমার ফুসফুস ধ্বংস করে দিয়েছে। খুব দ্রুতই শ্বাস ফুরিয়ে যায়। কিন্তু এখন প্রতিটি বেঁচে থাকা আমার জন্য বোনাস। আমি সব সময় বলি, যখন নর্দমায় আপনি পতিত হবেন তখন শুধু তারা দেখতে পারবেন। আমি একেবারে আশা হারিয়ে ফেলেছিলাম এবং এখন সবকিছু খুবই দুর্দান্ত।