বিবিএন ডেস্ক: যেভাবে প্রথম মিনিট থেকেই আক্রমণে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল ওমান, শঙ্কা জাগছিল বাংলাদেশ না গোলে ভেসে যায়। শেষ পর্যন্ত দোহায় অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপ ও এশিয়ান কাপের বাছাইপর্বের ম্যাচটা আজ ওমান জিতেছে ৩–০ গোলে।
২০১৯ সালের ১৪ নভেম্বর প্রথম লেগে মাসকটে বাংলাদেশেকে ৪–১ গোলে হারিয়েছিল ওমান। সে তুলনায় ফিরতি ম্যাচে গোল কম খেয়েছে লাল সবুজের দল। এই জায়গায় আত্মতৃপ্তি খুঁজতে পারে বাংলাদেশ। কিন্তু নিজেদের যোগ্য প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বাংলাদেশ তুলে ধরতে পারেনি আজও। ওমানের দ্বিতীয় সারির দলের সামনেই অসহায় অবস্থায় ৯০ মিনিট কেটেছে জেমি ডে-র দলের।
শুরু থেকেই যেন মাঠে ঝরছিল ওমানের কর্নার-বৃষ্টি। ১৮ মিনিটে হয়ে যায় ১০টি কর্নার। ৬১ মিনিটে সংখ্যাটা দাঁড়ায় ১৪। ৭৭ মিনিটে ১৫তম। এতেই বোঝা যাচ্ছে বাংলাদেশের ওপর কতটা ঝড় বইয়ে দিয়েছে ওমান।
দোহার জসিম বিন হামাদ স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ প্রথম গোল খেয়েছে ২২ মিনিটে। খালিদ আল হাজরির ক্রস থেকে মোহামেদ মোবারক আল গাপরি ফাঁকায় থেকে বল জালে ঠেলেন। গোললাইনের একেবারে সামনে থেকে গোল না হওয়াই ছিল অসম্ভব। ৪৫ মিনিটে ২–০ হয়েই যাচ্ছিল। কিন্তু বল পোস্টে লেগে ফেরত আসে।
আল-গাফরি করেন প্রথম গোল।
৬১ মিনিটে পরিকল্পিত এক আক্রমণকে দিয়েছে সফল পরিণতি। খালিদ আল হাজরি ২–০ করেন বাঁ পায়ে দারুণ শটে। ৮১ মিনিটে ফাঁকায় থেকে জালে বলটা ঠেলে ৩–০ করেন সেই খালিদ আল হাজরিই।
এশিয়ান কাপের পরের রাউন্ড আগেই নিশ্চিত করেছিল ওমান। এই ম্যাচ জিতে বিশ্বকাপের পরের রাউন্ডে নাম লিখিয়েছে আরব দেশটি। বাংলাদেশের বিপক্ষে জয় অবধারিত ধরে নিয়ে এ ম্যাচে প্রথম একাদশে ৯টি বদল আনে ওমান। অতিরিক্ত তালিকার ফুটবলারদের নিয়েও ওমান বুঝিয়ে দিয়েছে ফিফার তালিকায় তারা বাংলাদেশের চেয়ে ১০৪ ধাপ এগিয়ে।
ওমানের প্রবল চাপ সামলে বাংলাদেশ একটু ওপরে ওঠার চেষ্টায় সফল ২৮তম মিনিটে। এই সময় প্রথম কর্নার পেয়েছে বাংলাদেশ। আবদুল্লাহর দারুণ কর্নার থেকে বক্সে ফাঁকায় দাঁড়ানো ডিফেন্ডার ইয়াছিন আরাফাতের হেড কোনোমতে রক্ষা করেন ওমানের গোলকিপার। ম্যাচটা তখন ১–১ হয়ে যেতে পারত। হলো না ওমানের গোলকিপারের কৃতিত্বে।
দ্বিতীয় গোলটি খাওয়ার পর একসঙ্গে টানা ৪–৫টি পাস খেলতে পেরেছে বাংলাদেশ। তার আগ পর্যন্ত ৩টি পাসও কখনো ঠিক হয়নি। বল পায়ে পড়লেই হারিয়ে ফেলেছে। আফগানিস্তান ও ভারত ম্যাচের চেয়েও ( ২৭ ও ২৬ ভাগ) এদিন বাংলাদেশের ফুটবলারদের পায়ে বল কম ছিল। সারাক্ষণ সামলাতে হয়েছে রক্ষণ কাজ।
লেফট উইংগার হলেও ইব্রাহিমকে রক্ষণেই কাটাতে হয়েছে বেশির ভাগ সময়। প্রথম গোলের আগে এবং ৩–০ হয়ে যাওয়ার আরও নিশ্চিত গোল বাঁচাতে কক্সবাজারের এই তরুণ খাঁটি ডিফেন্ডারের মতোই খেলছেন ইব্রাহিম।
চোট ও করোনায় কাতার যাওয়া দলের পাঁচজন ছিলেন না। তাই অনেকটা নতুন একাদশই সাজাতে হয় কোচ জেমি ডেকে। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া না থাকায় তাঁর জায়গায় রাইটব্যাক থেকে সরিয়ে রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে খেলানো হয়েছে তারিক কাজীকে। তবে রাইটব্যাকে যতটা নজর কাড়েন তারিক, নতুন ভূমিকায় সেভাবে সফল হতে দেখা যায়নি তাঁকে। কাতার সফরে আগের দুটি ম্যাচে নজর কেড়েছেন রাইটব্যাক তারিক।
৪-২-৩-১ ছকে একাদশে আসেন দুই ডিফেন্ডার রিমন হোসেন ও ইয়াছিন আরাফাত। ইয়াছিন বাঁয়ে আর রিমন খেলেন ডান পাশে। দুজনই কাতার সফরের শেষ ম্যাচে একাদশে প্রথমবার সুযোগ পান।
রক্ষণাত্মক মিডফিল্ডার হিসেবে তারিকের সঙ্গে ছিলেন মানিক মোল্লা। মাঝমাঠে দুই পাশে আবদুল্লাহ ও মোহাম্মদ ইব্রাহিম। রাকিব মাঝখানে। একমাত্র স্ট্রাইকার মতিন মিয়া। মতিনকে নিচে নেমেই রক্ষণে সহায়তা করতে হয়েছে বেশি।
এই ম্যাচ দিয়েই ২০২২ কাতার বিশ্বকাপ এবং ২০২৩ এশিয়ান কাপের বাছাইপর্ব শেষ করেছে বাংলাদেশ। ৫ দলের গ্রুপের ৮ ম্যাচে দুই ড্রয়ে বাংলাদেশের পয়েন্ট ২। গ্রুপের সবার নিচে জেমি ডের দল। বিশ্বকাপ বাছাইয়ের পরের রাউন্ডে যাওয়ার কোনো সম্ভাবনা কখনোই ছিল না বাংলাদেশের। গ্রুপে ৫ম হয়ে এখন এশিয়ান কাপের বাছাইয়ে গ্রুপ পর্বে সুযোগ পেতে প্লে অফ খেলতে হবে বাংলাদেশকে।
বাংলাদেশ দল
আনিসুর, ইয়াছিন আরাফাত, তপু বর্মণ, রিমন (ইমন) হোসেন, তারিক কাজী, রিয়াদুল হাসান, মানিক মোল্লা, আবদুল্লাহ (মেহেদি হাসান), ইব্রাহিম, রাকিব (সুমন রেজা), ও মতিন মিয়া।