মো. রেজাউল হক ডালিম:আর মাত্র ৪৩ দিন। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ২৮ জুলাই সিলেট-৩ আসনে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। গত ১১ মার্চ মহামারি করোনায় প্রাণ হারান সিলেটের গুরুত্বপুর্ণ এ আসনের এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস।
কিন্তু ৩ মাস পর এমপি কয়েসের মৃত্যু নিয়ে চাঞ্চল্যকর মন্তব্য করেছেন মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরীর এক সময়ের ঘনিষ্টজন, গত নির্বাচনে তাঁর প্রধান নির্বাচনি এজেন্ট ও আইন উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদ।
সিলেট জেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভপতি অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদ রোববার তার ব্যক্তিগত ফেসবুক আইডিতে একটি লেখা পোস্ট করেন। সে পোস্টে সিলেট-৩ আসনের সদ্য প্রয়াত এমপি মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের মৃত্যুকে ‘অস্বাভাবিক’ উল্লেখ করে এমপি কয়েসের ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদের দিকে সন্দেহের তীর ছুড়েছেন।
অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদের দেয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসটি হু-বহু সিলেটভিউ’র পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
‘‘প্রিয় নেতা কয়েস ভাই যদিও আপনি ইহজগতে নাই কিন্তু আপনার কীর্তির মধ্য দিয়ে যুগ যুগান্তরে অমর হয়ে থাকবেন প্রজন্ম থেকে প্রজন্মান্তরে।
জীবদ্দশায় যাদের উপরে আপনার কোন আস্থা ছিল না তারাই কুশলীব সেজে আজ আপনার সহধর্মিনী মিসেস ফারজানা চৌধুরীর বিশাল ক্ষতি করে দিল যার দরুন মনটা কষ্টের আকাশে পরিণত হয়েছে। ফারজানা ভাবী বুঝতে পারলেন না কারা আপনার বিশ্বস্থ ও কাছের লোক ছিল। উনি জিরোদের হিরো ভাবলেন আর হিরোদের সরিয়ে রাখলেন। বিশ্বাস করি কবর থেকে আপনার আত্মা তা দেখতে পাচ্ছে।
আপনার মৃত্যুটাকে আমি কোনসময় স্বাভাবিক মৃত্যু বলে মেনে নিতে পারি না কারণ মৃত্যুর ৬ দিন আগে অর্থাৎ ৫ মার্চ ২০২১ ইং তারিখে দক্ষিণ সুরমা উপজেলার মোগলাবাজার থানার জালালপুরে খেলার মাঠে ধুলো থেকে রক্ষার লক্ষ্যে আপনার মাস্কের ভিতরে কোন ব্যক্তি ফেসিয়াল টিস্যু দিয়েছিল এবং সেই টিস্যুতে পূর্ব পরিকল্পনা মোতাবেক কোন জীবননাশক জীবানু দেয়া হয়েছিল কি না?
এবং করোনা আক্রান্তের পর আপনার ব্যক্তিগত সহকারী জুলহাস আহমদ কেন বিষয়টি ৩ দিন অর্থাৎ আপনাকে ভেন্টিলেশনে নেওয়ার আগ পর্যন্ত গোপন করেছিল? এমনকি আপনার অসুস্থতার বিষয়টি কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে জানালো না? বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানালো না? এই বিষয়ে যথেষ্ট সন্দেহ রয়েছে বিধায় আপনার একজন অনুরাগী হিসেবে আমি শীঘ্রই আদালতে আইনের সংশ্লিষ্ট ধারামতে দায়ীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি নিতেছি।
আশাকরি এ ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা ও সরকারের তদন্ত সংস্থা কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন অন্যথায় ভবিষ্যতে আরো এমপি – মন্ত্রীদের জীবন বিপন্ন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
মামলা দায়েরের পর সব বিষয় উন্মুক্ত হবে বলে বিশ্বাস করি। এ ব্যাপারে কয়েস ভাইয়ের গুণগ্রাহী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীর সহযোগিতা এবং পরামর্শ কামনা করি।’’
অ্যাডভোকেট সোয়েব আহমদের এই পোস্টের পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে শুরু হয় তোলপাড়। তার পোস্টের নিচে পক্ষে-বিপক্ষে মন্তব্যের ঝড় ওঠে। তবে কয়েক ঘণ্টা পর পোস্টডি হাইড করে দেন অ্যাডভোকেট সোয়েব।
এ ব্যাপারে অ্যাডভোকেট সোয়েব সোমবার (১৪ জুন) বিকেলে সিলেটভিউ-কে মুঠোফোনে বলেন, ‘আমি আমার বক্তব্য ও অবস্থান থেকে সরে আসিনি। এমপি কয়েস ভাইয়ের ভাগনা জুনেদ চৌধুরীর অনুরোধে পোস্টটি হাইড করে রেখেছি। জুনেদ বলছেন- এ ব্যাপারে লেখালেখি না করাই ভালো। ব্যাপারটা আমরা জানলাম, পারিবারিকভাবে গুরুত্বসহকারে বিষয়টি দেখা হবে।’
মামলা করার বিষয়ে জিজ্ঞেস করলে অ্যাডভোকেট সোয়েব বলেন, দেখি কী করা যায়। তবে মামলা করবো না- এমন সিদ্ধান্ত এখনও নেইনি। অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।
তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার বাদি উনার পরিবারের কেউ না। আমি গত নির্বাচনে এমপি কয়েসের চিফ নির্বাচনি এজেন্ট ও তাঁর আইন উপদেষ্টা ছিলাম- বিধায় আমি মামলা দায়ের করতেই পারি, এতে আইনগত কোনো বাঁধা নাই।
অ্যাডভোকেট সোয়েব আরও বলেন, এমপি কয়েস ভাই শুধু তাঁর পরিবারের সম্পদ ছিলেন না, তিনি আওয়ামী লীগের তথা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি ছিলেন। বিধায় আওয়ামী লীগের বা রাষ্ট্রের যে কোনো ব্যক্তি বা সরকার নিজে বাদি হয়ে মামলা দায়ের করতে পারবে।
অ্যাডভোকেট সোয়েবের দৃষ্টিতে অভিযুক্ত জুলহাস আহমেদ (এমপি কয়েসের ব্যক্তিগত সহকারী) এ বিষয়ে সিলেটভিউ-কে বলেন, বিষয়টি আমি পুরোপুরি অবগত নই। তবে অ্যাডভোকেট সোয়েব সন্দেহবশত যদি মামলা করেই থাকেন, তবে আমি সেটা আইনিভাবে মোকাবেলা করবো।
তিনি বলেন, আমি দীর্ঘ ৬ বছর ধরে এমপি সাহেবের সঙ্গে ছিলাম। দলের নেতাকর্মী এবং এমপির পরিবারের সদস্যরা জানেন আমি কেমন নিষ্ঠাবান, কর্মপাগল আর আন্তরিক। সুতরাং সন্দেহবশত কে কী বললো সেটা নিয়ে ভাবার অবকাশ নেই(সূত্র:সিলেট ভিউ)