বিবিএন নিউজ ডেস্ক: রবিবার ভোরে আবারো ভূমিকম্পে কেঁপে উঠলো সিলেট নগরী। সিলেট আবহাওয়া অফিসের জ্যেষ্ঠ আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, রবিবার ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে মৃদু ভূমিকম্প অনুভূত হয়। রিখটার স্কেলে যার মাত্রা ছিল ২ দশমিক ৮। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের সীমান্তবর্তী জৈন্তা এলাকা। এর আগে শনিবার একই উৎপত্তিস্থল থেকে একাধিকবার বিভিন্ন মাত্রায় ভূমিকম্প হয়। যা সর্বোচ্চ ৪ মাত্রার ছিল।
বিষয়টি নিয়ে একদিকে আতংক দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে ভূমিকম্প নিয়ে সিলেট বিভাগ জুড়ে আলোচনার প্রধান বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। আবার এই ভূমিকম্প নিয়ে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। অনেকেই বলেছেন বার বার শুধু সিলেটেই কেন ভূমিকম্প। এর উৎপত্তি যদি সিলেটের জৈনটায় হয় তবে জৈন্তা তামাবিলবাসী কেন ভূমিকম্প অনুভব করেননি।
শনি ও রবিবার সিলেটে কয়েক দফা ভূমিকম্পজনিত পরিস্থিতিতে নগরীর সকল ঝুঁকিপূর্ণ ভবন আগামী দশ দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে সিলেট সিটি কর্পোরেশন। একই সময়ের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ অন্যান্য ভবনের বাসিন্দাদেরও অন্যত্র সরে যেতে বলা হয়েছে। রবিবার বিকাল চারটায় সিটি মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নগরীর কয়েকটি ঝুঁকিপূর্ণ মার্কেট পরিদর্শন শেষে এ নির্দেশনা দেন।
শনিবার কয়েকদফা ও রবিবার ভোরে আবারো নগরীতে ভূমিকম্প অনুভূত হলে বিশেষজ্ঞরা সিলেটে আগামী এক সপ্তাহ বড় ধরণের ভূমিকম্পের শঙ্কা করছেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে সিটি কর্পোরেশন অভিযানে নেমেছে। মেয়র জানান, সিলেট নগরীর জিন্দাবাজারস্থ মিতালী ম্যানশন, রাজা ম্যানশন ও বন্দরবাজারের সিটি সুপার এবং মধুবন সুপার মার্কেট আগে থেকেই ঝুঁকিপূর্ণ ভবন হিসেবে চিহ্নিত। তাই সংশ্লিষ্টদের আগামী ১০ দিন বন্ধ রাখার জন্য নির্দেশ দেয়া হবে। অন্যদিকে মেয়রের নির্দেশনার পর এই বিষয়ে করণীয় সম্পর্কে বৈঠকে বসেছেন মার্কেটগুলোর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা।
সিলেটে জরুরি কন্ট্রেলি রুম চালু
এদিকে ঘন ঘন ভূমিকম্প হওয়ার কারণে পরিস্থিতি মোকাবিলায় সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের লক্ষ্যে স্থানীয় প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তর ও শাখার সাথে জরুরি সভা করেছে সিলেট সিটি করপোরেশন। আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যানুসারে ১ দিনে অল্প সময়ে অন্তত ৪ বার ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে বেশি মাত্রার ভূমিকম্পের আশংকা রয়েছে। সে অনুযায়ী সিলেট সিটি করপোরেশন দুর্যোগ মোকাবেলায় নিজস্ব একটি কন্ট্রোল রুম খুলেছে। দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সিলেট মহানগরে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনতে সিসিক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নেতৃত্বে সকল বিভাগ, শাখা ও দপ্তরের প্রতিনিধিদের নিয়ে একটি বিশেষ সেল গঠন করা। খোলা হয় একটি হটলাইন। যার নম্বর ০১৯১১২৪৯৬৯৯। সিলেট সিটি করপোরেশনের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত জরুরী সভা থেকে নগরবাসীকে আতংকিত না হয়ে সচেতন ও দুর্যোগ পরিস্থিতি মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি নিতে অনুরোধ জানানো হয়েছে।
নোটিশ দেয়ার পরও ভাঙছে না ভবনগুলো
বড় ধরণের ভূমিকম্প হলে ঝুঁকিপূর্ণ ভবন ভেঙ্গে পড়ে ব্যাপক প্রাণহানীর আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে বারবার নোটিশ দেয়ার পরও মালিকরা ভবনগুলো ভাঙছেন না। নানা অজুহাতে তারা ভবনগুলো ভাঙা থেকে বিরত রয়েছেন। সিটি করপোরেশন ইতোমধ্যে নগরীতে এরকম ২৫টি ঝুঁকিপূর্ণ ভবন চিহ্নিত করেছে। যার মধ্যে সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন ভবনও রয়েছে। ২০১৯ সালে সার্ভে করে নগরীতে ভবনকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
সিসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান জানান, ২০১৯ সালে চিহ্নিত ভবনগুলো হচ্ছে- জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের উত্তর পাশের কালেক্টরেট ভবন-৩, জেলরোডস্থ সমবায় ব্যাংক ভবন, একই এলাকায় মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তার সাবেক কার্যালয় ভবন, সুরমা মার্কেট, বন্দরবাজারস্থ সিটি সুপার মার্কেট, জিন্দাবাজারের মিতালী ম্যানশন, দরগাগেইটের হোটেল আজমীর, বন্দরবাজারের মধুবন সুপার মার্কেট, টিলাগড় কালাশীলের মান্নান ভিউ, শেখঘাট শুভেচ্ছা-২২৬ নম্বর ভবন, যতরপুরের নবপুষ্প ২৬/এ বাসা, চৌকিদেখির ৫১/৩ সরকার ভবন, জিন্দাবাজারের রাজাম্যানশন, পুরানলেনের ৪/এ কিবরিয়া লজ, খারপাড়ার মিতালী-৭৪, মির্জাজাঙ্গাল মেঘনা এ-৩৯/২, পাঠানটুলা সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, উত্তর বাগবাড়ির একতা ৩৭৭/৭ ওয়ারিছ মঞ্জিল, একই এলাকার একতা ৩৭৭/৮ হোসেইন মঞ্জিল, একতা-৩৭৭/৯ শাহনাজ রিয়াজ ভিলা, বনকলাপাড়া নূরানী-১৪, ধোপাদিঘীর দক্ষিণ পাড়ের পৌরবিপণী মার্কেট ও ধোপাদিঘীরপাড়ের পৌর শপিং সেন্টার।