সুনামগঞ্জ প্রতিনিধি :দক্ষিণ সুনামগঞ্জে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার রাস্তার কাজে নি¤œ মানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহার করে চলছে ঢালাই কাজ। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেশি লাভের আশায় কাজে এমন নয় ছয় করছেন বলে জানিয়েছেন এলাকাবাসী। উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে এলাকাবাসী বার বার অভিযোগ জানালেও ব্যবস্থান নেননি বলেও জানান তারা। এলাকাবাসীর অভিযোগ, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান বেশি লাভের আশায় নি¤œ মানের মাটি যুক্ত পাথার ও বালি ব্যবহার করে রাস্তার আরসিসি ঢালাই কাজ করে নাম মাত্র কাজ করিয়ে প্রকল্পের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন। সেই সাথে রাস্তার আরসিসি ঢালাইয়ের নিচে ২-২.৫ ইঞ্চি ফাঁক ফাঁক করে ইট বসানো হয়েছে। নিয়ম অনুযায়ী আরসিসি ঢালাই কাজের নিচে ফাঁকা ছাড়া ইট বসানোর কথা। সেই সাথে মরিচা পড়া রড ব্যববহারের অভিযোগও করেন তারা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সুনামগঞ্জ জেলার দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের ভমভমি থেকে বাংলাবাজার রাস্তায় ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দিনে দুপুরে জনসম্মূখে মাটি যুক্ত পাথর ও বালি দিয়ে রাস্তায় ঢালাই কাজ চালাচ্ছেন। সেই সাথে আরসিসি ঢাইয়ের নিচে ফাঁকা ছাড়া ইট বসানোর কথা থাকলেও ২-২.৫ ইঞ্চি ফাঁক ফাঁক করে ইট বসিয়ে ইটের উপর বালি না দিয়ে মাটি ব্যবহার করেছেন। ঢালাই কাজে মরিচা পড়া রড ব্যবহার করতেও দেখা যায়। প্রথম ধাপে সময়সীমা শেষ হলেও এই কাজের ৫০ ভাগও শেষ করতে পারেনি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। দীর্ঘদিন ধরে খুড়িয়ে খুড়িয়ে চলা এই প্রকল্প এখন এলাকাবাসীর গলার কাটা হয়ে দাড়িয়েছে।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশল (এলজিইডি) অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০১৯-২০ অর্থ বছরে উপজেলার দরগাপাশা ইউনিয়নের আএইচডি ভমভমি বাজার-বাংলাবাজার জিসি ভায়া ঈশাখপুর জিপিএস-হলদারকান্দি আরসিসি রাস্তার ২২৪ মিটার থেকে ৪৪২০ মিটার পর্যন্ত ২১৮০ মিটার আরসিসি রাস্তার কাজ ৩ কোটি ২৩ লক্ষ ৮ হাজার ১শত ৬৮ টাকার রাস্তার কাজ পান (যৌথ উদ্যোগ- ঔড়রহঃ াবহঃঁৎব) এ কাজ পাওয়া ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মিলন-নুরুল জেভি (এম/এস. মিলন কান্তি দে ও মো. নুরুল হক) নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ১৪.১১.২০১৯ ই্ং তারিখে কাজ শুরু করে গেল বছরের ০২.১১.২০২০ ই্ং তারিখে কাজ শেষ করার কথা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শ্রমিক জানান, ঠিকাদার আমাদেরকে পাথর না ধুয়ে লাগানোর কথা বলেছেন, তাই আমরা এভাবেই মাটি যুক্ত পাথর ব্যববহার করছি। এখানে আমাদের কিছু করার নেই। ঠিকাদার যে ভাবে বলবেন এভাবেই আমরা কাজ করতে হবে।
ঠিকাদারী প্রষ্ঠিানের স্বত্ত্বাধিকারী মো. আনোয়ারুল হক জানান, আমরা মাটি যুক্ত পাথর ব্যবহার করছি না তবে পাথরে ডাস্ট আছে। ঢালাই কাজের নিচে ইট বসানোর সময় শ্রমিকরা ভুল করে ফাঁক ফাঁক করে বসিয়েছে। আমাদের বালি পাথর খুবই উন্নত মানের বলেও জানান তিনি। পরে এই প্রতিবেদক ঠিকাদার মো. আনোয়ারুল হক’কে পাথরে মাটি দেখালে তিনি কোন উত্তর দিতে রাজি হননি।
দরগাপাশা ইউনিয়নর পরিষদের চেয়ারম্যান মো. মনির উদ্দিন জানান, এই ঠিকারদার কারো কথা কর্ণপাথ করেননি। খুবই নি¤œমানের কাজ করছেন তিনি। মাটি যুক্ত বালি পাথর ও মরিচা পড়া রড দিয়ে ঢালাই কাজ করে আসছেন। আমি এই কাজ বন্ধ রাখার জন্য বার বার বললেও আমার কথায় কোন কাজে আসে নি। আমি উপজেলা প্রকৌশলীর কাছে বার বার অভিযোগ করেছি কিন্তু তিনিও কোন ব্যবস্থা নেননি। সেই সাথে মরিচা পড়া রড, ঢালাই কাজের নিচে অনেক ফাঁক ফাঁক করে ইট বসিয়ে নাম মাত্র কাজ করিয়ে প্রকল্পের টাকা লুটপাটে ব্যবস্তা করছেন এই ঠিকাদার।
দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলা প্রকৌশলী আল নুর তারেক জানান, আমি ত্রুটিপূর্ণ এই কাজটি বন্ধ করেছি। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান নিয়ম অনুযায়ী কাজ বাস্তবায়ন করতে হবে। আমি পুরো বিষয়টি দেখবো। কোন ভাবেই ইট ফাঁক ফাঁক করে বসানো যাবে না। মাটি যুক্ত পাথর, বালি ও মরিচা পড়া রড ব্যবহার করা যাবে না। পাথরে মাটি থাকলে অবশ্যই পাথর ধুয়ে ব্যবহার করতে হবে।